গত সপ্তাহে ব্রিটিশ টেলিভিশন চ্যানেল ফোরে প্রচারিত নতুন একটি প্রামান্য চিত্রে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ মিশরের গীজার ‘গ্রেট পিরামিড’ নির্মান পদ্ধতির নতুন আলামত প্রদর্শন করেন। নতুন এই উপলব্ধি আসে লোহিত সাগরের প্রাচীন সমুদ্রবন্দর ওয়াদি আর জারফ হতে আবিষ্কৃত একটি প্যাপিরাসের লেখা হতে।
যত ছয় বছরে এই স্থান হতে যেসব নথি-পত্র উদ্ধার করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ফরাসি-মিশরীয় যৌথ উদ্যোগে আবিষ্কৃত ডায়েরি অব মেরার যা গ্রেট পিরামিডের নির্মানের সাথে জড়িত একজন কর্মকর্তার লেখা। গবেষকগণ এই প্রাচীন মিশরীয়র জীবনের তিনটি মাসের পাঠোদ্ধার করেছেন এই ডায়েরি হতে। এই নথিপত্রগুলো চারহাজার পাঁচশ বছর পুরোনো এবং উদ্ধারকৃত সবচেয়ে প্রাচীন নথিপত্রগুলোর অন্তর্ভূক্ত। এগুলোর মাধ্যমে প্রাচীন ফারাও রাজা খুফুর আমলের জীবন-যাপন পদ্ধতি এবং পিরামিড নির্মানের সরাসরি পদ্ধতির বর্ণনা পাওয়া যায়।
প্রাচীন বিশ্বের সপ্তমাশ্চর্যের মধ্যে পিরামিড সবচেয়ে প্রাচীন এবং শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা নিদর্শন। এটি গিজার সমভূমিতে ২০ বছরে নির্মাণ করা হয় এবং আনুমানিক ২৫৬০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে এর নির্মান সমাপ্ত হয়। এটি বর্তমানে ১৩৯ মিটার বা ৪৫৫ ফিট উচ্চতা বিশিষ্ট। এটি নির্মান করা হয়েছে গিজাতে বহমান নদীর অন্যতীর তোরা থেকে আনা চুনাপাথর এবং গিজার ৮০০ কিলোমিটার দক্ষিনের আসওয়ান হতে আনা গ্রানাইট দিয়ে। কেমন করে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পাথরগুলো আনা হয়েছে সেটি এতদিন একটি বিতর্কিত বিষয় ছিলো। বর্তমানে আবিষ্কৃত প্যাপিরাসের মাধ্যমে এই বিতর্কের অবসান ঘটে।
মেরার বর্ণনা করেন, নৌকার মধ্যমে নদী পথে তোরা হতে চুনাপাথর আনা হয়। নদীতে খাল কেটে যথাসম্ভব পিরামিডের নিকট পর্যন্ত এই চুনাপাথরগুলো পরিবহণ করা হয়। তারপর এগুলোকে বিশেষভাবে নির্মিত পথের উপর দিয়ে গড়িয়ে নির্মান-স্থানে পৌঁছানো হয়। এই ধরনের নৌকা ব্যবহার করে আসওয়ান হতে গ্রানাইটও পরিবহন করে আনা হয়।
গবেষকগণ আরো আবিষ্কার করেছেন যে, ওয়াদি আর জারফ সমুদ্রবন্দর এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সরু সমুদ্রের অন্যপাশ হতে খনিজ তামা উত্তোলন করা হয় এবং এই বন্দরের মাধ্যমেই গিজাতে স্থানান্তর করা হয়। পাথর কাটার জন্য যন্ত্র তৈরিতে তামা ব্যবহার করা হয়।
গিজার গ্রেট পিরামিড প্রায় ৩,৮০০ বছর ধরে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভবন ছিলো। এর অতি চমৎকার কাঠামো বিশেষজ্ঞদের একই সাথে মন্ত্রমুগ্ধ এবং হতবাক করেছে। তবে অবেশেষে এটি নির্মানের রহস্য উদ্ঘাটনমূলক তথ্য পেতে শুরু করেছি আমরা।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক