বিষাক্ত খনি থেকে পাওয়া ছত্রাক দিয়ে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন

0
262

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানার একটি বিষাক্ত খনি থেকে দুটি ভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক পাওয়া গিয়েছে এবং গবেষণার পর দেখা যায় এই দুটি ছত্রাকের যৌগ সংশ্লেষণের যুগলবন্দী চারটি এন্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া Methicillin-resistant Staphylococcus aureus (MRSA) –র বংশবৃদ্ধি রোধ করে তাদের ধ্বংস করে।

পরিচিত শ্রেণীর অ্যান্টিবায়োটিকে এরকম যৌগ পূর্বে কখনো দেখা যায়নি এবং এটা ইতিমধ্যেই প্রমাণীত হয়েছে যে, এই ছত্রাকের যৌগ এনথ্রাক্স ও স্ট্রেপটোকোকাল ফ্যারিঞ্জাইটিস বা স্ট্রেপ থ্রোট রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকরীভাবে ব্যবহার করা যায়।

ছত্রাক দুটিকে মন্টানার ৫৪০ মিটার গভীর একটি তামার খনি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে যা পরিত্যাক্ত অবস্থায় খোলা এবং পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে লেবুর রসের মতো এসিডিক ও আর্সেনিকযুক্ত হয়ে পড়েছিলো। বিষাক্ত বর্জ্যে পরিপূর্ণ এই গর্তটি খুবই খুবই বিপজ্জনক ছিলো যে দেশান্তরী হয়ে আসা বিভিন্ন পাখিদের জন্য এটি মৃত্যু ফাঁদ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে। কয়েক মাস আগে তুষার ঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে হাজার হাজার পাখি এই গর্তের ধাতু মিশ্রিত পানিতে আশ্রয় নিয়েছিলো।

১৯৯৫ সালের গ্রীষ্মে এই গর্তে ভাসতে থাকা ৩৪২ টি পাখির মরদেহ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এদের দেহের ভেতর অংশে তামা, ক্যাডমিয়াম এবং আর্সেনিকের উচ্চ মাত্রার প্রভাবে ক্ষত হয়ে যাওয়া সহ পুড়ে গিয়েছে।

কিন্তু সবকিছুই এই গর্তের মৃত্যু ফাঁদে ধরা পড়েনি। এখানেই একপ্রকার ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়ার অদ্ভূত প্রজাতির আবির্ভাব হয়েছে। আর গত দুই দশক ধরে মন্টানা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ আন্দ্রে এ. স্টিয়ারল এবং ডোনাল্ড বি. স্টিয়ারল এই অস্বাভাবিক হার্ডি রাসায়নিক যৌগ বিশ্লেষণ করে যাচ্ছেন।

এ পর্যন্ত তাঁরা একটি ছত্রাকের মাঝে ক্যান্সার নিরোধের গুণাবলি চিহ্নিত করতে পেরেছেন যা ট্যাক্সোমিক্স এন্ডরেনা নামে পরিচিত এবং সেইসাথে এক প্রকার প্রাণীর অস্তিত্ব পেয়েছেন যা অণু সংশ্লেষণের মাধ্যমে পরিপক্কতা রোধে সক্ষম হয়।

এবার তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যদি দুটি পেনিসিলিয়াম ছত্রাকের প্রজাতিকে একসাথে বড় করা হয় তাহলে কি ঘটতে পারে। অতঃপর মাত্র ছয় দিন পর দেখতে পেলেন যে, অদ্ভূত এই হ্রদটি একটি নতুন যৌগ উৎপাদনে সহযোগীতা করছে যা এটা নিজে নিজে তৈরী করতে পারে না।

এই যৌগগুলির আণবিক কাঠামো ম্যাক্রোলাইড নামে পরিচিত একটি অ্যান্টিবায়োটিকের সমতুল্য কাঠামোর অনুরূপ এবং গবেষকরা দেখলেন যে এই নতুন যৌগগুলির একটি যাকে বার্কলেল্যাক্টন এ – নামে ডাকা হয় তা কয়েকটি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করেছে আর এরূপ ফলাফল তারা আগে কখনো দেখেনি।

গবেষকগণ জানান, “গবেষনায় দেখা যাচ্ছে যে, অন্যান্য ম্যাক্রোলাইড অ্যান্টিবায়োটিকের মতো বার্কলেল্যাক্টন এ –প্রোটিন সংশ্লেষণে বাধা দেয়না যা এর অ্যান্টিবায়োটিক কার্যক্রমের উত্তম অবস্থাকে নির্দেশ করে।”

যখন তারা বার্কলেল্যাক্টন এ –এর গঠন প্রণালী পর্যবেক্ষণ করে দেখেন এর মাঝে শর্করার অভাব রয়েছে যা একে অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিক যৌগ থেকে আলাদা করেছে।

নতুন এই অ্যান্টিবায়োটিক কিভাবে কাজ করে তা এখনো পরিষ্কার নয়, তবে এর মাধ্যমে এখনকার অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী জীবাণুগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আমরা অনেক কিছুই করতে পারবো। এসব জীবাণুর বর্তমান প্রবনতা চলতে থাকলে আগামী এক দশকে লক্ষ লক্ষ মানুষের মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। [সায়েন্স এলার্ট- অবলম্বনে]

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.