অর্ধেক ম্যাগমার সমুদ্র, অর্ধেক চিরস্থায়ী রাত

0
390
চিত্রঃ গ্রহের যে অংশটি সূর্যের দিকে মুখ করে আছে সে অংশটির পুরোটাই গলিত ও উত্তপ্ত লাভাসদৃশ।

পৃথিবী সদৃশ বহির্জাগতিক গ্রহ অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞানীরা এবার এমন একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন যা অনেকটা অদ্ভুত ও পরাবাস্তব। এর অদ্ভুত আচরণ সাধারণ কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বিচিত্র এই গ্রহের অস্তিত্বের প্রমাণ। গ্রহের নাম রাখা হয়েছে 55 Cancri e। দ্বিমুখী এই গ্রহের অর্ধেক অংশে বিরাজ করে চিরস্থায়ী রাত আরেক অংশে টগবগ করে তরল ম্যাগমা। উল্লেখ্য ম্যাগমা হচ্ছে গ্রহজাত পদার্থের উত্তপ্ত তরলিত অবস্থা। পৃথিবীরও তরল ম্যাগমা আছে, তবে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। ভূপৃষ্ঠের মোটা স্তর পৃথিবীর অভ্যন্তরের ম্যাগমাকে ঢেকে রাখে। এর ফলে উত্তপ্ত ম্যাগমার নারকীয় পরিবেশ থেকে আমরা বেঁচে আছি। এই ম্যাগমাগুলোর অতি কিঞ্চিত পরিমাণ ‘লাভা’ হয়ে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে আগ্নেয়গিরির মাধ্যমে।

55 Cancri e-তে পরিবেশ পৃথিবীর মতো শিথিল নয়। এই গ্রহটি যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে তার খুব কাছে অবস্থান করে বলে প্রচণ্ড উত্তাপ এসে পড়ে এর উপর। ফলে টগবগ করে ফুটতে থাকে গ্রহটি। তার উপর এর নক্ষত্রটি তুলনামূলকভাবে বেশি শক্তিশালী, তাই তাপ উৎপন্ন হয় বেশি। ফলাফল হিসেবে গ্রহটির তাপমাত্রা বেড়ে যায় আরো। গবেষকদের ধারণা এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই গ্রহকে নিয়ে আরো একটি গবেষণা বলছে যে এর বায়ুমণ্ডল থাকতে পারে এবং ঐ বায়ুমণ্ডলে বিষাক্ত সায়ানাইড গ্যাসের আনাগোনা থাকতে পারে। এসবের সমাবেশের কারণে গ্রহটিকে একদম নরকতুল্য বলা যায়।

গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৪১ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। বিজ্ঞানীদের ধারণা এই গ্রহটিতেই হীরক রূপভেদে সবচেয়ে বেশি কার্বন আছে। কার্বনগুলো হীরকে রূপান্তরিত হবার পেছনে এর অধিক তাপমাত্রাই দায়ী।

চিত্রঃ গ্রহের যে অংশটি সূর্যের দিকে মুখ করে আছে সে অংশটির পুরোটাই গলিত ও উত্তপ্ত লাভাসদৃশ।
চিত্রঃ গ্রহের যে অংশটি সূর্যের দিকে মুখ করে আছে সে অংশটির পুরোটাই গলিত ও উত্তপ্ত লাভাসদৃশ।

55 Cancri e তার আবর্তনকারী নক্ষত্রের খুব নিকটে অবস্থান করে ঘুরে বলে পুরো কক্ষপথকে একবার আবর্তন করতে খুব অল্প সময় লাগে। মাত্র ১৮ ঘণ্টায় একবার করে আবর্তন সম্পন্ন করে এটি, যা পৃথিবীর হিসেবে একদিনের চেয়েও কম। এই হিসেবে পৃথিবীর ১ বছর ঐ গ্রহের ৪৮৭ বছরের সমান।

গ্রহটির এমন দ্বিমুখী অবস্থানের পেছনে এর নক্ষত্রের প্রভাব রয়েছে। নক্ষত্রটির মহাকর্ষ ক্ষেত্র খুব শক্তিশালী হওয়াতে গ্রহটি একে কেন্দ্র করে এমনভাবে ঘুরে যে এর একটি পাশই সবসময় নক্ষত্রের দিকে মুখ করে থাকে। ফলে ঐ অংশটি সবসময় আলোকিত ও উত্তপ্ত থাকে এবং অপর পাশটি সবসময় অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে; অনেকটা আমাদের চাঁদের মতো। চাঁদেরও একপাশ আমরা কখনোই দেখতে পাই না, সবসময় একটা দিকই দেখা যায় পৃথিবী থেকে। গ্রহটির কাল্পনিক আবর্তন প্রক্রিয়া দেখে নিন এই ভিডিও থেকে

গ্রহটির অন্ধকার তথা শীতল অংশটিতে উত্তাপ কিছুটা কম। কম হলেও সেখানেও অনেক উত্তাপ বিদ্যমান। ঐ অংশে উদগিরিত তরল লাভা কঠিন আকৃতি লাভ করে আছে যত্রতত্র।

তারপরেও ৪১ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই গ্রহটি সম্বন্ধে আরো অনেক কিছু জানার আছে। পাশাপাশি আরো নিখুঁত তথ্য জানতেও আরো গবেষণার প্রয়োজন।

⚫ সিরাজাম মুনির

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.