১৯৩৬ সালে বাগদাদ শহরের কাছাকাছি একটি গ্রামে কিছু প্রাচীন মাটির তৈরি ঘড়া আবিষ্কৃত হয়। ধারনা করা হয় এই ঘড়াগুলো খৃষ্টপূর্ব ২৫০ সাল হতে ২২৪ খৃষ্টাব্দের মাঝামাঝি কোনো সময়ে নির্মিত। এই ঘড়াগুলোর মাঝখানে কিছু তামার পাত কুন্ডলিকরে রাখা। তার মাঝে একটা লোহার তৈরি দন্ড। এই দন্ড এবং তামার পাতের মাঝে আলকাতরা জাতীয় পদার্থ দেওয়া।
এই আবিষ্কারটি পরের কয়েকবছরে প্রত্মতত্ত্ববিদগণের মাঝে বেশ হৈ চৈ ফেলে দেয়। কারন সম্পুর্ণ জিনিষটির সাথে আধুনিক ব্যাটারীর অনেক মিল। আমরা এখন বাজারে যেই পেন্সিল ব্যাটারী কিনতে পাই, তাতে একটি দস্তার পাত্রের মাঝখানে একটি কার্বনের দন্ড থাকে। এই দুটি পদার্থের মাঝখানে থাকে কিছু তড়িৎবিশ্লেষ্য। দস্তার পাত এবং কার্বন দন্ডের পারষ্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় এদের মধ্যে বিদ্যুৎ তৈরি হয় এবং আমরা বাইরে থেকে এই দুই প্রান্তে কোনো সার্কিট সংযুক্ত করলে সেখানে বিদ্যুতের প্রবাহ পাই। প্রায় দুইহাজার বছরের পুরনো এই মৃৎপাত্রগুলো আবিস্কার করে অনুসন্ধানকারীগণ হতবিহ্বল হয়ে যান। কারন আধুনিক বিশ্বে ব্যাটারী উদ্ভাবিত হয়েছে মাত্র দু’শ বছর আগে। অথচ এই মেসোপটেমিয়ানরা প্রায় দু’হাজার বছর আগেই ব্যাটারি ব্যবহার করে বসে আছে।
অবশ্য এই বস্তুগুলো ব্যাটারি কিনা এটা নিয়ে এখনো মতভেদ আছে। একদল এগুলোকে ব্যাটারি আখ্যা দিলেও আরেকদল বলছেন অন্য কথা। এগুলোকে যাঁরা ব্যাটারি বলছেন তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী এই সরঞ্জামের মধ্যে যদি কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্য বস্তু দেওয়া হয় (সেটা লেবুর রসও হতে পারে) তাহলে এটা একটা ব্যাটারির মতোই কাজ করতে পারে এবং প্রায় আধাভোল্টের মত ভোল্টেজ তৈরি করতে পারে। এই পরিমান ভোল্টেজ একটা রূপার তৈরি মূর্তির উপর সোনার প্রলেপ দেওয়ার কাজে লাগানো যেতে পারে। এবং পরীক্ষার মাধ্যমে এই কাজটি তাঁরা করেও দেখিয়েছেন।
কিন্তু অপর সন্দেহবাদী প্রত্নতত্ত্ববিদের দল বলছেন এটাকে ব্যাটারি হিসেবে ব্যাবহার করা সহজ নয়। কেননা আলকাতরার যেই আস্তরণ পাওয়া যাচ্ছে তা তামা আর লোহাকে সম্পূর্ণ পৃথক করে ফেলে যার ফলে এর মধ্যে কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ দেওয়া হলেও তা বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারবে না। তাছাড়া এই ব্যাটারীতে সংযোগ দেওয়ার জন্য কোনো পরিবাহী তার জাতীয় বস্তু পাওয়া যায় নি। এছাড়া এই ব্যাটারি দিয়ে চালানোর মত কোনো সরঞ্জামও আবিষ্কৃত হয় নি। তাঁদের ধারনা এই ধরনের মৃতপাত্র কোনো আচার-অনুষ্ঠানের উপকরণ ছিলো মাত্র।
এই দু’দল প্রত্নতত্ত্ববিদের দ্বন্দের এখনো অবসান হয়নি এবং এখনো নিশ্চিত হওয়া যায় নি যে এই পাত্রগুলো ব্যাটারি ছিল কিনা। যদি ব্যাটারি হয়েও থাকে সেই প্রযুক্তির জ্ঞান মানব ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায় এবং বিদ্যুৎ পুনরায় নতুন করে আবিষ্কার করতে হয়। সেই আবিষ্কারের বয়স হলো মাত্র তিনশ’ বছর।
-ইমতিয়াজ আহমেদ
সম্পাদক, বিজ্ঞান পত্রিকা
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
২. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া