বড় আকারের গ্রহাণু যদি পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে তাহলে তা সবসময়ই পৃথিবীর প্রাণের গণ-বিলুপ্তির হুমকি বহন করে। গ্রহাণুর সাথে সংঘর্ষের কারণে পৃথিবীতে অনেক প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছিল। সবচেয়ে বিখ্যাত সংঘর্ষটি হচ্ছে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে আছড়ে পড়া গ্রহাণু, যার ফলে পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এই তালিকায় সারা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো ডায়নোসরও ছিল।
পৃথিবীতে এখন এমন ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটার সম্ভাবনা কম। কিন্তু কম হলেও একেবারেই শূন্য নয়। পৃথিবী হয়তো নিকট ভবিষ্যতে এরকম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে না, কিন্তু দূর ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা ঘটতেই পারে। গাণিতিক বাস্তবতা সেই কথাই বলে।
আমাদের গ্রহের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্যই বিজ্ঞানীরা গ্রহাণুর সাথে কোনোকিছুর সংঘর্ষ ঘটিয়ে দেখতে চান সংঘর্ষের পর গ্রহাণুর আচরণ কেমন হয়। সংঘর্ষের ফলে গ্রহাণু যে যে দিক থেকে ক্ষতির কারণ হতে পারে তা বিশ্লেষণ করে সে অনুসারে ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করবে নাসা। সেই লক্ষ্যে নাসা এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) কাজ করে যাচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা অনুসারে তারা একটি গ্রহাণুর সাথে নিয়ন্ত্রিতভাবে একটি মহাকাশযানের সংঘর্ষ ঘটিয়ে গ্রহাণুটিকে তার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করবেন।
প্রশ্ন হতে পারে, এত অর্থ ব্যয় গ্রহাণুকে মূল কক্ষপথ থেকে সরিয়ে আবার সেখানেই প্রেরণ কেন? মূলত সঠিক মুহূর্তে গ্রহাণুকে অল্প সময়ের জন্য মূল কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করতে পারলে পৃথিবী সংঘর্ষ থেকে বেঁচে যাবে। পৃথিবীর কক্ষপথ এবং গ্রহাণুর কক্ষপথ যদি পরস্পরকে ছেদ করে এবং কোনো এক সময় ঐ ছেদবিন্দুতে যদি পৃথিবী ও গ্রহাণু অবস্থান করে তাহলে সংঘর্ষ নিশ্চিত। ঐ পরিস্থিতিতে কোনোভাবে যদি গ্রহাণুকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য তার মূল কক্ষপথ থেকে সরিয়ে নেয়া যায় তাহলে পৃথিবী বেঁচে যাবে সংঘর্ষ থেকে। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে সেকেন্ডে ৩০ কিলোমিটার বেগে ঘুরছে। গ্রহাণুগুলো বিস্তৃতির দিক থেকে সাধারণত কয়েক কিলোমিটার হয়। নাসা তাদের পরীক্ষার জন্য যে গ্রহাণুকে বাছাই করেছে তার বিস্তৃত ৮০০ মিটারের মতো।
তার মানে এটি যদি পৃথিবীতে সংঘর্ষে লিপ্ত হবার পথে থাকতো তাহলে পৃথিবী ও এর কক্ষপথের ছেদবিন্দুতে একে পৌঁছুতে ১ সেকেন্ড দেরি করাতে পারলেই পৃথিবী অনেক দূরে সরে যেতে পারবে এবং সংঘর্ষ থেকে বেঁচে যেতে পারবে। এই কাজটা করানো যেতে পারে বিস্ফোরণের মাধ্যমে কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করার মাধ্যমে। সেজন্যই নাসা মহাকাশযানের মাধ্যমে গ্রহাণুতে সংঘর্ষ ঘটাতে চাইছে।
তাদের পুরো মিশনটি Asteroid Impact and Deflection Assessment (AIDA) নামে পরিচিত। মিশনটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমটি হচ্ছে গ্রহাণুকে আঘাতের ফলে কী কী প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তা পরীক্ষা করা। প্রথম পরীক্ষাটি করবে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। ২য় টি হচ্ছে কক্ষপথ থেকে সরিয়ে গ্রহাণুকে আবার মূল কক্ষপথে ফেরত পাঠানো। ২য় মিশনটি পরিচালনা করবে নাসা।
প্রস্তাবনাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক মতো হয় তাহলে ২০২২ সালের মাঝেই এই পরীক্ষাটি সম্পন্ন হবে। এই প্রজেক্টের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। AIDA প্রজেক্ট সম্পর্কে একটি ভিডিও দেখুন এখানে।
⚫ সিরাজাম মুনির