আমাদের জানা মহাবিশ্ব ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে একটি সিঙ্গুলারিটি বিন্দু থেকে শুরু হয়েছিল। ঐ বিন্দু থেকে বিস্ফোরণের পর প্রসারণের মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর সময় পেরিয়ে আজকের এই অবস্থানে এসেছে। এটিই বিগ ব্যাং বা বৃহৎ বিস্ফোরণ তত্ত্ব নামে পরিচিত। বিগ ব্যাং তত্ত্ব প্রদান করার পর থেকে মহাবিশ্বকে ভালোভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারছিল। এবং এর সত্যতার পেছনে সমর্থন দেবার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য-প্রমাণও আছে। তবে প্রচুর তথ্য-প্রমাণ ও সমর্থন থাকলেও তা সকল প্রশ্ন বা সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। যেমন মহাবিশ্বের একদম প্রাথমিক পর্যায়ে অতিছোট বিন্দুবৎ অবস্থায় থাকার সময়ের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না বিগ ব্যাং তত্ত্বের মাধ্যমে।
যখন থেকে বিগ ব্যাং তত্ত্বের এই সীমাবদ্ধতা ধরা দেয় তখন থেকেই এর বিকল্প তত্ত্ব অনুসন্ধান শুরু হয়। সময়ে সময়ে মহাবিশ্বকে পরিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য বেশ কয়েকটি জটিল তত্ত্ব প্রস্তাবও করা হয়। এর মাঝে একটি হচ্ছে বিগ বাউন্স তত্ত্ব। এই তত্ত্ব আজ থেকে অনেক আগেই প্রস্তাবিত হয়েছিল। তবে প্রস্তাবিত হলেও যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সম্প্রতি এক দল বিজ্ঞানী এটি নিয়ে কাজ করে একে অধিকতর উপযুক্ত হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ড. স্টিফেন গিলেন ও কানাডার ইন্সটিটিউট অব থিওরিটিকাল ফিজিক্সের নিল টুরক আছেন এর পেছনে। তারা মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার জন্য অধিকতর উপযুক্ত, অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও অধিকতর প্রয়োগযোগ্য একটি তত্ত্বের পেছনে কাজ করেন। তাদের গবেষণা শেষে বেরিয়ে আসে বিগ বাউন্স তত্ত্বই বিগ ব্যাংএর চেয়ে বেশি উপযুক্ত।
ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে তারা ব্যাখ্যা করছেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কিছু নিয়মের প্রভাবে সিঙ্গুলারিটি বিন্দু প্রস্তুত হবে না। হতে চাইলেও ঐ প্রভাব তা দমিয়ে রাখবে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ঐ প্রভাব কার্যকর আছে বলেই এখনকার পরমাণুর ইলেকট্রনগুলো প্রোটনের আকর্ষণে নিউক্লিয়াসে পড়ে যায় না।
বিগ বাউন্স তত্ত্ব আজ থেকে শত বছর আগেই প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব কোনো একটি বিন্দুবৎ অবস্থা থেকে বিস্ফোরণের মাধ্যমে তৈরি হয়নি। মহাবিশ্ব চিরকালই অস্তিত্ববান ছিল। এই তত্ত্ব শুনতে অনেকটা স্থির মহাবিশ্ব তত্ত্বের মতো হলেও এটি স্থির মহাবিশ্বকে বাতিল করে দেয়।
এই তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব সংকোচন ও প্রসারণের চক্রের মাধ্যমে চলছে। অনেকটা বেলুনের মতো, খুব স্থিতিস্থাপক কোনো বেলুনকে ফুলালে ফুলতে ফুলতে একসময় তা ক্রান্তি অবস্থানে এসে পৌঁছাবে। তারপর অল্প অল্প করে বাতাস চলে যেতে দিলে তা ধীরে ধীরে সংকুচিত হবে। সর্বনিম্ন পরিমাণ সংকোচনের পর তা আবার প্রসারিত হওয়া শুরু করবে। বিগ বাউন্স অনুসারে মহাবিশ্ব অনেকটা এরকমই। চক্রাকারে সংকুচিত হচ্ছে এবং প্রসারিত হচ্ছে। যখন সংকোচনের ক্রান্তি পর্যায়ে চলে আসে তখন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কিছু নিয়মের প্রভাবে আরো সংকোচিত হয়ে ক্ষুদ্র বিন্দু বা সিঙ্গুলারিটি তৈরি করতে পারে না। ঐ অবস্থান থেকে আবার প্রসারণ শুরু হয়ে যায়। চক্রাকার এই ব্যাপারটাকে পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় স্পন্দন হিসেবে ভাবা যেতে পারে।
-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া
স্ফীতি তত্ত্ব অনুসারেও অনন্য বিন্দুর ধারনা ভুল কিন্তু সেখানে তো পুনরায় সংকোচনের বিষয়টি পেলাম না !!! কেন ?