পদার্থ বিজ্ঞানে মাঝে মাঝে নিশ্চিত বিষয়টি প্রমান করা কঠিন বিষয় প্রমানের চেয়ে দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এই ক্ষেত্রে নিশ্চিত বিষয়টি হলো কেন মহাবিশ্ব শুধুমাত্র পদার্থ দিয়ে তৈরি। আপনার উচ্চকিত প্রতিবেশী হতে শুরু করে সবচেয়ে দূরবর্তী গ্যালক্সিটির সবকিছুই পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়েছে। কিন্তু যেহেতু পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো প্রতিসম তাই মহাবিশ্বে যে পরিমান পদার্থ বা ম্যাটার রয়েছে তার সমপরিমান প্রতিপদার্থ বা এন্টিম্যাটার থাকার কথা। তাহলে তা নেই কেন?
আমরা পুরোপুরি চিত্র যদিও এখনো পাইনি তবে পদার্থবিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল সম্ভবতঃ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত পেয়েছে। তাঁরা আবিষ্কার করেছেন পরমানুস্থিত সব নিউক্লিয়াস প্রতিসম নয় বরং কিছু কিছু নাশপাতি আকৃতির।
Physical Review Letters এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে গবেষকগণ পর্যবেক্ষণ করেছেন যে বেরিয়াম-১৪৪ আইসোটোপটি গোলকাকার বা ডিম্বাকার নয়। এই অতি ক্ষণস্থায়ী পরমাণুটির প্রোটন ও নিউট্রনগুলো একটি অপ্রতিসম আকৃতিতে সজ্জিত থাকে, যার একদিকে অন্য দিকের চেয়ে বেশী ভারী। এই আবিষ্কারটি নিউক্লিয়াস সম্পর্কিত অন্য অনেকগুলো আবিষ্কারের সাথে সাংঘর্ষিক। এমনকি এর মাধ্যমে কাল-ভ্রমন বা টাইমট্রাভেল অসম্ভব বলে প্রমানীত হতে পারে।
CP-প্রতিসাম্য অনুযায়ী প্রতিটি ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুর্ণনরত এবং বিশেষ দিকে ক্ষয়প্রাপ্ত কণিকার বিপরীতে একটি করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুর্ননরত এবং আগের কণিকার বিপরীত দিয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত একটি কণিকা রয়েছে। ইতিপূর্বে যদিও C এবং CP লঙ্ঘন প্রস্তাব করা হয়েছে এবং মহাবিশ্বের এন্টিম্যাটারের অভাব ব্যাখ্যা করা হয়েছে কিন্তু অদ্যাবধি এর খুব সামান্য নমুনাই পাওয়া গেছে। অপ্রতিসম আকৃতির এই পরমাণুটি দ্বিতীয় আবিষ্কার এবং আরেকটি ইঙ্গিত যে প্রচলিত কণা পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেলের বাইরেও পদার্থবিজ্ঞানের জানার আরো অনেক কিছু রয়ে গেছে।
অদ্যাবধি আমরা যা জানি তা হচ্ছে এই মহাবিশ্ব CPT (C = charge, P = parity, T = time) এর অধীনে প্রতিসম, যাতে সময়ের বিপরীত দিকে গমনের বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে। এর অর্থ হলো যদি CP লঙ্ঘিত হয়, তাহলে T প্রতিসাম্যও বিপরীত দিতে লঙ্ঘিত হবে যাতে একই সাথে ঘটনাগুলো সামনের দিকে ঘটে এবং বিপরীত দিকে না ঘটে। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবশ্যম্ভাবী বিষয়ের উদাহরণ (ভাঙ্গা ডিম যেমন করে একসাথে যুক্ত হয়ে জোড়া লাগে না) কিন্তু মৌলিক পদার্থ বিজ্ঞানের জন্য বিষয়টি এমন নয়। এই আবিষ্কার দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে সময় বিচ্ছিন্ন এবং এর একটি সুনির্দিষ্ট গন্তব্য আছে।
গবেষনার সহ-গবেষক ড. মার্কাস শেক বলেন, “আমরা দেখেছি এই নিউক্লিয়াসগুলো আক্ষরিক অর্থেই স্থানে একটি নির্দিষ্ট দিক বা গন্তব্য নির্দেশ করে। এটি সময়ের একটি নির্দিষ্ট দিকের নির্দেশনা দেয় এবং প্রমাণ করে যে সময়ের দিকটি নির্দিষ্ট এবং আমরা সর্বদা কেবল অতীত থেকে ভবিষ্যতের দিকেই যেতে পারব।”
এই পরীক্ষাটি এখন সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত Isotope Separator On Line Detector (ISOLDE) এ, সার্নের গবেষনাগারে পুনঃপরীক্ষিত হচ্ছে যাতে বিপুল পরিমান বেরিয়াম-১৪৪ উৎপাদন করা যায় এবং আশা করা হচ্ছে এই পরীক্ষায় আমরা পদার্থবিজ্ঞানের বর্তমান দিক-চক্র অতিক্রম করে নতুন নির্দেশনা পাব।