সাধারণভাবে আমরা যখন ব্যাটারী ফেলে দেই, তখন তা অন্যান্য আবর্জনার সাথে ফেলি না, বা ফেলা ঠিক নয়। এর কারণ, ব্যাটারী পরিবেশের জন্য বেশ ক্ষতিকর। ব্যাটারী বিশেষ করে রিচার্জেবল ব্যাটারীগুলোতে সাধারণত ভারী ধাতু যেমন: ক্যাডমিয়াম, কোবাল্ট, লেড প্রভৃতি থাকে যা পরিবেশের জন্য মোটেও ভালো কিছু নয়। এসব ভারী মৌলগুলো বিয়োজিত হয়ে বায়ু, মাটি প্রভৃতির মাধ্যমে পানিতে পৌঁছায় এবং মানুষসহ সামগ্রিক বাস্তুসংস্থানের প্রভূত ক্ষতি সাধন করে।
এসব সমস্যার কারণেই সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের একদল পরিদর্শক অধ্যাপক ভারী ধাতু সমূহের প্রতিস্থাপক হিসেবে অপেক্ষাকৃত টেকসই কোনো বস্তু ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁরা শুরুতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বস্তু যেমন: কাঠের আঁশ প্রভৃতি নিয়ে চেষ্টা করেন এবং শেষে পাতায় এসে পৌঁছান। তাঁদের উদ্যেশ্য ছিলো এমন কোনো বস্তু খুঁজে বের করা যা সোডিয়াম শোষন এবং সংরক্ষণ করতে পারবে এবং ফলে তা ব্যাটারির অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, যার ফলে ভারী মৌলগুলো আর ব্যবহার করতে হবে না।
পাতা ব্যবহারের অনেক সুবিধা আছে। যেমন: এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটির অন্যতম লেখক হংবিয়ান লি এর মতে, “গাছের পাতা প্রকৃতিতে পর্যাপ্ত পরিমান রয়েছে। আমাদের শুধু এই ক্যাম্পাসেই গাছ থেকে পেড়ে নিলেই চলে।”
গাছের পাতা পুড়িয়ে পাওয়া কার্বনের কাঠামো যথেষ্ট ফাঁপা, ফলে এই কার্বন সোডিয়াম খুব ভালো শোষন করতে পারে এবং ব্যাটারীতে এই কার্বন কাঠামো যথাযথভাবে ফিট হয়। এছাড়াও ফেই শেন নামে এই গবেষণাপত্রের আরেকজন গবেষক বলেন, ” পাতার প্রাকৃতিক বিন্যাস একটি ব্যাটারীতে ব্যবহারের জন্য বেশ সাযুজ্যপূর্ণ।; এর পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল কম যা ত্রুটি হ্রাস করে; অনেক ক্ষুদ্র কাঠামো এতে অল্প জায়গায় বিদ্যমান থাকে যার ফলে স্থান খুব দক্ষতার সাথে ব্যবহৃত হয় এবং এর আভ্যন্তরিন কাঠামো সোডিয়াম ইলেক্ট্রোলাইটের সংরক্ষণের জন্য যথাযথ মাপের।”
বিজ্ঞানীরা কিভাবে পাতাগুলোকে সোডিয়াম শোষণের উপযোগী করেছেন? প্রক্রিয়াটি আপনি যেমন ভাবছেন তার চেয়ে সহজ। তাঁরা পাতাটিকে ১ooo ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করেন যার ফলে এতে কার্বন কাঠামো ছাড়া বাকী সবকিছু বাস্পীভুত হয়ে যায়। অতঃপর এতে সোডিয়াম যুক্ত করা হয়। যদি বিজ্ঞানীরা অবগত ছিলেন যে, কলার চামড়া, তরমুজের খোসা ইত্যাদি আরো বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক বস্তুর মাধ্যমেও সফলতার সাথে ব্যাটারী তৈরির পরীক্ষা করা হয়েছে, কিন্তু গাছের পাতা আরো সহজলভ্য এবং এর প্রস্তুতিও অপেক্ষাকৃত সহজ।
এই বিজ্ঞানীর দলের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে নানাবিধ পাতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেরাটি বেছে নেওয়া যার যথাযথ ঘনত্ব, কাঠামো এবং নমনীয়তা থাকবে।
⚫ বিজ্ঞানপত্রিকা ডেস্ক