জ্যোতির্বিদগণ অবশেষে মহাবিশ্বের অধিকাংশ দৃশ্যমান ভরের সন্ধান পেয়েছেন

0
452

মহাবিশ্বের মোট ভরের বিশাল অংশের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না এটি আমরা জানি। এই হারানো ভরগুলো ব্যাখ্যা করার জন্য ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির ধারনার অবতরণ করা হয়। গণনায় দেখা যায় দৃশ্যমান বা নির্ণয়যোগ্য ভরের তুলনায় অদৃশ্য ডার্ক ম্যাটার বা ডার্ক এনার্জির পরিমান অনেক বেশী। কিন্তু অদৃশ্যমান অংশ দূরের কথা, দৃশ্যমান ভরেরই বিশাল অংশের এতদিন কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিলো না।

তবে অবশেষের প্রথমবারের মতো এই হারানো দৃশ্যমান ভরের নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন গ্যালাক্সির মধ্যবর্তী যে মহাজাগতিক বুনন তার তন্তুসদৃশ উপাদান হিসেবে এই ভরের দেখা মিলেছে।

গ্যালক্সিগুলোর মধ্যবর্তী বিশাল শূন্যতায় জ্যোতির্বিদদের দুটি দল পৃথকভাবে ব্যারিয়নিক পদার্থ নামের এই বস্তুগুলোর উপস্থিতি সনাক্ত করেন। আমরা খালি চোখে বা যন্ত্রের মাধ্যমে যেসব বস্তু দেখি সেগুলো ব্যারিয়নিক পদার্থ। বস্তুর গাঠনিক কণিকা প্রোটন, ইলেক্ট্রন, নিউট্রন এসবই হলো ব্যরিয়নিক কণিকা। এগুলো দিয়েই ব্যরিয়নিক পদার্থ গঠিত হয়।

পদার্থবিদগণ নক্ষত্রের ভর, আকার, এদের মাঝে মাঝে নিহারিকার আদলে বিদ্যমান গ্যাসীয় মেঘ ইত্যাদির ভর নির্ণয় করে এই মহাবিশ্বের মোট দৃশ্যমান বস্তুর ভর নির্ধারণ করেন। কিন্তু এই পরিমান, পটভূমি বিকিরণ হতে অনুমিত মোট যে পরিমান ভর থাকার কথা সাথে মিলে না, বরং কম পাওয়া যায়। শুধু যে কম পাওয়া যায় তা নয়, পটভূমি বিকিরণের মাধ্যমে নির্ণীত ভরের তুলনায় দৃশ্যমান ভর পাওয়া যায় মাত্র ১০ শতাংশ। বাকী ৯০ শতাংশ ভরের হদিস মিলছিলো না এতদিন।

এই হারানো ভরের একাংশ গ্যালাক্সির চারদিকে অনুজ্জল গ্যাসীয় মেঘ হিসেবে ব্যাখ্যা দেওয়া যায় কিন্তু তারপরও ভরের একটি বিরাট অংশ অদৃশ্য থেকে যায়। একটি বড় সমস্যা হলো, এই পদার্থ কোনো ধরনের আলো বিকিরণ করে না। তাছাড়া ঘনত্বেও এটি খুব হালকা, এই কারণে অন্য নক্ষত্রের প্রেরিত আলোতেও বাধা সৃষ্টি করে না, যার ফলে এটিকে সনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়ে।

সাম্প্রতিক সময়ে সমগ্র মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ডার্ক এনার্জির ধারনা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ধারনা করা হয়েছে দৃশ্যমান বস্তুগুলোও একই ভাবে গ্যালাক্সির ফাঁকে ফাঁকে বিশাল ফাঁকা স্থানে খুব হালকা ঘনত্বে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু ধারনা করা এক জিনিস, বাস্তব প্রমাণ পাওয়া ভিন্ন জিনিস।

তাই উভয় দলই এই অনির্ণীত ভর নির্ণয়ের জন্য আলামত খুঁজতে লাগলেন। এই কাজে তাঁরা সানিয়ায়েভ জেলডোভিচ প্রভাব নামের একটি প্রপঞ্চের দারস্থ হলেন। এই প্রভাবে বলা হয়, বিগব্যাং এর অবশেষ হতে যেসব ফোটন বা আলোর কণিকা নির্গত হয় সেগুলো গ্যাসীয় মেঘের ইলেক্ট্রনের মধ্য দিয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে চলাচলের সময় সামান্য শক্তি বৃদ্ধি ঘটে।

এভাবে বর্ধিত শক্তি যুক্ত ফোটন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই হারানো ভরের হদিস পাওয়া যায়। উভয় গবেষক দলই এক জোড়া করে গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণ করে এবং এগুলো হতে প্রাপ্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় গ্যালাক্সিসমূহের মধ্যবর্তী যে ফাঁকা স্থান আছে তার মধ্যে তন্তুসদৃশ অবস্থায় গ্যাসীয় মেঘের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। নতুন ভাবে সনাক্তকৃত গ্যালাক্সি সমূহের মধ্যবর্তী এই শূন্যস্থানের পরিমান আগের গণনার চেয়ে কয়েকগুণ ঘন বলে গবেষণায় উঠে আসে।

তবে ভবিষ্যতে আরো ব্যাপক আঙ্গিকে নেওয়া গবেষণার উদ্যোগ এই সংক্রান্ত আরো বেশী তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আরো বেশী নিখুঁতভাবে এই ভর নির্ণয় করবে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। [Sciencealert অবলম্বনে]

-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক

 

 

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.