বৃহঃস্পতির বিহ্বল করে দেওয়া মেরুজ্যোতির ছবি

0
796

হাবল মহাশূন্য টেলিস্কোপ বৃহস্পতিগ্রহের মেরু অঞ্চলের অরোরা বা মেরুজ্যোতির ছবি তুলেছে এবং এগুলোর আকার পৃথিবীর চেয়ে বড়।

আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহঃস্পতি এর বিশাল লাল ফোটার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এই ফোটাটি আসলে একটি দৈত্যাকৃতির বায়ুঘুর্নী যা বিগত চারশ’ বছর ধরে বিরাজ করছে। তবে গ্রহটি অন্য আরেকধরনের প্রাকৃতিক ঘটনারও উৎস, অরোরা বা মেরুজ্যোতি। নাসা এবং ইএসএ এর আওতাধীন হাবল টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জ্যোতির্বিদগণ সম্প্রতি বৃহঃস্পতির মেরুজ্যোতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং চমৎকার ছবিও তুলেছেন।

সৌরঝড়ের কারণে যখন উচ্চগতির ইলেক্ট্রন সূর্য থেকে নির্গত হয়ে কোনো গ্রহের বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে এবং গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে এর দুই মেরুতে অবস্থান নেই তখন বায়ুর পরমাণুর সাথে সংঘর্ষে তা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এই ঘটনাই আমাদের চোখে মেরুজ্যোতি হিসেবে দেখা দেয়। বৃহঃস্পতি গ্রহের উৎপন্ন মেরুজ্যোতি সর্বপ্রথম ভয়েজার মহাশূন্য প্রোবের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিলো; এবং আকার এরা সমগ্র পৃথিবীর চেয়েও বড় এবং পৃথিবীর মেরুজ্যোতির চেয়ে কয়েকশ’ গুন বেশি শক্তিশালী হয় এবং এগুলো স্থায়ী হয়ে থাকে।

পৃথিবীর বুকে সৌরঝড়ের মাধ্যমে তীব্র মেরুজ্যোতি তৈরি হয়। উচ্চশক্তির কণিকা বায়ুমন্ডলীয় গ্যাস যেমন: অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদির সাথে সংঘর্ষের ফলে লাল, সবুজ, বেগুনী, সাদা রংএর উজ্জ্বল আলো তৈরি হয়- কিন্তু বৃহঃস্পতির মেরুজ্যোতির আরেকটি বাড়তি উৎস রয়েছে। বৃহঃস্পতির শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র এর চতুর্দিকের চার্জযুক্ত কণিকাগুলোকে টেনে নেয়। এটি শুধু সুর্য থেকে আগত কণিকাই টেনে নেয় না বরং এর নিজের উপগ্রহগুলো থেকে নির্গত বিভিন্ন চার্জযুক্ত কণিকাকেও আকর্ষন করে, বিশেষ করে এর চাঁদ আইও (Io) থেকে, যেটি তীব্র আগ্নেয়গিরির আগ্র্যুৎপাতের মাধ্যমে চার্জযুক্ত কণিকা ছড়িয়ে দেয়।

জুপিটারের মেরুজ্যোতির অনুপুঙ্খ ছবি তোলার জন্য হাবল আগামী একমাস প্রতিদিন এই গ্রহটিকে পর্যবেক্ষণ করবে। পরে একগুচ্ছ ছবি থেকে বিজ্ঞানীরা একটি ভিডিও তৈরি করবেন যাতে মেরুজ্যোতির নড়াচড়া লক্ষ্য করা যাবে। সৌভাগ্যবশতঃ হাবলের পর্যবেক্ষণের সময়টি নাসার ‘জুনো’ মহাশুন্যযানের সময়ের সাথে মিলে যাচ্ছে যখন এই জুপিটারের কাছে সৌর ঝড়ে অবস্থান করছে এবং জুলাইয়ের শুরুর দিকে এর কক্ষপথে পৌঁছানোর পথে রয়েছে। হাবল যখন বৃহঃস্পতির মেরুজ্যোতি পরিমাপ করছে, জুনো তখন সৌর ঝড়ের ধর্ম পর্যবেক্ষণ করছে। একটা চমৎকার জুগল তৈরি হয়েছে দুইয়ে মিলে!

জুপিটারের উত্তর মেরুর মেরুজ্যোতি নিয়ে ইতিমধ্যে একটি ভিডিও তৈরি হয়েছে। আগ্রহীরা দেখতে পারেন এখানে:

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.