৬০-এর দশকে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ‘মেরিনা প্রকল্প’ হাতে নেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল বুধ, শুক্র এবং মঙ্গল গ্রহ পর্যবেক্ষণ। সেই উদ্দেশ্যে দশটি অভিযান চালায় নাসা। তবে মেরিনা-১১ এবং মেরিনা ১২ কে উন্নত করে ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ নামে মহাকাশে পাঠানো হয়। এই দুই নভোযানের প্রথমিক উদ্দেশ্য ছিল বৃহস্পতি ও শনি গ্রহ পর্যবেক্ষণ করা। পরে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে নিশ্চিত হন, বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে সৌরজগতের দুই দূরবর্তী গ্রহ ইউরেনাস ও নেপচুনেও এই নভোযান দুটিকে পাঠানো সম্ভব। পরে প্লুটোকেও যুক্ত করা হয় ওই অভিযানে। ভয়েজার-১ ও ভয়েজার-২ এর জন্য দুটি পথ নির্বাচন করা হয়েছিল। একটি ছিল বৃহস্পতি-শনি-প্লুটো। অন্য পথটা ছিল বৃহস্পতি-ইউরেনাস-নেপচুন।
ভয়েজার-২-কে আগে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০ অগাস্টে। আগের পথ একটু পরিবর্তন করে সাজানো হয় নতুন পথ। বৃহস্পতি-শনি-ইউরেনাস-নেপচুন। ভয়েজার-২ সফলভাবে মাহাকাশে প্রেরণের পর ভয়েজার-১-কে উৎক্ষেপনের সিদ্ধান্ত নেন নাসার বিজ্ঞানীর। একই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর একে উৎক্ষেপন করা হয়। ভয়েজার-১ আকারে বেশ ছোট। গতিও ভয়েজার-২-এর তুলনায় বেশি। ফলে দ্রুত বৃহস্পতি এবং শনি গ্রহকে অতিক্রম কতে সক্ষম হয় ভয়েজার-১।
অন্যদিকে সৌরজগতের বাইরের জগৎ অনুসন্ধানের প্রেরণ করা হয়েছিল পায়োনিয়ার ১০। সেটা ভয়েজার-১-এর আগেই। উচ্চগতির কারণে ১৯৯৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পাইয়োনিয়ার-১০-কে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় ভয়েজার-১। ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর নাসার বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেন, এই ভয়েজার-১ সৌরজগতের অতিক্রম করে অসীম মহাবিশ্বের দিকে পা বাড়িয়েছে। ৪০ বছরের বেশী সময় ধরে চলছে এর অবিরাম পথচলা।
চলার পথে ভয়েজার ১ বৃহস্পতি এবং শনি গ্রহের খুব কাছ থেকে ছবি তুলে পাঠায় পৃথিবীতে। বৃহস্পতির উপগ্রহ আইওর বুকে আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ পর্যবেক্ষণ করে। বৃহস্পতির আরেক উপগ্রহ ইউরোপার ভূপৃষ্ঠের নিচে তরল সমুদ্রের হদিস দেয়। আরেকটা চমৎকার খবর দেয় ভয়েজার-১। শনি গ্রহে নাকি মিথেন বৃষ্টি হয়!
সূর্য থেকে প্রায় ১২০০ কোটি মাইল দূরে এখন ভয়েজার ১। পৃথিবীতে তথ্য পাঠাতে এখন এর সময় লাগছে ১৭ ঘণ্টারও বেশি। ভয়েজার ১-এর লক্ষ্য এখন মহাবিশ্বের অজানা জগতে পাড়ি জমানো। ভয়েজার ১ চলে পারমাণবিক শক্তিতে। এর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন নাসার বিজ্ঞানীরা। কতদিন ভয়েজার ১ টিকে থাকবে সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল না তাঁদের। আধুনিক প্রযুক্তির ছিঁটেফোটাও ছিল না একে। একে চালাচ্ছে মাত্র ৬৮ কিলোবাইট মেমরির কম্পিউটার। এখনকার সবচেয়ে কমদামী মোবাইল ফোনের মেমরিও ২ গিগাবাইট। সাধারণ একটা মোবাইল থেকেও প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার গুণ কম মেমরির কম্পিউটার নিয়ে ভয়েজার ১ চলেছে অসীম মহাবিশ্বের সন্ধানে।
-আব্দুল গাফফার রনি
বিজ্ঞান লেখক
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]