বাণিজ্যিকভাবে কার্বন নিয়ন্ত্রণ কারখানার যাত্রা শুরু

0
528

সুইজাল্যান্ডের কোম্পানী ক্লাইমওয়ার্কস প্রথম বারের মতো একটি কার্বন শোষক প্লান্ট চালু করেছে যা বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড পৃথক করবে। তারা আশা করছে ২০২৫ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে বিশ্বব্যাপী যে কার্বন ডাইঅক্সাইডের সৃষ্টি হয় তার এক শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করার মতো প্রযুক্তি তারা অর্জন করতে পারবে।

কোম্পানীটি প্রতি বছর বায়ুমন্ডল থেকে ৯০০ টন CO2 সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হবে, যেখানে ক্লাইমেট চেঞ্জ প্যানেল নির্ধারণ করেছে বৈশ্বীক উষ্ণতা রোধে অন্তত ১০ গিগাটন CO2 কমাতে হবে।

সুইজাল্যান্ডের হীনিল গ্রামের একটি আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ ভবনের ছাদে সরাসরি বায়ু বন্দীর এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে একটি ছাকনির মাধ্যমে বায়ুমন্ডলীয় CO2 শোষণ করে থাকে। ছাকনি যখন CO2 –র সাথে সম্পৃক্ত হয় তখন এটি এক প্রকার গ্যাস নিঃসরণের জন্য ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত হয়। আর এই অবস্থায় CO2 কে গ্রিনহাউজ গ্যাসে রূপান্তরিত করে পরবর্তীতে তা টমেটো, শশার মতো বিভিন্ন সবজি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। কোম্পানীর ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্যমতে এই কার্বন লেটুস পাতার উৎপাদন ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম।

এক শতাংশ কার্বন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অংশ হিসেবে বর্তমান ইউনিটের অনুরূপ আড়াই লক্ষ প্লান্টের প্রয়োজন পড়বে। যদিও এই কার্বন ডাইঅক্সাইড অন্যান্য কাজে পুনর্ব্যবহার করা হয় তবুও এই প্লান্ট কোন বিপরীত নির্গমন করছেনা। বিপরীত নির্গমন অর্জনের লক্ষ্যে অপসারণকৃত CO2 কে ভূগর্ভস্থ চেম্বারে ধরে রেখে স্থির করতে হবে কিংবা শীলার মতো বস্তুতে রূপান্তর করতে হবে।

ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি কার্বন ডাইঅক্সাইড আটক করার এবং জমিয়ে রাখার কাজে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে প্লান্টটি CO2কে বায়ুমন্ডলে মিশে যাওয়ার পরিবর্তে তাকে একটি নিয়মের মধ্যে বন্দি করা হচ্ছে। এছাড়াও কোম্পানীটি সংগৃহীত CO2কে বিভিন্ন কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী শিল্পে বিক্রি করার অথবা পুনর্বব্যহারযোগ্য হাইড্রোকার্বন জ্বালানী তৈরীর সম্ভাবনা দেখছেন।

বায়ু থেকে CO2 আটক করা একটি বহুল বিতর্কিত বিষয়। এমন ধারনাও রয়েছে যে প্রতি টন CO2 ধরে রাখতে ৬০০ ডলার খরচ হবে। কিন্তু ক্লাইমওয়ার্কস কোম্পানিটি সে বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের ধারনা এই খরচ তারা প্রতি টনে ৪০০ ডলারে নামিয়ে আনতে পারবে।

কিন্তু এই প্রযুক্তিটি এর খরচের চেয়েও বিতর্কিত। গত বছর গ্লেন পিটারস সহ কিছু নেতৃস্থানীয় জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সায়েন্স জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন এবং যুক্তি প্রদান করে বলেন, এই প্রযুক্তি সামগ্রিক নির্গমনের হার হ্রাস করার চেয়ে বহু দূরে রয়েছে এবং এটি কিছু বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আত্মতুষ্টিতে ভোগাবে যারা বিশ্বাস করে ভবিষ্যতের কোন প্রযুক্তি জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে আসবে।

তবে ক্লাইমওয়ার্কসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টোফ গিয়াবাল্ড জানান এই প্রকল্প সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমবর্ধমানভাবেই স্পষ্ট, তাই এই নির্গমন রোধে সম্ভাব্য সকল সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে।

[স্মিথসন- অবলম্বনে]

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.