ফুলের পরাগায়ন করবে ক্ষুদ্র রোবটিক পতঙ্গ ড্রোন

0
609

জাপানের গবেষকরা পতঙ্গের সমান ক্ষুদ্র এক ধরনের রোবট তৈরি করেছেন যা দিয়ে কৃত্রিমভাবে ফুলের পরাগায়ন করা যাবে। কোনো স্ত্রী ফুলকে ফলে পরিণত হতে হলে তার মধ্যে পুরুষ ফুল দ্বারা নিষেক বা পরাগায়ন সম্পন্ন হতে হয়। পরাগায়নের কাজটি হয়ে থাকে পানি, বাতাস, পতঙ্গ ইত্যাদির মাধ্যমে। পতঙ্গের মাধ্যমেই সাধারণত পরাগায়ন হয়ে থাকে বেশি। পতঙ্গরা ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে। এই সময় এক ফুলের পরাগরেণু পতঙ্গের পায়ে লেগে অন্য ফুলে পতিত হয়।

কিন্তু পতঙ্গ না থাকলে কী হবে? কোনো কীটনাশক ব্যবহার করার কারণে সব পতঙ্গ ধ্বংস হয়ে গেলে কিংবা প্রাকৃতিক কোনো কারণে পতঙ্গের স্বল্পতা দেখা দিলে তা ফসলের উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে। এমতাবস্থায় সমাধান হতে পারে এই রোবটিক পতঙ্গ ড্রোন। ফসলের মাঠে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক পতঙ্গ না থাকলেও এই কৃত্রিম পতঙ্গ পরাগায়নের কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।

এটি আকৃতিতে পতঙ্গের সমান। গায়ের নীচের দিকে নমনীয় একটি অংশ থাকে। এই অংশে নমনীয় প্রাণীজ লোম লাগানো থাকে। লোমের গায়ে জেলি জাতীয় চটচটে পদার্থ মাখানো থাকে। এই পদার্থ খুব বেশি আঠালোও নয় আবার খুব বেশি পাতলাও নয়। সামান্য চটচটে, পরাগ রেণু সংগ্রহ করতে পারবে কিন্তু এত বেশি আঠালো নয় যার ফলে এটি কোনোকিছুতে আটকে যাবে। প্রাকৃতিক পতঙ্গের পায়ে যেমন পরাগ রেণু লেগে অন্য ফুলে যায় অনেকটা তেমন। কৃত্রিম এই পতঙ্গ আকৃতিতে চার সেন্টিমিটার (দেড় ইঞ্চির চেয়ে সামান্য বেশি)।

চিত্র: কৃত্রিম পতঙ্গের গায়ে নমনীয় লোম। ছবি: ইজিরো মিয়াকো।

টোকিওর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব এডভান্সড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির এক দল গবেষক এই পতঙ্গের ডিজাইন করেছে। তারা এর নাম দিয়েছে কৃত্রিম পরাগ (artificial pollinator)। তাদের গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার বিস্তারিত প্রকাশ করেছে কেম নামের একটি জার্নালে। তবে তারাই যে সর্ব প্রথম এরকম পতঙ্গ তৈরি করেছে তা নয়, এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা এরকম কৃত্রিম পতঙ্গ তৈরি করেছিল। ২০১৩ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক RoboBee নামে একটি ক্ষুদ্র পতঙ্গ তৈরি করেছিল যেটি স্থির তড়িৎ ব্যবহার করে সমতল কোনো পৃষ্ঠে বসতে পারে।

তবে এটি এখনো বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করে দেখা হয়নি। ল্যাবের ভেতরে কয়েকটি ফুলের মাঝে এই পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে মাত্র। তার উপর এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হয় রিমোটের মাধ্যমে। সত্যিকার পতঙ্গদের মতো উড়ে উড়ে ফুলের সঠিক অবস্থানে যেতে পারে না। এরকম হলে তো বলা যায় এটি তেমন ভালো কোনো সমাধান নয়। মানুষ খেটে খেটে রিমোট টিপে টিপে প্রতিটি ফুলে ভ্রমণ করবে, যা ‘খাজনা থেকে বাজনা বেশি’ প্রবাদের মতো। বলা যায় একদম প্রাথমিক অবস্থায় আছে এটি।

তবে এটির মাঝে অনেকে বেশ সম্ভাবনা দেখছেন। সবকিছুই তো প্রাথমিক অবস্থায় সমস্যা সম্বলিত থাকে। ভালো মানের ক্যামেরা, জিপিএস ট্র্যাকিং পদ্ধতি এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে যদি এদেরকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা যায় তাহলে সহজেই এই সমস্যা উৎরে আসা যাবে। জিপিএস এর মাধ্যমে ফুলের সাপেক্ষে নিজের অবস্থান আর ক্যামেরা ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে ফুলকে শনাক্ত করে পরাগ রেণু স্থানান্তর করতে খুব বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হতে নিতে হবে না। একদিন হয়তো দেখা যাবে মানুষ এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অধিকতর ফসল উৎপাদন করছে। [The VergeFLScience, Science Mag অবলম্বনে]

– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.