শুধু উঁচু ডালের পাতা খাওয়ার জন্য বিবর্তিত হয় নি জিরাফের লম্বা ঘাড়: নতুন গবেষণায় প্রকাশ

0
600

জিরাপ সংক্রান্ত নতুন একটি গবেষণায় গবেষকগণ একটি পূর্ব ধারনাকৃত হাইপোথিসিসের সত্যতা নিরূপনের চেষ্টা করেছেন। এই গবেষণা হতে দেখা যায় খাওয়ার জন্য উঁচু ডালের পাতার কাছে পৌঁছানোই শুধু নয় জিরাফের লম্বা ঘাড়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা হলো শরীরের তাপমাত্রা সীমিত রাখা।

প্রায় ৫.৮ মিটার বা ১৯ ফিট লম্বা জিরাফ ভূ-ভাগের দীর্ঘতম প্রানী। এর জন্য দায়ী এদের লম্বা ঘাড় যা নিজেই ১.৮ মিটার বা ৬ ফিট হতে পারে। তবে এত লম্বা ঘাড় বিদ্যামান স্বত্বেও অন্য সব স্তন্যপায়ী প্রানীর মতোই এদের ঘাড়েও ৭ টি কশেরুকাই থাকে।

ফসিলের আলামত হতে দেখা যায়, একদা জিরাফের ঘাড় খাটো ছিলো। তবে কেন এবং কীভাবে এদের ঘাড় ক্রমশঃ দীর্ঘ হয়ে গেলো তা এখনো রহস্যাবৃত। এই বিষয়ে মতবাদের জন্য দুটি দল আছে। একদল আপনি যেমনটি জানেন সেটাই জানে: জিরাফের লম্বা ঘাড়ের কারণ উঁচু ডালের পাতা সংগ্রহ যাতে করে এটি অন্যদের সাথে প্রতিযোগীতায় এগিয়ে থাকে।

এই ধারনার উদ্ভব ১৮০৯ সালে যখন ফরাসী প্রকৃতিবিদ জ্যাঁ ব্যাপ্টিস্ট ল্যামার্ক প্রস্তাব করেন জিরাফের উঁচু ঘাড়ের উদ্ভব হয়েছে এর ক্রমশঃ উঁচু ডালের পাতা আহরণের প্রবণতা থেকে। ল্যামার্কের ধারনা অনুযায়ী পাতা খাওয়ার জন্য তারা উঁচু ডালের দিকে ঘাড় প্রসারিত করার চেষ্টা করত এবং এই প্রবণতা প্রজন্ম হতে প্রজন্মে গমন করে ক্রমশঃ ঘাড় লম্বা হয়ে গেছে। আধুনিক বিবর্তনীয় ব্যাখ্যায় এই ধারনা অনুযায়ী বলা হয়,  জিরাফের লম্বা ঘাড়ের উদ্ভব হয়েছে প্রাকৃতিক নির্বাচন উঁচু ঘাড় এবং এর ফলে পাতা সংগ্রহের সুবিধার জন্য জিরাফের লম্বা ঘাড় তৈরি করেছে।

তবে সব জিরাফ যে উঁচু ডাল হতে খাবার খেতে পছন্দ করে এমনটি নয়।

অন্য আরেক দলের ধারনা অনুযায়ী জিরাফের উঁচু ঘাড় যৌনতা-নির্বাচিত। পুরুষ জিরাফ নারী জিরাফের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য অন্য পুরুষ জিরাফের সাথে প্রতিযোগীতা করতে তাদের ঘাড়ের মাধ্যমে লড়াই করে। যেই জিরাফের ঘাড় লম্বা সেটিই সাধারণত জয়ী হয়। ফলে পরবর্তী বংশধরে এরাই জিন স্থানান্তরের সুযোগ পায় বেশী। এভাবে প্রজন্মান্তরে উঁচু জিরাফের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়।

কিন্তু বর্তমানে আমরা নতুন একটি হাইপোথিসিস সম্বন্ধে জানতে পারছি। জিরাফের উঁচু ঘাড় পৃষ্ঠের পরিমান বৃদ্ধি করার মাধ্যমে তীব্র উষ্ণ আফ্রিকার জলবায়ুতে শরীরের তাপ ছড়িয়ে দিয়ে শরীর শীতল রাখতে সাহায্য করে। জিরাফের ঘাড়ের মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনের এই ধারনা অবশ্য নতুন নয়। ১৯৬৩ সালে এ. ব্রাউনলি এধরনের একটি প্রস্তাবনা রাখেন।

ইউইভার্সিটি অব উইওমিং এর গবেষক গ্র্রাহাম মিশেল এই বিষয়টি নিয়ে ২০০৯ সাল হতে ভাবছেন  তবে প্রথমবারের মতো তিনি সাম্প্রতি অন্য একটি দলের সাথে এই ধারনাটিকে পরীক্ষা করে দেখতে উদ্যত হন। তাঁরা জিম্বাবুয়েতে কয়েক ডজন জিরাফের শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করেন।

তাঁরা দেখতে পেলেন, জিরাফের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল একই ভরের অন্য প্রানীর সমান তবে তাদের শরীরের আকৃতি এই প্রানীগুলোকে শীতল থাকতে সাহায্য করে। সামনে থেকে দেখলে একটি জিরাফকে মনে হয় লম্বা ও সরু যে আকৃতিটি ডোলিকোমর্ফিক নামে পরিচিত।

ডোলিকোমর্ফিক আকৃতির কারণে জিরাফ সূর্যের দিকে মুখ করে থেকেও সূর্য হতে আপতিতঃ আলোক রশ্মি অন্যদের চেয়ে কম গ্রহণ করে যার ফলে এটি অন্যদের তুলনা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে পারে ভালো। অন্যভাবে বললে, তাদের ঘাড় লম্বা হওয়ায় শরীরের চ্যাপ্টা দিকটি সূর্য হতে সহজে আড়াল করতে পারে ফলে ফলে তাদের চামড়ায় সুর্যের আলো কম পড়ে।

তবে এই ধারনাটি এখনো পর্যন্ত একটি সম্ভাবনা, যা প্রতিষ্ঠিত করতে আরো অনেক গবেষণা করতে হবে। [সায়েন্স এ্যালার্ট অবলম্বনে]

-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.