বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালিয়ে সৃজনশীলতা বৃদ্ধির একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এই লক্ষ্যে তাঁরা মস্তিষ্কের লেফ্ট ডরসোল্যাটারাল প্রেফারেন্সিয়াল কর্টেক্স (DLPFC) নাম একটি অংশের কর্মকান্ড অস্থায়ীভাবে হ্রাস ঘটান। মস্তিষ্কের এই অংশটি স্মৃতি এবং কার্যকারণের সাথে সম্পর্কিত, যাতে পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষকে গন্ডির বাইরে ভাবানো সম্ভব হয়। তবে এর জন্য মূল্যও দিতে হয়।
গবেষক দলটি দেখতে পেয়েছে মস্তিষ্কের যে অংশটি যুক্তি-তর্ক, চিন্তা-ভাবনার নিয়ন্ত্রন, স্মৃতি সংরক্ষণ এবং শেখার সাথে জড়িত সে অংশটির কার্যক্রম হ্রাসের মাধ্যমে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এবং গোল্ডস্মিথ ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের এ সংক্রান্ত গবেষণাটি সম্প্রতি নেচারের গবেষণা পত্র সায়েন্টিফিক রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রধান গবেষক ড. ক্যারোলিন ডি বার্নার্ডি লুফ্ট বলেন, “আমরা মস্তিষ্ক খাটিয়ে সমস্যার সমাধান করি আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবং এই ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের DLPFC উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এটি অধিকাংশ সময়েই খুব চমৎকার কাজ করে কিন্তু কোনো নতুন ধাঁচের সমস্যার মুখোমুখি হলে সেটির সমাধানে বাধা দেয় আমাদের পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতাগুলোর কারণে।” এই মানসিক অবস্থা অতিক্রম করার জন্য আমরা আগে যা শিখে ফেলেছি তা কিছুটা শিথীল করা প্রয়োজন।”
এই বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখার জন্য গবেষকগণ খুলিতে স্থাপিত তড়িৎদ্বারের মধ্য দিয়ে দুর্বল বৈদ্যুতিক সংকেত প্রদান করা হয়, যার মাধ্যমে DLPFC অংশটিকে উত্তেজিত কিংবা শিথীলভাবাপন্ন করে তোলা যায়। এটি নির্ভর করে প্রবাহিত তড়িতের প্রকৃতি ও পরিমানের উপর। এই গবেষণায় ৬০ জন অংশগ্রহণকারীকে উত্তেজিত, শিথীল কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায় “ম্যাচের কাঠি সমস্যা” নামক একটি ধাঁধার সমাধান করতে দেয়া হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, যখন DLPFC এর কার্যক্রম আংশিকভাবে শিথীল করা হয়, তখনই মানুষ অপেক্ষাকৃত কঠিন সমস্যাগুলোর সমাধান বেশী করতে পেরেছে। এ থেকে বোঝা যায় আমাদের চিন্তা-চেতনার দক্ষতা প্রকৃতপক্ষে আমাদের গন্ডির বাইরে ভাবার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং এই দক্ষতা কিছুটা চেপে রাখা গেলে নতুন ধরনের চিন্তা-ভাবনার ক্ষমতা তৈরি হয়।
তবে এতে সমস্যাও আছে। DLPFC এর ক্ষমতা হ্রাসকৃত অবস্থায় অংশগ্রহণকারীদের তাৎক্ষণিক স্মৃতি হ্রাস পেতে দেখা যায়। অর্থাৎ সেসব সমস্যা সমাধানে একসাথে অনেক কিছু মনে রাখতে হয় সেসব কাজে দক্ষতা হ্রাস পেতে দেখা যায়। [IFLScience অবলম্বনে]
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক