পরামাণিক ঘড়ির ধারনা নতুন কিছু না হলেও এবারের ঘড়িটি ইতিপূর্বের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে নিখুঁত ঘড়ি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এটি এই মহাবিশ্বের যেই বয়স তার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশী সময় ধরে সঠিক সময় দিতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, নতুন কোয়ান্টাম গ্যাস ঘড়ি নামের এই ঘড়িটি সঠিক সময় দেওয়ার পাশাপাশি পদার্থ বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর ল্যাবরেটরি এস্ট্রোফিজিক্স (JILA) এর গবেষকগণ স্ট্রনশিয়াম পরমাণু এবং লেজার রশ্মির সমন্বিত সজ্জা ব্যবহার করে এমন একটি ঘড়ি তৈরি করেছেন যা আশা করা হচ্ছে মধ্যাকর্ষণের সবচেয়ে সুক্ষ পরিমান গণনায় কাজে লাগানো যাবে। এই মাধ্যমে এই বলটির সাথে অন্যান্য বলগুলোকে একীভূত করার একটি পথ তৈরি হবে বলে ধারনা পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা ধারনা করছেন মৌলিক বলগুলো আসলে একই বলের ভিন্ন রূপ। এই ধারনাটি অনুযায়ী চারটি মৌলিক বলের মধ্যে তিনটিকে তাঁরা একই বল হিসেবে দেখাতে পারলেও মাধ্যকর্ষণকে এতদিন অন্য বলগুলোর সাথে মেলাতে পারেন নি।
পরমাণুর কম্পন ব্যবহার করে পারমাণবিক ঘড়িগুলো কাজ করে। বর্তমানে প্রচলিত পারমাণবিক ঘড়িগুলো কয়েশ’ কোটি বছরের ব্যবধানে কয়েক সেকেন্ড বিচ্যুত হয়। তবে নতুন উদ্ভাবিত ঘড়িটি ৯০০০ কোটি বছরের ব্যবধানে কেবল এক সেকেন্ড বিচ্যুত হবে। উল্লেখ্য যে এই মহাবিশ্বেরই বয়স হলো ১৪০০ কোটি বছর।
এই ধরনের নিখুঁত যথাযর্থতা পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা স্ট্রনশিয়াম পরমাণুগুলোর ছোটাছুটি এবং সংঘর্ষ থামানোর জন্য এদেরকে অতিশীতল করেছেন। এর ফলে এদের সংঘর্ষ বন্ধ হয়ে বৈশিষ্ট্যসূচক কম্পন যথাযথভাবে পরিমাপ করার সুযোগ তৈরি হয়। এই লক্ষ্যে পরমাণুগুলোকে প্রথমে লেজার নিক্ষেপ করা হয় যার ফলে এটি ফোটন শোষন করে এবং পরবর্তীতে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ফোটন বিকিরণের মাধ্যমে শীতল হয়। তবে এতে সম্পূর্ণ শীতলীকরণ করা যায় না। ফলে বিজ্ঞানীরা বাষ্পীভবনের মাধ্যমে শীতলীকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এই ব্যবস্থায় পরমাণুগুলো পরম শূন্য তাপমাত্রার উপরে এক ডিগ্রির ১০ থেকে ৬০ বিলিয়নভাগের একভাগ তাপমাত্রায় পৌঁছায়।
লেজারের ত্রিমাত্রিক ব্যবস্থায় এই পরমাণুগুলোকে আটকে ফেলা হয়। পরমাণুগুলো এতোই শীতল অবস্থায় থাকে যে এরা একে অপরের উপর প্রতিক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। এগুলো তখন গ্যাসের বদলে কঠিন বস্তুর মতো আচরণ করে। যদিও এই অবস্থায় কঠিন স্ট্রনশিয়ামের তুলনায় পরমাণুগুলো দূরে দূরে অবস্থান করে। এই অবস্থায় পরমাণুগুলো সময় গণনার উপযুক্ত হয়। গবেষকগণ এই অবস্থায় পরমাণুকে লেজার দিয়ে আঘাত করে এদের নিউক্লিয়াসে প্রদক্ষিণরত একটি ইলেক্ট্রনকে উত্তেজিত করেন। যেহেতু ইলেক্ট্রন কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী পরিচালিত হয় তাই উত্তেজিত অবস্থায় এটি কোন শক্তিস্তরে আছে তা কেউ বলতে পারে না, কেবল একটি সম্ভাবনা দেখাতে পারে। ইলেক্ট্রনটির শক্তি মাপার জন্য ১০ সেকেন্ড পর একে আবার লেজার দিয়ে আঘাত করা হয়। এই নতুন লেজার পরিমাপ করে একটি কোন স্তরে আছে এবং লেজারের ফোটনটি পুনরায় নিঃসরিত হয়ে ফেরত এলে এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (১০ সেকেন্ড) এটি কতবার স্পন্দিত হয়েছে তা গণনা করা হয়। কয়েক হাজার পরমাণুর মধ্যে প্রক্রিয়াটি চালিয়ে এবং এদের গড় পরিমাণ নিয়ে সময় নির্ণয় করা হয়। [Live science অবলম্বনে।]
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক