মিশরের পিরামিড প্রত্নতাত্ত্বিক আশ্চর্যের এক অন্যতম উৎস হয়ে রয়েছে। এগুলোর ভেতরের সম্ভাব্য লুকানো ধন-ভান্ডার, বিপদ-আপদ নিয়ে অসংখ্য বই ও চলচ্চিত্র রয়েছে। কিন্তু কথাসাহিত্য সবসময় কথাসাহিত্যিই হয়, সত্যিটা হচ্ছে পিরামিডে অনুসন্ধান চালিয়ে সত্যের আবিষ্কার করা কঠোর পরিশ্রমের কাজ।
এই অনুসন্ধান শুধু যে অনেক সময়সাপেক্ষ তাই নয়, গবেষণা চলাকালীন এর প্রচীন শিল্পকর্মের ক্ষতিও হতে পারে। তবে সুখবর হচ্ছে এসব দুশ্চিন্তার বিষয় দূর করে বিজ্ঞানীরা এর ভেতরের কাঠামো দেখার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। অবশেষে তাঁরা “মিউওন” পদ্ধতির সাহায্যে এ সমস্যার সমাধান করেছেন।
ডিসকভারি নিউজকে এই রোজেল্যা লরেনজি বলেন, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ পিরামিড স্ক্যানের প্রকল্পে এটারই ব্যবহার করছেন। মিউওন নামে পরিচিত একপ্রকার মহাজগতিক কণা ব্যবহার করে এর ভেতরে কি রয়েছে তা স্ক্যান করে দেখা সম্ভব হচ্ছে। এ কাজের জন্য বিশেষ কিছু যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় কারণ এটি স্বাভাবিকভাবেই উপরের বায়ুমন্ডল থেকে কণাগুলো এর উপর বর্ষণ করতে থাকে এবং এসব যন্ত্রের সাহয্যে পিরামিডের গভীরে প্রবেশ করায়। এ গবেষণার সহ-পরিচালক মেহদী তায়বি বলেন- “এক্স-রের মাধ্যমে আমরা যেমন আমাদের কঙ্কাল দেখতে পাই, মিউওন এর প্রাথমিক কণাগুলো ইলেক্ট্রনের তুলনায় ২০০ গুণ বেশি ঝাঁকুনিতে যেকোন কাঠামো এমনকি পর্বতের মতো বড় ও পুরু শিলার মধ্য দিয়েও খুব সহজে প্রবেশ করতে পারে।”
ফারাও নেফেরু দ্বারা নির্মিত কায়রো শহরের ৪০ কি.মি.(২৫ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত ৪,৫০০ বছর বয়সী বেন্ট পিরামিডের উপর গবেষক দলটির করা প্রথম স্ক্যানটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। ভেতরে দেখার জন্যে তাঁরা পিরামিডের নিম্ন কক্ষের ভেতরে একটি ইমালশন ফিল্ম এর ফলক স্থাপন করেন যা দিয়ে মিউওনের প্রেরিত ফলাফল ধরাণ করা যায়। যথেষ্ট পরিমান তথ্য সংগৃহীত হলে ৪০ দিন পর তাঁরা ফলকগুলো সংগ্রহ করেন এবং তা বিশ্লেষণ করেন। বিশ্লেষন শেষে পিরামিডের ভেতরের একটি সম্পূর্ণ মানচিত্র পাওয়া যায়।
তায়বি লরেনজি বলেন, “ঐ ফলক থেকে ১০ মিলিয়ন মিউওন সংগ্রহ করে অনুসন্ধান করা হয়েছে। আমরা মিউওনগুলো গণনা করে এবং কৌণিক অবস্থা অনুযায়ী প্রতিস্থাপন করে তাদেরে একটি চিত্র তৈরী করতে সক্ষম হয়েছি। আর প্রথমবারের মতো মিউওন কণার সাহায্যে একটি পিরামিডের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর চিত্রায়িত করতে পেরেছি। ছবিতে পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে পিরামিডের নিম্নকক্ষের যে স্থানে ইমালশান ফলকটি রাখা হয়েছিল তার ৬০ ফুট (১৮ মিটার) উপরে উচ্চ বা প্রথম কক্ষটি অবস্থিত।”
বিজ্ঞানীদের মিউওন ব্যবহার করে পিরামিডের ভেতরের মানচিত্র আকার চেষ্টা এটাই প্রথম নয়। ১৯৬০ সালের দিকে লুইস আলভারেজ নামে এক বিজ্ঞানী গিজার Chephren পিরামিডের লুকানো কক্ষ অনুসন্ধানে অনুরূপ প্রযুক্তির ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু প্রযুক্তিটি পর্যাপ্ত পরিমাণে দক্ষতা প্রকাশ করতে না পারায় তা থেকে ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে তেমন কিছুই উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।
তবে এবারের অগ্রগতি এটাই যে, স্ক্যান পিরামিড প্রজেক্ট ইমালশনে যে ডিটেক্টর ব্যবহার করা হয়েছে তা অনেক সংবেদনশীল। যার ফলে তাঁরা আগের থেকে অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন।
প্রত্নতত্ত্ববিদের এই কৌশলটিই খুবই প্রয়োজন। কারণ পিরামিডের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় এর দেয়াল না ভেঙ্গে ভেতরের কাঠামো সম্পর্কে জানার এটিই একমাত্র উপায় ।
গবেষকদের পরবর্তী গন্তব্য গিজার গ্রেট পিরামিড খুফু। যার ভেতরের কোন ঢালে হয়তোবা লুকিয়ে থাকতে পারে অনুরূপ কোন কক্ষ কিংবা করিডোর। দলটি কায়রোতে তাদের যে অনুসন্ধান উপস্থাপন করেছেন তা আরও নির্ভূল ও উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও তাঁরা তাদের গবেষণার মাঝপথে আছেন তবুও জানা যায়নি কবে এটা সবার জন্য উন্মুক্ত কারা হবে।
⚫ শফিকুল ইসলাম