শত শত কোটি বছর আগে চাঁদ দেখতে অনেকটাই ভিন্ন ছিলো। এর পৃষ্ঠ জুড়ে লাভা প্রবাহিত হতো এবং নতুন গবেষণা অনুযায়ী আমাদের এই উপগ্রহটির একটি বায়ুমন্ডলও ছিলো।
Earth and Planetary Science Letters জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি করা হয় ৩৫০ কোটি বছর অতীতের ঘটনাবলী নিয়ে। সেই সময় চাঁদের অভ্যন্তর হতে গলিত শিলা উদগীরিত হয়ে এর পৃষ্ঠ জুড়ে প্রবাহিত হতো। আমরা চাঁদের দিকে তাকিয়ে মারিয়া নামক যে অন্ধকার অঞ্চল দেখি সেটি এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে।
তবে শুধু লাভাই যে চাঁদের অভ্যন্তর হতে উদগীরিত হতো তা নয়। পানি, সালফার এবং অন্যান্য উদ্বায়ী পদার্থও আগ্নেগিরির আগ্ন্যুৎপাতের ফলে উন্মুক্ত হয়ে বের হয়ে আসত। ড. ডেভিড ক্রিং এবং ড. ডেবরা নিধামের গবেষণা অনুযায়ী এই গ্যাসীয় বস্তুগুলো একটি ক্ষণস্থায়ী বায়ুমন্ডল তৈরি করেছিলো যা প্রায় ৭ কোটি বছর স্থায়ী হয়।
এক বিবৃতিতে, ড. নিধাম নাসা মার্শাল মহাকাশ কেন্দ্রে বলেন, “এই সময় যে পরিমান পানি নির্গত হয় তা টাহো হ্রদের বিদ্যমান পানির দ্বিগুণ। যদিও এই বাষ্পের বেশ খানিকটা মহাশূন্যে হারিয়ে যায় তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ চাঁদের দুই মেরুতে জড়ো হওয়ার সুযোগ পায়। তার মানে, আমরা এখন চাঁদের দুই মেরুতে যে উদ্বায়ী বস্তু সঞ্চীভূত দেখি তা একদা চাঁদের পৃষ্ঠের অভ্যন্তরে ছিলো।”
মঙ্গলের দুই মেরুতে এবং এর পৃষ্ঠের শিলা সংলগ্ন অবস্থায় পানি আবিষ্কৃত হয়েছে। বিশেষ করে দুই মেরুতে সঞ্চিত পানি বেশ আগ্রহোদ্দীপক। এরা সূর্যের আলো হতে স্থায়ী ভাবে ছায়াবৃত হয়ে আছে কাজেই ধরে নেওয়া যায় আদিম বায়ুমন্ডলের আলামত এই সঞ্চিত পানির অভ্যন্তরে চাপা পড়ে আছে।
লুনার এন্ড প্ল্যানেটারি ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী, ড. ক্রিং বলেন, “এই গবেষণা নাটকীয়ভাবে চাঁদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলে দিয়েছে। একদা যেটিকে বায়ুহীন উষঢ় মনে করা হয়েছিলো যেটি বর্তমানে মঙ্গলের বায়ুমন্ডলের চেয়েও উল্লেখযোগ্য একটি বায়ুমন্ডলের আবর্তে ছিলো।”
১৯৭১ এবং ১৯৭২ সালে মঙ্গলাভিযানের সময় নভোচারীগণ যেসব শিলার নমুনা নিয়ে এসেছিলেন সেগুলো গবেষণা করেই এই তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এই শিলার নমুনাগুলো চাঁদের ইতিহাস স্ফটিকাকারে সংগ্রহ করে রাখে এবং এ থেকে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন কখন এগুলো সৃষ্টি হয়েছে কিংবা চাঁদের আগ্নেয়গিরি হতে কী ধরনের গ্যাস নির্গত হয়।
এই গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য ভবিষ্যৎ চন্দ্রাভিযানের জন্য কাজে লাগবে এবং সেই সাথে ধারনা পাওয়া যাবে মঙ্গলে কী ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক