মানব-মস্তিষ্কের নতুন ৯৭ টি অঞ্চল সনাক্ত

0
484

যদি কোনো স্নায়ুবিজ্ঞানীর কাছে মস্তিষ্কের একটা মানচিত্র বা ডায়াগ্রাম দেখতে চান তাহলে এমন সম্ভাবনা আছে যে তিনি এক শতাব্দীরও আগের তৈরি একটা ডায়াগ্রাম দেখাবেন। ১৯০৯ সালে জার্মান অঙ্গসংস্থানবিদ কর্বিনিয়ান ব্রডম্যান মস্তিষ্কের উপরের স্তরের জটিল ও বিস্তারিত একটি ডায়াগ্রাম তৈরি করেন। তিনি খুব যত্নের সাথে পরিশ্রমসাধ্য উপায়ে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই ডায়াগ্রামটি তৈরি করেন। তখন থেকে স্নায়ুবিদরা এটি ব্যবহার করে আসছেন।

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত মস্তিষ্কের সবচেয়ে নিখুঁত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ ডায়াগ্রামটি তৈরি করেছেন। ২১০ জন মানুষের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে সেরেব্রাল কর্টেক্স-এ প্রায় একশোটির মতো অঞ্চল শনাক্ত করেছেন। এই শনাক্তকরণ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নানাভাবে কাজে লাগতে পারে। যেমন অটিজম, স্কিজোফ্রানিয়া, ডিমেনশিয়ার মতো মানসিক রোগ নিয়ে গবেষণা করা এবং এসব রোগের চিকিৎসা করা আগের থেকে তুলনামূলকভাবে সহজ হবে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত Human Connectome Project নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান মস্তিষ্কের ডায়াগ্রাম তৈরির এই কাজটি পরিচালনা করে। কানেকটোম প্রজেক্ট অনেকদিন ধরেই এই ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। মূলত এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্যই মস্তিষ্কের গঠন ও এক অংশের সাথে অন্য অংশের সংযোগ তথা ডায়াগ্রাম তৈরি করা। তাদের কাজের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের বিবরণ দিয়ে সম্প্রতি নেচার সাময়িকীতে একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে। এই প্রবন্ধে দেখা যায় তাদের তৈরি ডায়াগ্রামে মস্তিষ্কের একদম আনকোরা নতুন ৯৭ টি অঞ্চল শনাক্ত হয়েছে। এর আগের কোনো মানচিত্রে এগুলো শনাক্ত হয়নি। ৯৭ টি অঞ্চলের পাশাপাশি আরো ৮৩ টি অঞ্চল শনাক্ত করেছে যা আগে থেকে শনাক্ত করা ছিল, অর্থাৎ আগের ডায়াগ্রামের চিহ্নিত ৮৩ টি অঞ্চলকে সমর্থন দিচ্ছে নতুন এই ডায়াগ্রাম।

একজন ব্যক্তির মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রিয়া। ভিন্ন ভিন্ন রঙে চিহ্নিত। ছবিঃ নেচার।
একজন ব্যক্তির মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রিয়া। ভিন্ন ভিন্ন রঙে চিহ্নিত। ছবিঃ নেচার।

শত বছর আগের ব্রডম্যান কিংবা অন্যান্যদের তৈরি করা মানচিত্রে যেমন মস্তিষ্কের একটি বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করে অঞ্চল বিভাজন করা হয়েছিল নতুন এই পরীক্ষায় তেমনটা করা হয়নি। অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় আনা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে আগের ডায়াগ্রামে হয়তো মাইক্রোস্কোপের নিচে মস্তিষ্ককে কেমন দেখায় তা বিবেচনা করা হতো বা কোনো কাজ করতে দিলে কোন অঞ্চল উদ্দীপিত হতো তা বিবেচনা করা হতো। তথ্য-উপাত্তের পরিমাণ কম থাকায় একটা ত্রুটি থেকেই যেতো। তবে নতুন ডায়াগ্রামে অনেকগুলো তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। fMRI স্ক্যান, এনাটমিক গঠন, নিউরনের সাড়া দানের ধরণ, তাদের কার্যপ্রণালী, অন্যদের সাথে তথ্য আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া ইত্যাদি অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য আমলে নেয়া হয়েছে।

পরীক্ষায় বিভিন্ন অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বিশ্রাম নেবার সময়, গাণিতিক হিসাব করার সময়, কোনো গল্প শোনার সময়, সিনেমা-চলচ্চিত্র বা প্রাণী-পরিবেশ দেখার সময় ইত্যাদি বিভিন্ন অবস্থা থেকে মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালীর উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। এর ফলে তাদের তৈরি করা ডায়াগ্রামটি অধিকতর নির্ভুল হয়েছে। আশা করা যায় সহজেই সহজেই সকল স্নায়ুবিদদের কাছে এটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে এবং শতাব্দী প্রাচীন ডায়াগ্রামটির স্থলাভিষিক্ত হবে।

এই গবেষণার প্রধান ম্যাথিও গ্লসার বলেন “যেসব গবেষকরা আগে মস্তিষ্কের অঞ্চল শনাক্ত করতে যেখানে ব্রডম্যানের মানচিত্র ব্যবহার করতো তারা এখন কানেকটোম প্রজেক্টের নতুন এই মানচিত্রটি ব্যবহার করবে। এটি অধিকতর নিখুঁত ও কার্যকর।”

 

-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.