ইউনিভার্সিটি অব নিউসাউথওয়েলসের (UNSW) গবেষকগণ অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চল পিলবারায় সঞ্চিত গরম পানির প্রবাহ থেকে প্রায় ৩৪৮ কোটি বছরের পুরনো জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন, যা এযাবৎকালের পাওয়া জীবাশ্মগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় ২৭০-২৯০ কোটি বছর আগের জীবাণু জীবের অস্তিত্ব পাওয়া যায় যা জৈবপদার্থ- সমৃদ্ধ মাটিতে মিশে ছিলো। UNSW এর একজন পিএইচডি প্রার্থী তারা জইক বলেন, “আমাদের এই আবিষ্কার শুধুমাত্র পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো গরম পানির ঝর্ণাই নয় বরং এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি ৩০০ কোটি বছর পূর্বেও এই পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল, যা পূর্বে ৫৮ কোটি বছর ভাবা হতো।”
এটি পৃথিবীর সাধুপানির গরম ঝর্ণায় প্রাণের উৎসের প্রমাণে ব্যবহার করা যায়। যেখানে সমুদ্রে বিকশিত প্রাণ পরবর্তীতে স্থলে এসে অভিযোজিত হয়েছে বলে ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হয়।
গবেষকগণ পিলবারার প্রায় ৩৫০ কোটি বছরের পুরনো অসাধারণ এই জীবাশ্মকে পর্যালোচনা করেন এবং এতে তাঁরা দেখতে পান জমাকৃত এই বস্তু সমুদ্রে না বরং ভূমিতেই গঠিত হয়েছে। কারণ এতে স্ফুটন তাপমাত্রায় গঠিত হওয়া এক প্রকার খনিজ গিজেরাইটের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এটি সিলিকা সমৃদ্ধ তরল পদার্থ যা শুধু স্থলভাগের গরম ঝর্ণার পরিবেশেই গঠিত হয়। পূর্বের প্রাচীনতম গিজেরাইট পাওয়া গিয়েছিলো একটি শিলার মাঝে যা প্রায় ৪০ কোটি বছর পুরনো ছিলো।
পিলবারার এই গরম পানির স্রোতের মাঝে গবেষকগণ স্ট্রোমেটোলাইটস স্তরের শিলার কাঠামো আবিষ্কার করেছেন যা প্রাচীন অণুজীব দ্বারা নির্মিত হয়েছিলো। এছারাও ঐ স্তুপের মাঝে মাইক্রো-স্ট্রোমেটোলাইটস, মাইক্রোবাইয়াল প্লেস্যাড টেক্সচার এবং সঞ্চিত বুদবুদসহ অন্যান্য প্ররম্ভিক জীবনের অস্তিত্ব মজুদ রয়েছে। যা কিছু চটচটে পদার্থের (মাইক্রোবিয়াল) ফাঁদে নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর এস্ট্রোবায়োলজির পরিচালক অধ্যাপক ভ্যান ক্র্যানেনডনক বলেন, “এটি আমাদের দেখাতে সক্ষম হয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক আগের সময়ে এর ভূমি এবং স্বাদু পানিতে বিভিন্ন ধরণের প্রাণের অস্তিত্ব ছিলো। পিলবারার এই মজুদ অনেকটাই মঙ্গলের ভূত্বকের মতো যা যা লাল গ্রহের উপর গরম পানির ঝর্ণার মজুদ তৈরী করে। আর এটাই আমাদেরকে এই গ্রহে জীবাশ্ম ভিত্তিক প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।”
অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর এস্ট্রোবায়োলজির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ওয়াল্টার বলে, “পিলবারা আমাদেরকে পৃথিবীর প্রথমদিকের জীবনের একটি সমৃদ্ধ নথি প্রদান করেছে এবং মঙ্গলে উন্নত অনুসন্ধান চালানোর একটি প্রধান অঞ্চল চিহ্নিত করে দিল এবং সেইসাথে বিজ্ঞান ও দর্শনের সর্বশ্রেষ্ট একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হল আদোও কি এই মহাবিশ্বে একবারের অধিক প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল?” [phys.org- অবলম্বনে]
-শফিকুল ইসলাম