যদি আমরা কখনো মঙ্গলে সত্যিই বসতি গড়তে যাই তাহলে বায়ুমন্ডলে কিছু অক্সিজেন থাকা প্রয়োজন। মঙ্গলে ইতিমধ্যে পানি আছে, এই সাথে আছে তুষার। তবে একই সাথে যদি অত্যাবশ্যকীয় অক্সিজেন অণুটি না থাকে তাহলে জীবন-যাপন করা কষ্টসাধ্য।
কথাগুলো ফিউচারিজম পত্রিকাকে বলছিলেন নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রাশাসক রবার্ট লাইটফুট জুনিয়র। তিনি মঙ্গলে অক্সিজেন পাওয়ার একটি সম্ভাব্য পথ নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তাঁরা পরিকল্পনা করছেন নাসার প্রেরিত পরবর্তী মঙ্গলযানে অক্সিজেন উৎপাদনের ব্যবস্থা থাকবে।
তবে নিঃসন্দেহে এটি অক্সিজেনপূর্ণ সিলিন্ডার পৃথিবী হতে বয়ে নিয়ে যাবে না। এটি যখন মঙ্গলের বুকে পৌছাবে, তখন মঙ্গলের কাঁচামাল ব্যবহার করেই অক্সিজেন তৈরি করবে।
লাইটফুট ব্যাখ্যা করেন, “২০২০ নাসার যেই যানটি মঙ্গলের মাটিতে পোঁছাবে সেটি একটি পরীক্ষা চালাবে। এটি মঙ্গলের বায়ুমন্ডলের উপাদান ব্যবহার করে অক্সিজেন তৈরি করবে।” এই পরীক্ষাটি ঘটানো হবে কেমন করে?
এই মূহুর্তে পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলের বায়ুমন্ডল একেবারেই ভিন্ন। আমাদের বাসগ্রহটির বায়ুমন্ডলে রয়েছে ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন এবং সেই সাথে ২১ শতাংশ অতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন। আমাদের রক্তিম প্রতিবেশী মঙ্গলে রয়েছে ৯৫ শতাংশ কার্বন-ডাই অক্সাইড এবং সেই সাথে কেবল ৩ শতাংশ নাইট্রোজেন।
মঙ্গলের বায়ুমন্ডল আবার অতিমাত্রায় পাতলা। কোটি কোটি বছর আগে অবশ্য মঙ্গলে একটি পুরু বায়ুমন্ডল ছিলো এবং এমনকি পৃথিবীর মতো অক্সিজেনও ধারন করেছে। তবে এর চৌম্বক ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর শক্তিশালী সৌর ঝড় এসে এর বায়ুমন্ডলটিকে প্রায় খুলে নিয়ে মহাশূন্যে বিলীন করে দিয়েছে। এখন কেবল অতি সামান্য পরিমান অক্সিজেন এর উদ্ধাকাশে ভেসে বেড়ায়।
অক্সিজেন উৎপাদনের একটি গ্রহনযোগ্য পদ্ধতির ধারনা আসতে পারে প্রকৃতি থেকে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ প্রতিনিয়ত দিবাভাবে কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে অক্সিজেন তৈরি করছে। কাজেই যদি এমন কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা যায় যেখানে কৃত্রিম ভাবে এই বিক্রিয়াটি ঘটানো যাবে তাহলে মঙ্গলের কার্বন-ডাই অক্সাইড সমৃদ্ধ বায়ুমন্ডলে উল্লেখযোগ্য পরিমানে অক্সিজেন উৎপাদন করা যেতে পারে। যদি ছোট পরিসরে কাজটি করা যায় তাহলে এটিকে মঙ্গলযানের সাথে এঁটে দেওয়া যাবে।
একটি পদ্ধতি হলো, শক্তিশালী লেজার রশ্মি ব্যবহার করে CO2 সাথে যুক্ত কার্বনটিকে বের করে দিয়ে শুধু O2 রেখে দেওয়া। বিকল্প পদ্ধতিতে একটি জ্বালানী কোষ (fuel cell) ব্যবহার করেও তড়িৎ বিশ্লেষণের সাহায্যে কার্বন ও অক্সিজেনকে পৃথক করা যেতে পারে। [iflscience.com অবলম্বনে]
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক