৮১৫ মিলিয়ন বছর আগের ‘সময়ের ক্যাপস্যুলে’ অক্সিজেনের অস্তিত্ব

0
483

কোনো স্থানে যদি তুষারপাত হয় এবং ধীরে ধীরে ঐ তুষার স্থায়ী বরফে রূপান্তরিত হয় তাহলে বরফের মাঝে বাতাসের কিছু বুদবুদ থেকে যাবে। কারণ তুষার সাধারণত নিরেট হয় না, এদের মাঝে মিশ্রিত অবস্থায় বায়ু আটকে থাকে। এমতাবস্থায় ঐ বরফ যদি হাজার হাজার বা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে না গলে তাহলে বরফের সাথে বায়ুও হাজার হাজার বা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আটকে থাকবে। যেমন এন্টার্কটিকার বরফ লক্ষ লক্ষ বছর ধরে অগলিত অবস্থায় আছে।

বরফের ভেতর বায়ু আটকে থেকে ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী হিসেবে কাজ করছে। হাজার হাজার বছর আগের বায়ুমণ্ডল আর আজকের বায়ুমণ্ডলে অনেক পার্থক্য। আজকের যুগের পরিবর্তিত বায়ুমণ্ডলে অতীতের বায়ুকে বয়ামের মতো করে আলাদাভাবে ধরে রেখেছে ঐ বরফে আটকে থাকা বায়ুর বুদবুদ। এদেরকে বলা যায় ‘টাইম ক্যাপস্যুল’ বা সময়ের ক্যাপসুল। যে সময় বায়ু আটকা পড়েছিল ঐ সময়ের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল তথা আবহাওয়ার অনেক তথ্য আটকে আছে তাতে। কোনোভাবে যদি ঐ বায়ুকে সূক্ষ্ম উপায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে এটি থেকে ঐ সময়ের বায়ুমণ্ডলের অনেক তথ্য উদ্ধার করা যাবে। এবং এভাবে অতীত পৃথিবীর অনেক তথ্য সংগ্রহ করাও হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এরকমই একটি গবেষণা বলছে অন্তত ১৮৫ মিলিয়ন বছর আগে থেকেই পৃথিবীতে অক্সিজেনের অস্তিত্ব ছিল। ভূতত্ত্ব বা বিবর্তন তথা জীববিজ্ঞানের প্রেক্ষাপটে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার। কারণ পৃথিবীতে প্রাণ বিকাশের ধারায় এক পর্যায়ে অক্সিজেন গ্রহণকারী প্রাণীর উৎপত্তি হয়। যে সময়ে অক্সিজেনগ্রাহী প্রাণীর উৎপত্তি হয়েছে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে ঐ সময়ে যদি অক্সিজেনের অস্তিত্বই না থাকে কিংবা পরিমাণের তুলনায় একদমই কম থাকে তাহলে এটা বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা নিরীক্ষার সীমাবদ্ধতা ও সমস্যা বলেই প্রতিভাত হবে।

আশার কথা হচ্ছে এখন আর এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ এখন পর্যন্ত পাওয়া ফসিল রেকর্ড বলছে ২১৫ মিলিয়ন বছর আগে অক্সিজেন গ্রহণকারী প্রাণীর উৎপত্তি হয়। অন্যদিকে সম্প্রতি জিওলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে অক্সিজেনের উপস্থিতি ছিল কম করে হলেও ৮১৫ বছর আগে থেকেই। যা প্রাণ বিকাশের জন্য খুবই ইতিবাচক।

গবেষণার সাথে জড়িত ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক জন পার্নেল এই বিবৃতিতে বলেন “এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রাণীরা কেমন পরিবেশে বসবাস করেছিল, শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় কেমন হারে অক্সিজেন গ্রহণ করতো। আমরা হিসাব করে দেখেছি তখনকার সময় বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল শতকরা ১০.৩ থেকে ১৩.৪ ভাগ। উল্লেখ্য বর্তমান বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের হার শতকর ২০.৯ ভাগ।”

প্রাণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি ছিল আগে থেকেই।
প্রাণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি ছিল আগে থেকেই।

তবে গবেষকরা বরফ থেকে করেননি বায়ু বিশ্লেষণ। করেছেন পাথর থেকে। পাথরে আটকা পড়ে ছিল বায়ু। সমুদ্রের তলদেশে স্তরে স্তরে বালু ও পলি জমে যখন ধরে ধীরে পাথর গঠন করে তখন পাথরের মাঝে বায়ু আটকা পড়ে থাকতে পারে।

একটা সময় ছিল অক্সিজেনের অভাবে পৃথিবীর জীবদের খাদ্য হজম করতে বা খাদ্য উৎপাদন করতে কষ্ট হতো। পরবর্তীতে যখন কিছু ব্যাকটেরিয়া ও শৈবালের জন্ম হলো যারা সবাত শ্বসনের মাধ্যমে অক্সিজেন নির্গত করে, তারপর থেকে প্রাণের জন্য পৃথিবীতে অনেকটা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গবেষকদের এই গবেষণা থেকে সেই সময় ও সেই সময়কার পরিবেশ সম্পর্কে আরো পরিষ্কার হওয়া গেল। এর ফলে ভবিষ্যতে ভূতত্ত্ব বা প্রাণের বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করতে এই গবেষণা অনেক কাজে আসবে। পাশাপাশি প্রাগৈতিহাসিক ঐ সময়ের অনেক অমীমাংসিত সমস্যারও সমাধান হবে।

-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.