মানুষের জিনে পরিবর্তন ঘটানো হলো প্রথমবারের মতো

0
370

ক্রিস্পার-ক্যাস ৯ পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পাদনা করা জিন একজন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করিয়েছেন চীনের একদল গবেষক। ২৮ অক্টোবর সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ লু ইউর নেতৃত্বে একটি দল পশ্চিম চীনের এক হাসপাতালের ফুফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন রোগীকে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার অংশ হিসেবে পরিবর্তিত করা কোষ সরবরাহ করা হয়েছে।

এর আগে চিকিৎসকরা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা হিসেবে ভিন্ন কৌশলে সম্পাদিত কোষ ব্যবহার করেছিলেন। ক্রিস্পারের (CRISPR) পরিচিতি হিসেবে ফিলাডেলফিয়ার ইমিউনিথেরাপিস্ট কার্ল জুন বলেন, এটা অন্যান্য কৌশলের চেয়ে সহজ এবং অধিক কার্যকরী। যা সমগ্র বিশ্ব জুড়ে ক্লিনিক্যাল জিন সম্পাদিত কোষের চাহিদার দৌড়ের গতিকে তরান্বিত করতে পারে।

লু এর এই পরীক্ষাকে গত জুলাইয়ে হাসপাতাল পরিচালনা বোর্ডে নৈতিক অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আগস্টে ইনজেকশন দেয়ার কথা ছিল কিন্তু কোষ রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিকশিত হওয়ার জন্য প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় নেয়ার কারণে তা পেছানো হয়েছিল।

গবেষকগণ ক্রিস্পার-ক্যাস ৯ ব্যবহার করার জন্য রোগীর রক্ত থেকে ইমিউন কোষ আলাদা করে নেন এবং পরে একটি জিন নিষ্ক্রিয় করে দেন। যা একটি আণবিক পথ প্রদর্শক ডিএনএ ও সম্পাদক এনজাইমের সাথে সম্মিলিত অবস্থায় থাকে। জিনোমের কোন জায়গায় কাটতে হবে তা পূর্ব প্রোগ্রামের মাধ্যমে নির্ধারণ করা থাকে ও এনজাইমকে সেখানটা দেখিয়ে দেয়। নিষ্ক্রিয় জিনটি পিডি-১ প্রোটিনের জন্য কোড করা থাকে। যা সাধারণত কোষের মধ্যে বাধা দিয়ে থাকে রোগ প্রতিরোধে সাড়া পাওয়া থেকে আর ক্যান্সার এই কার্যক্রমের সদ্ব্যবহার করে স্বীয় বংশবৃদ্ধি করে থাকে। লু এর দল এর পর সম্পাদিত কোষগুলো পরিচর্যা করে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেন এবং পরে এগুলো রোগীর শরীরে প্রবেশ করান। আশার কথা হচ্ছে, পিডি-১ ছাড়া সম্পাদিত কোষগুলো ক্যান্সারকে আক্রমণ করবে এবং ধ্বংস করবে।

লু বলেন, চিকিৎসা ভালোভাবেই চলছে এবং রোগীকে পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার আরেকটি ইনজেকশন দেয়া হবে। কিন্তু রোগীর গোপনীয়তা রক্ষার জন্য এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে তিনি অসম্মতি প্রকাশ করেন। দলটি সর্বমোট দশ জনকে চিকিৎসা দেয়ার পরিকল্পনা করেছেন যাদের প্রত্যেককেই দুই থেকে চারটা পর্যন্ত ইনজেকশন প্রদান করা হবে।

এটা প্রাথমিকভাবে একটি  নিরাপত্তামূলক পরীক্ষা এবং অংশগ্রহণকারীরা ছয় মাসের জন্য পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবেন যাতে ইনজেকশন দেয়ার ফলে তাদের কোন প্রতিকূল প্রভাব ঘটছে কিন সেটা দেখা যায়। এছাড়াও লুর দল দেখবেন এই চিকিৎসার ফলে তাঁরা সত্যিই উপকৃত হচ্ছেন কিনা।

অন্যান্য টিউমার বিশেষজ্ঞরা ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ক্রিস্পারের আগমণ সম্পর্কে খুবই উৎসাহী এবং উত্তেজিত। নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার থেকে নাইয়ার রিজভি বলেন, “এই প্রযুক্তিটি অবিশ্বাস্যভাবেই কাজটি করতে সক্ষম হবে।”

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.