১৯৬৭ সালের সৌরঝড় নিউক্লিয়ার যুদ্ধের সূচনা করে ফেলেছিলো প্রায়!

0
435

১৯৬৭ সালের কথা।যুক্তরাষ্ট্র আর সৌভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে তুমুল স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। আকাশে আধিপত্য বিস্তারের জন্য এক দেশ একটা কিছু করলে তো আরেক দেশ করে বসে আরেকটা। ঐ সময়ে রাশিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র খুব সচেতন। তারা এমন কিছু রাডার ব্যবস্থা তৈরি করে রেখেছিল যা আক্রমণ সম্পর্কে আগে থেকে সতর্ক করে দিবে। সোভিয়েত রাশিয়া যদি আমেরিকার দিকে কোনো ব্যালাস্টিক মিসাইল ছুঁড়ে মারে তাহলে রাডারে তা ধরা পড়বে। এরকম তিনটি রাডার ব্যবস্থা (early warning system radars) স্থাপন করা ছিল। একদিন হঠাৎ একসাথে তিনটি রাডার অকেজো হয়ে যায়।

একই সময়ে একসাথে তিনটি রাডার ব্যবস্থা অকেজো হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী খুব গুরুতরভাবে গ্রহণ করে এবং ধরে নেয় রাশিয়া কোনো প্রক্রিয়া এগুলো অচল করে দেয়। একসাথে সবগুলোকে জ্যাম করে দেবার অর্থ যুক্তরাষ্ট্রকে অন্ধ অবস্থায় আক্রমণ করার সুযোগ রাশিয়া নিতে চায়। এই ধারণায় প্রভাবিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সবকিছু গাঁটছড়া বেঁধে যায়, ঘোষণা দেয়া মাত্রই যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। বলা যায় তারা একদম ট্রিগারে আঙুল দিয়ে রেখেছিল, চাপ দিলেই যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।

তবে ভাগ্য ভালো এটি শেষমেশ যুদ্ধে পরিণত হয়নি। একদম শেষ মুহূর্তে বিজ্ঞানীদের একটি দল রাডারের জ্যাম হয়ে যাবার সত্যিকার কারণ উদঘাটন করতে পারেন এবং দ্রুত উপরের স্তরের সদস্যদের অবগত করেন। বিজ্ঞানীরা দেখান যে, রাডার জ্যাম হবার কারণ সূর্যে ঘটে যাওয়া শক্তিশালী একটি ঝড়; রাশিয়ার আক্রমণ নয়। সূর্যে তৈরি হওয়া ঝড় বা সৌরঝড় যদি খুব শক্তিশালী হয় তাহলে তা পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রকে বিঘ্নিত করতে পারে এবং রাডারের সিগনাল গ্রহণের ব্যবস্থাকে অকেজো করে দিতে পারে। এমনই হয়েছিল সেই সময়।

এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রকে সূর্য ও মহাকাশের অন্যান্য বিকিরণের ব্যাপারে ভাবিয়ে তুলে। ফলে এতে মনোযোগ কেন্দ্রীভুত হয় এবং এর উদঘাটনে কাজ করার জন্য বিজ্ঞানীদের নিয়োগ করা হয়। এতে করে মহাকাশবিজ্ঞান এগিয়ে যায় অনেকটা। সূর্য নিয়ে আজকের দিনে অনেক গবেষণা হচ্ছে, এসব উন্নত গবেষণার পেছনে আছে মূলত ১৯৬৭ সালের তাক লাগানো ঘটনাটি।

১৯৬৭ সালে সূর্যে উত্তপ্ত ও শক্তিশালী একটি ঝড় হয়। ছবিতে সাদা শিখায় দৃশ্যমান।
১৯৬৭ সালে সূর্যে উত্তপ্ত ও শক্তিশালী একটি ঝড় হয়। ছবিতে সাদা শিখায় দৃশ্যমান।

এতদিন আগে ঘটনাটি ঘটে থাকলেও এটি বলতে গেলে একদম গোপনই ছিল। প্রায় ৫০ বছর পর আজকে আমরা জানতে পারছি এর সম্পর্কে। স্পেস ওয়েদার জার্নালে প্রকাশিত একটি সিরিজ থেকে এই ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়। সিরিজের লেখক ডেলরস নিপ বলেন “প্রস্তুতি নেবার জন্য এটা ছিল আমাদের জন্য বড় একটা শিক্ষামূলক ঘটনা।”

আজকে যদি আমরা ঐ সময়ে ফিরে তাকাই তাহলে এমন একটা কিছুকে কাঙ্ক্ষিত ঘটনা বলেই ধরে নিব। কারণ ১৯৬৭ এর মে মাসে ঘটে যাওয়া ঐ সৌরঝড়টি ছিল গত শতাব্দীর অন্যতম বড় ও শক্তিশালী ঝড়। এর বিকরণের তরঙ্গ, চুম্বক ক্ষেত্র ও গ্যাস প্রবাহ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পৌঁছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করে। এর অংশ হিসেবে ত্রুটি দেখা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের রাডার ব্যবস্থায়।

বিজ্ঞানীরা যদি সত্যিকার কারণটা সম্পর্কে জানান দিতে না পারতো তাহলে এতদিনে ইতিহাসে হয়তো বিশ্বযুদ্ধের পরিমাণ হতো ৩ টা। এমন পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য বিজ্ঞান অবশ্যই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।

-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.