এ বছর এপ্রিলে স্টিফেন হকিং সহ একদল বিজ্ঞানী আন্তনাক্ষত্রিক মহাশূণ্য বিষয়ক গবেষণার ঘোষনা দিয়েছিলেন লেজার চালিত মহাকাশযানের মাধ্যমে। এই মহাকাশযানের আকার হবে একটি ডাকটিকিটের সমান এবং আমাদের নিকটবর্তী নক্ষত্র আলফা সেন্টরাইয়ের উদ্দেশে চালিত করা হবে।
Starchip নাম দেয়া এই মহাকাশযানে যদি আলোর গতির একপঞ্চমাংশ গতিও সৃষ্টি করা যায় তাহলেও তা আলফা সেন্টারাইয়ের কাছে পৌঁছাতে সময় লাগবে বিশ বছর। কিন্তু এই অতিক্ষুদ্র, অতিবিপন্ন মহাকাশযানটিতে নানাবিধ ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম কীভাবে এই দীর্ঘ সময় টিকে থাকবে?
স্টিফেন হকিংএর নেতৃত্বাধীন Breakthrough Starshot প্রোজেক্ট এবং Korea Institiute of Science and Technology এর তথ্য অনুযায়ী এই প্রকল্পে সবচেয়ে বড় বাধা মহাজাগতিক বিকিরণ। মহাকাশের নানাবিধ বিকিরণ শুধু নভোচারীদেরই ক্ষতি করে না বরং পরিকল্পনাধীন ন্যানো-মহাকাশযানটির সিলিকন ডাই অক্সাইড স্তরেরও ক্ষতি সাধন করবে বলে মনে করা হয়। এর অর্থ হচ্ছে ২০ বছরব্যাপী অভিযানে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই এর যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে যাবে।
তাহলে এর সমাধান কী? গবেষকদলটির হিসেব অনুযায়ী অভিযানটি এমন একটি পথে পরিচালিত করতে হবে যেন এর উপর আপতিত বিকিরণের মাত্রা সর্বনিন্ম থাকে। কিন্তু এই পথে পরিচালিত করতে গেলে পথের দৈর্ঘ্য হয়ে যেতে পারে মাত্রাতিরিক্ত, যা আবার সময় বেশী লাগাতে বিকিরণের মুখেও বেশি পড়বে এবং একইভাবে মহাকাশযানের ক্ষতি করবে।
আরেকটি ব্যবস্থা হতে পারে নাজুক ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রগুলোকে বর্ম তৈরি করে দেয়া। কিন্তু এই অতিরিক্ত ওজনের কারণে মাহাকাশযান ধীর হয়ে পড়বে এবং সময় বেশী লাগার কারণে একইভাবে বিকিরণের মুখেও বেশী পড়বে। প্রাথমিকভাবে যানের গতি যেমন নির্ধারণ করা হয়েছে এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে গেলে সেই গতি চালু রাখা যাবে না।
তবে তৃতীয় একটি বিকল্প আছে, যার মাধ্যমে এইসব সমস্যারই সমাধান হতে পারে। যদি আমরা এমন একটি ন্যানো-যান তৈরি করতে পারি যা নিজেই নিজের যন্ত্রপাতির ক্ষতি সারিয়ে তুলতে পারে তাহলে আমরা বিকিরণের মধ্যেও যানটিকে আলফা সেন্টরাইতে পাঠাতে পারব। কয়েক বছর ধরেই নিজেই নিজের ত্রুটি সারিয়ে তোলার মতো একটি ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থা সম্বন্ধে নাসা অবগত আছে। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছিলো Korea Institiute of Science and Technology এর গবেষণাগারে।
ধারনাটি হলো, মহাকাশ-যানের অভ্যন্তরীন ইলেক্ট্রনিক চিপটিকে কয়েক বছর অন্তর বন্ধ করে দেওয়া যেই মূহুর্তে এটি নিজেকে সারিয়ে তুলবে। যথেষ্ট পরিমানে নিরাময় হলে চিপটিকে আবার চালু করা হবে। এভাবে একটি চিপকে ১০,০০০ বার সারিয়ে তোলা যায় বলে গবেষণাগারে দেখা গেছে।
তবে এতকিছুর পরেও যেকোন কারণে যেকোনো সময় চিপটির কার্যকারীতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা আগে থেকে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। [Science Alert অবলম্বনে]
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক