প্রায় ১০ বছর আগে একটি অদ্ভুত আবিষ্কার হয়। ঐ আবিষ্কারে দেখা যায় একধরনের তেলাপোকা তার পাকস্থলীতে দুধের প্রোটিনের ক্রিস্টাল ধারণ করে। এই তেলাপোকার প্রজাতি পতঙ্গ হিসেবেও একটু অদ্ভুত। অন্যান্য পতঙ্গরা যেখানে ডিম প্রদানের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন করে সেখানে এই প্রজাতির তেলাপোকারা সরাসরি সন্তান জন্মদান করে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Diploptera punctata। মানব সন্তান সহ অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের মতোই তাদের সন্তানকেও দুধের প্রোটিন খাইয়ে বড় করতে হয়। তেলাপোকার এই ধরনের ক্রিস্টালে তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে প্রোটিন থাকে। একটি একক ক্রিস্টালে যে পরিমাণ প্রোটিন থাকে তা গরুর দুধের প্রোটিনের তিনগুণের চেয়েও বেশি।
প্রোটিন তৈরির এই ব্যবস্থাকে মানুষের জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। দুগ্ধ উৎপাদনকারী পশু লালন পালন ব্যয়বহুল। চাইলেই যেকোনো ধরনের খাবার খাওয়ানো যায় না, যেকোনো স্থানে রাখা যায় না। তেলাপোকার বেলায় এই বালাই নেই। যেকোনো ধরনের বস্তুই এদের খাদ্যের তালিকায় আছে। যেকোনো পরিবেশে টিকে থাকতে পারে বলেই কোটি কোটি বছর ধরে বিলুপ্ত হবার কোনো ঝুঁকি ছাড়াই পৃথিবী ব্যাপী টিকে রয়েছে এই তেলাপোকা। তেলাপোকাকে বিশেষ উপায়ে চাষ করলে এ থেকে প্রচুর প্রোটিন আহরণ করা যেতে পারে। সাধারণ পশু পালন করতে যে পরিমাণ ব্যয় হবে তার থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক কম ব্যয় হবে এটি থেকে প্রোটিন উৎপাদন করলে।
বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল এখন স্বল্প ব্যয়ে তেলাপোকাজাত প্রোটিন আহরণ করার পদ্ধতি প্রদান করছেন। তাঁরা International Union of Crystallography’র জুলাই সংখ্যাতে তাঁদের উদ্ভাবিত পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।
শুধু পদ্ধতির বর্ণনাই নয়, গবেষকরা এতে তেলাপোকার জিনোম সিকোয়েন্স করে দেখিয়েছেন কোন জিনটি তেলাপোকার অন্ত্রে দুধের ক্রিস্টাল তৈরির জন্য দায়ী। এটি তাদের অন্যতম বড় একটি সাফল্য। কারণ কোনো কিছুর জিনোম সিকোয়েন্স জানা হলে গেলে পরবর্তীতে জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে অধিকতর দুগ্ধ-ক্রিস্টাল উৎপাদনকারী তেলাপোকা তৈরি করা যাবে। জনগণের খাদ্যের কথা বিবেচনা করলে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।
এই গবেষণার একজন গবেষক সঞ্চরি ব্যানার্জি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন “তেলাপোকার এই ক্রিস্টালগুলো একদমই সাধারণ খাবারের মতো। এদের প্রোটিন আছ, ফ্যাট আছে, চিনি আছে। যদি প্রোটিনের গঠনের দিকে নজর দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে তারা অন্য প্রোটিনের মতোই অ্যামিনো এসিড নিয়ে গঠিত। এখানে অস্বাভাবিক কিছু নেই।”
অবশ্য এখনই এই ধরনের প্রোটিনকে বাজারজাত করা হচ্ছে না। মানুষের ইগো সংক্রান্ত কিছু সমস্যা আছে যার কারণে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ এসব গ্রহণ করবে না। তবে বিকল্প বিবেচনা করতে তো কোনো সমস্যা নেই। যদি কোনোদিন এমন হয় যে মানুষের চাহিদা এতই বেড়ে গেছে যে চাহিদার তুলনায় পশুর দুধ দিয়ে কুলোতে পারা যাচ্ছে না, কিংবা এমন যদি হয় যে পশুপালন অকার্যকর হয়ে গেছে তখন তেলাপোকার প্রোটিন ক্রিস্টাল হতে পারে চমৎকার বিকল্প। একটা ব্যাপার তো আগেই খেয়াল করেছিলাম, তেলাপোকার প্রোটিন ক্রিস্টাল সাধারণ গরুর দুধের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি প্রোটিন অণু থাকে। ইগো সংক্রান্ত সমস্যা না থাকলে গরু থেকে তেলাপোকাই উত্তম।
তার উপর মানুষ যে পোকা-পতঙ্গ একদমই খাচ্ছে না তা কিন্তু নয়। বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত চিংড়িও কিন্তু একধরনের পোকা। আরো অবাক করা বিষয় হচ্ছে চিংড়ি আর তেলাপোকা বৈজ্ঞানিকভাবে একই পর্বভুক্ত। এরা উভয়েই আর্থ্রোপোডা ফাইলামের অন্তর্গত। তাছাড়া বিভিন্ন দেশে ঐতিহ্যগতভাবেই বিভিন্ন ধরনের পতঙ্গ খাদ্য হিসেবে গ্রহন করা হয়। খাদ্য হিসেবে এরা সুস্বাদুও বটে। তো হয়তো দেখা যাবে ভবিষ্যতের কোনো এক কলিযুগে যেখানে মানুষ তেলাপোকার রস লাচ্ছি হিসেবে খাচ্ছে!
-সিরাজাম মুনির শ্রাবন
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া
ছাগলের বাচ্চারা .. তেলাপোকা নোংরা প্রাণী .. টয়লেটের মধ্যে হাঁটে.. খাওয়ার এমন আকাল পড়ার আগেই মানুষ মরে ভুত হয়ে যাবে.. তেলাপোকা খাওয়ার শখ হইসে যত্তসব বেয়ার গ্রিলসের অনুসারী
পৃথিবীর অনেক দেশেই তেলাপোকা খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। বাথরুমে হাঁটলেই কোনো প্রানী অখাদ্য হয়ে যায় না।
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি
আমি তো তেলাপোকা ভয় পাই 😩