জলবায়ুর পরিবর্তনে সবুজ হয়ে উঠছে আফ্রিকার সাহেল মরুভূমি

0
560

বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন অনেকগুলো খারাপ খবরের পাশাপাশি অল্প স্বল্প ভালো খবরও নিয়ে আসতে পারে। যেমন জলবায়ুর পরিবর্তন ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে গত ২০ বছর ধরে তাপমাত্রার বৃদ্ধি করে যাচ্ছিল। ঠিক একই প্রভাবের কারণে আফ্রিকার সাহেল মরুভূমিতে বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছিল। যে এলাকাতে কখনোই বৃষ্টিপাত হতো না, মাইলের পর মাইল জুড়ে এলাকা মরুময় সেই এলাকায় ক্রমান্বয়ে গাছ বেড়ে উঠলে এবং এলাকাটি ধীরে ধীরে সবুজ হয়ে উঠলে তা ইতিবাচক খবর বলেই গণ্য হয়। জার্মানের Max Planck Institute for Meteorology-র একদল গবেষক দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে এমনটাই জানিয়েছেন। তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রক্রিয়া নিয়ে Nature Climate Change জার্নালের চলতি সংখ্যায় একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সেখানকার পানি বাষ্প হয়ে বায়ুতে মিশে। ফলে ব্যাপক এলাকা জুড়ে বায়ু আর্দ্র হয়। আর্দ্র বায়ু বাতাসে ভর করে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির দিকে। জুন মাসের দিকে এর হার সবচেয়ে বেশি হয়। কারণ ঐ সময় সাহারামুখী আফ্রিকান মৌসুমি বায়ু চলাচল সক্রিয় থাকে। এই অবস্থানে গিয়ে বাতাসে ভাসমান জলকণা বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পদার্থবিজ্ঞানের কিছু নিয়ম মেনে বৃষ্টি বা কুয়াশা বা বৃষ্টি সম্পর্কিত অন্যান্য রূপ (precipitation) আকারে ঝরে পড়ে। এর ফলেই সাহারা মরুভূমির দক্ষিণ দিকের সাহেল অঞ্চলে গাছের জন্য পানির জোগাড় হয়।

সাহেল অঞ্চলের পরিবেশ ভূমধ্যসাগরীয় পরিবেশের উপর একটু বেশিই নির্ভরশীল। অন্য এলাকার আবহাওয়ার উপর এত বেশি পরিমাণ নির্ভরশীল আর কোনো এলাকা নেই। প্রায় কয়েক শত কিলোমিটার বিস্তৃত এই মরুভূমিটি শুরু হয়েছে সাহারার দক্ষিণ অঞ্চলে এবং শেষ হয়েছে সেনেগালের এরিট্রিয়া অঞ্চলে। বলা যায় বিস্তৃত এই এলাকাটি পুরোপুরিই আফ্রিকার মৌসুমি জলবায়ুর উপর নির্ভরশীল। জুন থেকে সেপ্টেম্বর বৃষ্টিপাত হয় আর বাকি সময় শুষ্ক থাকে। কোনোভাবে যদি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা অনেকটা কমে যায় তথা বাষ্পীভবনের পরিমাণ কমে যায় তাহলে এই মরুভূমি অঞ্চলে একদমই বৃষ্টিপাত হবে না। ফলে আবারো ধু ধু করবে শত শত মাইল বিস্তৃত এই এলাকা।

জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সূর্য পৃথিবীর কাছে অবস্থান করে। ফলে ঐ সময় বেশি তাপ পড়ে, যা অধিক জলীয় বাষ্প তৈরির জন্য দায়ী। একদিকের বায়ু বেশি আর্দ্র এবং অন্যদিকের বায়ু শুষ্ক, ফলে স্পষ্ট একটি পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। দুই এলাকার মাঝে সমতা আনার জন্য বায়ুর একটা প্রবাহের সৃষ্টি হয়। এই প্রবাহে ভর করে বাষ্প চলে আসে সাহেল অঞ্চলে।

গবেষক দল তাদের গবেষণায় বেশ কয়েক দশকের উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের গবেষণা থেকে দেখা যায় ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সালের দিকে ঐ অঞ্চলে গাছগাছালির অস্তিত্ব ছিল। এরপর থেকে ধীরে ধীরে গাছগাছালি মরতে শুরু করে। ৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত প্রায় ১০০,০০০ প্রাণ মারা যায়। কিন্তু অবাক করার মতো ঘটনা ঘটিয়ে গত ২০ বছর ধরে এই এলাকায় বৃষ্টিপাত বাড়তে থাকে, ফলে আবারো সবুজ হতে শুরু করে এই মরুভূমি। এমন ঘটনার পেছনে কী বা কোন ম্যাকানিজম দায়ী তা বের করেছেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিউটের কিছু বিজ্ঞানী। তারা দেখিয়েছেন এর পেছনে দায়ী ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ুর পরিবর্তন। [Phys.org অবলম্বনে]

-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.