বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীরা মারাত্মক সব গ্রহাণু এবং উল্কাপিন্ডের সম্ভাব্য আঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পৃথিবী কতটা অপ্রস্তুত সে সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছেন। মহাশূন্যের এসব শিলার আগমন পর্যবেক্ষণে আমরা আগের চেয়ে অনেক সচেতন হলেও এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে আঘাত হানার কয়েক দিন কিংবা কয়েক সপ্তাহ আগেই কেবল জানতে পারি যে কিছু একটা আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। সৌভাগ্যবশত এখন পর্যন্ত এমন কিছু আমরা দেখতে পাইনি যা পৃথিবীকে আঘাত করতে পারে। কিন্তু কি হতে পারে যদি এমনটি ঘটে?
অবশেষে হোয়াট হাউজ এরকম পরিস্থিতির প্রস্তুতি হিসেবে “National Near-Earth Object Preparedness Strategy” নামের একটি পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। এই দলিলটি প্রস্তুত করেছেন ইন্টারএজেন্সি ওয়ার্কিং গ্রুপ (DAMIEN) এবং এটি গত মাসে হোয়াইট হাউজের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতি অফিসের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।
দলিল অনুযায়ী পরিকল্পনাটি হচ্ছে, “পৃথিবীর নিকটবর্তী বস্তু (NEO) এর বিপত্তিকর প্রভাব মোকাবেলা এবং বিদ্যমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পদের সমন্বয় সাধন করে আমাদের জাতি প্রস্তুতি বৃদ্ধি করা।”
২০০৩ সালে ১৭ মিটার উল্কা রাশিয়ার চেলিয়াবিংক্সে আঘাত হেনে ১০০ ও বেশী আনুষকে আহত করে অথবা মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ১ কিলোমিটার আকারের একটি বস্তু পৃথিবীর খুব কাছাকাছি চলে এসছিলো যাকে থামিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে এবং যার জন্য আমরা একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। একবার কল্পনা করে দেখুন এর সবই ছিলো এই ঘটনার অংশ।
আমরা যখন এনইও সম্পর্কে কথা বলি তখন গ্রহাণুর বা ধুমকেতুর উদাহরণ দিয়ে থাকি যাদের একটি কক্ষপথ রয়েছে। আর এর মাধ্যমেই এগুলো পৃথিবীর কক্ষপথে বা এর কাছাকাছি চলে আসে। এই বস্তুগুলো কয়েক কিলোমিটার চওড়া বা কয়েক মিটার হলেও এরই একটি ডায়নোসরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলো।
হোয়াইট হাউজের প্রকাশিত দলিল থেকে নেয়া একটি গ্রাফে দেখা যায় বর্তমানে পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা বস্তুগুলো (সবুজ দন্ড), বর্তমান হিসেবে পৃথিবীর বাইরে আরও কতগুলো বস্তু অবস্থান করছে (লাল সারি) এবং আরও কতগুলো জরিপের প্রয়োজন রয়েছে (নীল সারি)।
উপরের লাল শব্দগুলো দেখাচ্ছে কি পরিমাণ ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে প্রতিটি স্তরে।
সমগ্র কৌশল ৭ টি প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে বিভক্ত করা হয়েছে। নিচে তা তুলে ধরা হলঃ
১। NEO শনাক্তকরণ, নজরদারি এবং চিত্রায়ন ক্ষমতা বৃদ্ধি।
২। NEO-র পথবিচ্যুতি এবং এদের ভাঙ্গণ পদ্ধতি উন্নত করা।
৩। আকার নির্দিষ্টকরণ, এদের পূর্বাভাস এবং তথ্য সমন্বয়ের কাজ উন্নত করা।
৪। NEO-র প্রভাবের পরিস্থিতির জন্য জরুরী পদ্ধতির বিকাশ।
৫। NEO-র প্রভাব প্রতিক্রিয়া এবং পুনরুদ্ধার পদ্ধতি স্থাপন।
৬। উদ্দেশ্য সাধনের উপায় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা স্থাপন।
৭। সমন্বয় ও যোগাযোগ প্রোটোকল এবং প্রান্তিক মান স্থাপন।
অবশ্যই একটি কোশল দলিল দিয়ে আগাত এনইও থেকে আমাদের রক্ষা করা যথেষ্ট নয়। প্রকৃত সমস্যাটি হচ্ছে যথেষ্ট সময় হাতে রেখেই আমরা গ্রহাণু শনাক্ত করতে পারছিনা এবং দেখা মাত্রই মোকাবেলা করার মতো একাদিক পদ্ধতি নেই। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে অবশেষ হোয়াইট হাউজ একটি বড় সমস্যাকে মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
তবে একটি ভাল খবর হচ্ছে ‘সম্ভাব্য বিপজ্জনক গ্রহাণু’ আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাবনা ০.০১ শতাংশরও কম। সুতরাং এ নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। তবে কোন ঘটনা ঘটার আগে পূর্ব প্রস্তুতি নেয়াই উত্তম। [সাইন্সএলার্ট-অবলম্বনে]
–শফিকুল ইসলাম