মানুষের মাথা প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা আঁটছেন চীনের চিকিৎসকগণ

0
560

পক্ষঘাতগ্রস্থ কিংবা অঙ্গহানী ঘটনা মানুষের জন্য পুনরায় হেঁটে বেড়ানোর স্বপ্ন অনেকটা কষ্টকল্পনার মতোই- তবে ড. রেন জিওপিং ভাবছেন তিনি বিশ্বের প্রথম মাথাটি প্রতিস্থাপনের চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করতে পারবেন।

এই পরিকল্পনায় দুটি মাথা শরীর থেকে আলাদা করার বিষয়টি জড়িত থাকছে। একটি দাতা শরীর এবং একটি গ্রহীতা শরীর। তারপর দাতার শরীরের রক্তনালীকাগুলো গ্রহীতার মাথায় সংযোজন। তারপর ঘাড় যথাস্থানে রাখার জন্য একটি ধাতব প্লেট যুক্তকরণ, এবং মেরুরজ্জুর (spinal chord) এর প্রান্তগুলোকে একটি বিশেষ দ্রব্যে সিক্তকরণ যেন সেগুলো সংযুক্ত হয়।

তাত্ত্বিকভাবে, গ্রহীতা একটি কর্মক্ষম শরীরের অধিকারী হবেন এই পদ্ধতিতে; যদি নানাবিধ সম্ভাব্য বিপর্যয়ের যেকোনো একটিও না ঘটে থাকে। ড. জিওপিং কয়েকমাস আগে গণমাধ্যমের আলোচনায় ছিলেন যখন তিনি বিশ্বের প্রথমবারের মতো একটি বানরের মাথা প্রতিস্থাপনের দাবী করেছিলেন। যদিও বানরটি নৈতিক কারণে জীবনাবসান ঘটানোর আগে কেবল ঘন্টাবিশেক বেঁচে ছিলো। যদিও সেই সময় ড. জিওপিং মানুষের মাথা প্রতিস্থাপনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান, তবে বর্তমানে তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলছেন তিনি এবং তাঁর দলের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেই মাথা প্রতিস্থাপনের শল্যচিকিৎসা শুরু করবেন। তিনি বলেন, তাঁরা এখন শল্যচিকিৎসার খুটিনাটি দিকগুলো নিশ্চিত করছেন।

বেশ কিছুসংখ্যক মানুষ মাথা প্রতিস্পাপনের গিনিপিগ হওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে নিউইয়র্কটাইমসে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন ৬২ বছর বয়ষ্ক ওয়াং হামিং যিনি ছয় বছর আগে বন্ধুর সাথে কুস্তি লড়তে গিয়ে ঘাড়ে আঘাত পেয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়েন। সেই সাথে ড. জিওপিং তাঁর মাথা প্রতিস্থাপনের আকাঙ্খা চারিতার্থ করার জন্য একা নন। গত বছর ড. সের্গিও ক্যানাভেরো দাবী করেন তিনি ২০১৭ এর মধ্যে বিশ্বের প্রথম মানুষের মাথা প্রতিস্থাপনের কাজটি করতে যাচ্ছেন।

NYU ল্যাংগোন মেডিকেল সেন্টারের মেডিকেল এথিক্স-এর প্রধান আর্থার কাপলান ফর্বেসে প্রকাশিত একটি লেখায় ড. ক্যানভেরোর পরিকল্পনার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “একটি মস্তিষ্ক কি অপরিচিত একটি দেহ থেকে সংকেত গ্রহণ ও তথ্য আদান-প্রদান করবে? কিংবা অনুভুতিতে সাড়া দেবে? আমার মতে ফলাফল হবে ভয়াবহ উন্মত্ততা কিংবা মানসিক বৈকল্য।”

তবে বর্তমানে, জিওপিং এর ঘোষনা শুনে কাপলান টাইমসকে বলেন, “চীনের ব্যবস্থার মধ্যে কোনো ধরনের স্বচ্ছতা নেই। আমার চাইনিজ জীব বিষয়ক নৈতিকতার মানদন্ডে আস্থা নেই। সেই সাথে এর মধ্যে বিশাল পরিমান রাজনীতি, জাতীয়তার গর্ববোধ আর বানিজ্য যুক্ত করুন, কি ঘটতে যাচ্ছে আপনি তা-ই জানতে পাবেন না।”

ড. জিওপিং স্বীকার করেন যে এই পরিকল্পনাটির ব্যবস্থা করা সত্যিই দুঃষ্কর। তিনি টাইমসকে বলে দেশে ও বিদেশে ৩০ বছর ধরে তিনি চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত কিন্তু সবচেয়ে জটিল অপারেশনটিও এই পরিকল্পনার সাথে তুলনীয় নয়। তিনি বলেন, “এটি নৈতিক হোক আর না হোক, এর সাথে একজন ব্যক্তির জীবন জড়িত। জীবনের চেয়ে বড় কিছু নেই, জীবনই নৈতিকতার মূল।” [The Science Explorar অবলম্বনে]

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.