ফুসফুস ছাড়াই বেঁচে থাকার এক অবিশ্বাস্য কাহিনী

0
447

মানবদেহে মোট ৭৯ টি অঙ্গ রয়েছে। এর মাঝে কিছু অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জীবনধারণের জন্য অতীব জরুরী। এদের মধ্যে ফুসফুস উল্লেখযোগ্য একটি অঙ্গ। শ্বসন প্রক্রিয়ায় ফুসফুস প্রশ্বাসের সময় দেহে অক্সিজেনের প্রবেশ ও নিশ্বাসের সময় কার্বন ডাই অক্সাইড দেহ থেকে নির্গমনের কাজ করে থাকে। তাই ফুসফুস নিশ্চল হওয়ার সাথে সাথেই শ্বসন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। যার ফলে কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই একজন মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়বে।

তবে সম্প্রতি চিকিৎসকরা এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন। কানাডার টরন্টো হাসপাতালের ডাক্তাররা একজন মহিলার রোগাক্রান্ত ২ টি ফুসফুস অপসারণ করেন এবং কৃত্রিম ফুসফুসের সাহায্যে তাকে ছয় দিন বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হন। তারা সেই সময়ে নতুন কোন দাতার ফুসফুস সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এমন অপারেশনের নজির এই প্রথম।

৩২ বছর বয়সী সেই সৌভাগ্যবতী মহিলার নাম মেলিসা বেনোইট। তিনি পেশায় একজন নার্স। তিনি ছোটবেলা থেকেই  সিস্টিক ফাইব্রসিস নামক ফুসফুসের সংক্রমণ এবং শ্বাস প্রশ্বাসে ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী এক ধরনের বংশগত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। বিগত বছরের এপ্রিল মাসে হঠাৎ একদিন শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় তাকে আশংকাজনক অবস্থায় হসপিটালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তাররা তার অবস্থা খারাপ দেখে প্রথম অবস্থায় তার মৃত্যুর জন্য কয়েক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। পরক্ষনেই তারা তাকে বাঁচানোর শেষ একটা চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নেন । এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ১৩ জন চিকিৎসকের একটি দল ৯ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে বেনোইটের ২টি ফুসফুস তার দেহ থেকে অপসারণ করেন। তার প্রতিটি ফুসফুস ছিল কফে পরিপূর্ণ এবং ফুটবলের মত শক্ত।

ফুসফুস অপসারণের কিছু সময় পরে আশ্চর্যজনকভাবে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি দেখা যায়। অপারেশনের ২০ মিনিটের মধ্যে তার রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে। তখন চিকিৎসকেরা তার রক্তচাপের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত ঔষধ বন্ধ করে দেন। সেই সময়ে শুধুমাত্র দেহে রক্ত সঞ্চালনের জন্য তারা একটি পাম্প ব্যাবহারের পরিকল্পনা করেন।

একটি ছোট কৃত্রিম ফুসফুস বেনোইটের হৃৎপিণ্ডের সাথে যুক্ত করা হয়। বাকি যন্ত্রগুলো তার শরীরে অক্সিজেনের প্রবেশ ও রক্ত সঞ্চালনে কাজ করতে থাকে। কিন্তু দাতার ফুসফুস পাওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবে কতক্ষণ বেনোইতকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে তা কেউ জানত না। কারণ সেই সময় উপযুক্ত দাতার  ফুসফুস বেশ দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়। বেনোইটের চিকিৎসক কেশবজী বলেন, “আমরা তখন জানতাম না কবে নাগাদ কোন দাতার ফুসফুস পাওয়া যাবে। হতে পারে সেটা এক দিন অথবা এক মাস।“

তবে সৌভাগ্যক্রমে ৬ দিন পর একজোড়া ফুসফুসের সন্ধান মিলল। পরবর্তীতে এক সফল অস্ত্রোপচারের দ্বারা বেনোইটের দেহে সেই ফুসফুসজোড়া প্রতিস্থাপন করা হয়।

অপারেশনের পরে

অপারেশনের পর ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী হয়ে থাকার ফলে বেনোইট বসা ,দাঁড়ানো এমনকি মাথা উঁচু করার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন। তবে মাসখানেক আগে তিনি কোন লাঠি বা হাঁটার কোন সহায়ক ডিভাইস ছাড়াই হাটতে পারছেন। এত আশার মাঝেও কিছুটা সংশয় এখনও রয়েছে। এই অগ্নিপরিক্ষায় বেনোইত উত্তীর্ণ হলেও এতে তার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে তিনি এই যাত্রাতেও হয়ত বেঁচে যেতে পারেন। কারণ কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তার মা তাকে কিডনি প্রদান করবেন বলে জানা গেছে।

বেনোইটকে এই অপারেশনের কথা বলা হলে প্রথমে তিনি তা বিশ্বাসই করেননি। তিনি বলেন, “প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছিল সেটা বুঝতে আমার বেশ সময় লেগেছে।“ তার কাছে এটা কোন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর ঘটনা বলে মনে হয়। ডাক্তাররা তখন পুরো ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে তাকে বলেন। সমস্ত ঘটনা শোনার পর বেনোইটও বুঝতে পারেন, তাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে  ফিরিয়ে আনা হয়েছে। [Futurism এবং The Guardian অবলম্বনে]

বিস্ময়কর এই নারী সম্পর্কে আরও জানতে নিচের ভিডিও লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

-নাসরুল্লাহ মাসুদ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.