খাবার প্লেটে শীঘ্রই শোভা পাবে কৃত্রিমভাবে তৈরি মুরগির মাংস

0
582

মানুষকে বলা যায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খুনি প্রজাতি। মানুষ যে পরিমাণ গরু জবাই করে সে পরিমাণ গরু মনে হয় না প্রাণিজগতের বাকি সবাই মিলে মারতে পারে। গরুর পাশাপাশি মানুষ মুরগিও খায় প্রচুর। খাদ্য হিসেবে মুরগির ব্যবহার পরিমাণের দিক থেকে এতই বেশি যে তার তুলনায় গরুর পরিমাণ কিছুই নয়। মুরগির উপর এমন বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাওয়া একটি প্রজাতির জন্য নেতিবাচক। কোনো প্রজাতিতে বৈচিত্র্য যত কম তার বিলুপ্তির হুমকিও ততো বেশি। তার উপর ইদানীং প্রাণী মেরে খাদ্য না খাওয়ার ব্যাপারে একধরনের জনসমর্থন গড়ে উঠছে। ভবিষ্যতে খাদ্য হিসেবে প্রাণী বা মুরগি না মারাটা হয়ে যেতে পারে নৈতিকতার অংশ- যে যত কম প্রাণী হত্যা করে থাকতে পারবে সে তত বেশি নীতিবান। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের খুব সহজলভ্য খাবার মুরগি না থাকলে কী গোলমেলে অবস্থা হবে তা ভাবা যায়?

তবে যেখানে বিজ্ঞান আছে সেখানে এত বেশি ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ইজরায়েলের বিজ্ঞানীরা এমন একটি প্রযুক্তির পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন যা বাস্তবায়িত হলে মানুষ খাবার জন্য মাংস পাবে কিন্তু তার জন্য কোনো মুরগিকে মারতে হবে না। কৃত্রিমভাবে মুরগির মাংস উৎপাদন করার জন্য বিশ্বের অন্যতম ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ নিয়েছে Modern Agriculture Foundation (MAF) নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

MAF এর প্রতিষ্ঠাতা শার ফ্রিডমান বলেন- “আমাদের একটি গ্রুপ অনুধাবন করতে পারে যে, জরুরীভাবে বিশ্বের মানুষদের এখন এমন কিছু দরকার যা তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারবে এবং এর ফলে প্রাণিজগৎ ও পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।”

মুরগির বাচ্চাদের কি এভাবে পুড়ে পুড়ে ফ্রাই করা মানায়?
মুরগির বাচ্চাদের কি এভাবে পুড়ে পুড়ে ফ্রাই করা মানায়?

তিনি আরো বলেন “আমরা যখন কালচারের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে মুরগির মাংস তৈরির বাস্তবতা সম্বন্ধে জেনেছিলাম তখনই অনুধাবন করতে পেরেছিলাম এটিই পালটে দিতে পারে পৃথিবীকে। এটিই দূর করতে পারে গণহারে প্রাণী নিধন এবং এটিই মানুষকে খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।”

এর পর থেকে তার টিম কাজে লেগে পড়ে। কাজের উন্নয়নের জন্য এই টিম তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সাথে যোগ দেয়। তাদের সাথে একত্র হয়ে এমন একটি পদ্ধতির উন্নয়ন করেন যেখানে একটি মাত্র কোষ থেকে অনেকগুলো কোষ তৈরির মাধ্যমে কৃত্রিম মুরগি তৈরি করা যায়।

কৃত্রিম মাংস তৈরির জন্য তারা প্রথমে একটি পুষ্টিকর মাধ্যমে (medium) নিয়ন্ত্রিত উপায়ে স্টেম কোষ চাষ করেন। তাদের এই পদ্ধতি যদি ঠিকঠাক মতো কাজ করে তাহলে এই মাংসের স্বাদ আর সত্যিকার মাংসের স্বাদ একই হবে। কারণ মাংস কৃত্রিম হলেও এতে প্রাকৃতিক জিনিসই ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এর বৈশিষ্ট্যও মাংসের মতোই।

এর জন্য তাদের খুব বেশি প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত জটিলতায় যেতে হয়নি। ভিন্নভাবে সাধারণ কিছু জৈব বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করেই এই ফলাফলে উপনীত হয়েছেন। তাদের দাবী অনুসারে তারা শুধু কোষগুলোকে মাংস হবার পথ ধরিয়ে দিয়েছেন। জৈব কোষ ভালো করেই জানে কীভাবে অনেকগুলো কোষ মিলে মুরগি বা অন্য কিছুর অঙ্গের মতো গঠন ধারণ করতে হয়। এখানে জৈব কোষ নিজে নিজেই জৈবিক আকার পায়। অর্থাৎ ধরিয়ে দেয়া পথে সহজেই মুরগির রান বা অন্য কোনো অঙ্গের মতো আকার ধারণ করে।

সাধারণ মানুষের কথা ভেবে তৈরি করা হলেও এই কৃত্রিম মাংস এখনো গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমরা হয়তো শীঘ্রই নিজেদের খাবার প্লেটে এমন কৃত্রিম মাংস দেখতে পাবো।

তথ্যসূত্রঃ [ডেইলি মিরর ও  স্কাই নিউজ অবলম্বনে]

– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.