গবেষকরা অবশেষে কয়েক দশক পুরনো সময় ও স্থানের অদ্ভূত পরিবর্তনের নিয়মের সেট বর্ণনা করেছেন। যা দশার ক্রমাগত পরিবর্তন নামে পরিচিত।
এটা কোন গতানুগতিক দশা নয় যা আমরা বিদ্যালয়ে শিখেছিলাম। যেখানে কোন বস্তু কঠিন থেকে তরলে কিংবা তরল থেকে বায়বীয়তে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। দশার ক্রমাগত পরিবর্তনে অতি ক্ষুদ্র কোয়ান্টাম বিচ্যুতি গঠিত হয়, যেখানে বস্তুগুলো কিছু স্বতন্ত্র অবস্থায় আটকে থাকে। আর এখন পদার্থবিদগণ এই বিষয়টি কিভাবে ঘটে তা বর্ণনা করেছেন।
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া দশার ক্রমাগত পরিবর্তন দেখতে পাইনা তবে এরা পদ্ধতির ভৌত অবস্থার পরিবর্তন এবং বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দশার ক্রমাগত পরিবর্তনের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হচ্ছে, আদি মহাবিশ্বের স্বতঃস্ফুর্ত ভারসাম্য ভঙ্গ হওয়া। যখন আমাদের মহাবিশ্বের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জিনিস যেমন, সময় এবং পদার্থ জন্ম লাভ করে।
আমরা আজ যেখানে আছি সেখানে হয়তো থাকতাম না যদি সময় ও স্থানের মাঝে যে দশার ক্রমাগত পরিবর্তন ঘটেছে তা না থাকত।
কিন্তু দশার ক্রমাগত পরিবর্তনের মূলনীতি জানতে পারলে শুধু যে মহাবিশ্বের শুরুর দিকের গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে যানা যাবে তাই নয়, সাথে সাথে পদার্থের কোয়ান্টাম পর্যায়ের আচরণ বুঝতে সাহায্য করবে। কারণ নতুন এই গবেষণায় প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেছে যে উভয় ক্ষেত্রের কার্যক্রমই একই নিয়মের সেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিবেল-যুরিক মেকানিজম (KZM) নিয়মগুলো যা ১৯৭৬ সালে প্রথম সুপারিশ করা হয়েছিল কিন্তু এর আগে কখনও প্রদর্শন করা হয়নি।
এই নিয়মগুলো গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হচ্ছে দশার ক্রমাগত পরিবর্তনের ফলে এই বিচ্যুতির সৃষ্টি হয়েছে যার ফলে ডোমেইন ওয়ালস, কসমিক স্ট্রিংস এবং টেক্সচার্স এর মতো মহাজাগতিক ঘটনা ঘটেছিলো। KZM অনাবিষ্কৃত মৌলগুলো সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করবে কিভাবে সময় এবং স্থানে এই বিচ্যুতি গঠিত হবে যখন ভৌত পদ্ধতি দশার ক্রমাগত রূপান্তরের মাধ্য দিয়ে যাবে।
আর অবশেষে আমরা জানতে পেরেছি যে এটা এখন কার্যকর।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক চেন চিং বলেন, “আমরা দশার পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছি কারণ এটা একটা মৌলিক প্রশ্ন যা আমাদের ধাঁধাঁর মধ্যে রেখেছে। মহাবিশ্বের এই জটিল কাঠামোর উৎস কি, কিভাবে অসম্পূর্ণতার উত্থান এবং কিভাবে অভিন্ন বস্তুগুলো সময়ের সাথে সাথে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বিকশিত হয়?”
চেন এবং তাঁর দল প্রথমবারের মতো একটি বায়বীয় সিজিয়াম পরমাণুকে KZM এর মাধ্যমে একদম শুন্যের কাছাকাছি তাপমাত্রায় ঠান্ডা করে দশার ক্রমাগত পরিবর্তনের একটি পরিষ্কার প্রদর্শনী করতে সক্ষম হয়েছে।
একটি লেজার ব্যাবহার করে গবেষকরা অপটিক্যাল জালি তৈরি করে যার মাধ্যমে পরমাণু একটি নমুনায় সারিবদ্ধ হয়ে যায়। তারপর শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে অপটিক্যাল জালিকে ঝাঁকানো হয় এবং পরমাণুকে একটি অবিচ্ছিন্ন, অয়শচুম্বকীয় কুয়ান্টাম দশা পরিবর্তনের ধিকে ধাবিত করা হয়।
এর কারণে পরমাণু ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক ভরবেগে বিভিন্ন ডোমেইনে আলাদা হয়ে যায় এবং যত দ্রুত কাঠামোকে ঝাঁকানো হয় ডোমেইন ততো ছোট হতে থাকে। অসাধারণভাবেই দলটি দেখতে পায় ১৯৭৬ সালে KZM যা অনুমান করেছিলো ঠিক সেভাবেই কাঠামোর ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।
এই নিয়মের উপর ভিত্তি করে গবষকগণ এখন পূর্বে ফিরে যেতে পারবে এবং দেখতে সক্ষম হবে কিভাবে আজকের অনন্য ‘বিচ্যুতি’ আদি মহাবিশ্বে দশার ক্রমাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছিল। চেন বলেন, “KZM কে আমাদের পদ্ধতিতে পরীক্ষা যে ফলাফল পেলাম সেটা আমাদের মহাবিশ্বের সৃষ্টির কারণ নয়।”
“বরং এই পরিবর্তনের মাধ্যমে কত জটিল কাঠামো সৃষ্টি হয় সেটাই জানান দেয়। এই দুটো প্রশ্নই আলাদা তবে সম্পর্কিত প্রশ্ন। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, তুষার কোথায় থেকে আসে? অথবা কেন একটি তুষার কণা এতো সুন্দর স্ফটিক কাঠামো রয়েছে? আমাদের অনুসন্ধান দ্বিতীয় প্রশ্নের মধ্যেই।”
দশার ক্রমাগত পরিবর্তনের অনুরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশে যেমন, তরল স্ফটিক, সুপারফ্লুইড হিলিয়াম কিংবা কোষ ঝিল্লির মধ্যে পাওয়া গেছে।
করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পদার্থবীদ এরিখ মুলার যিনি এই গবেষণার সাথে যুক্ত ছিলেন না তিনি বলেন, “এই গবেষণাটি পদার্থবিদ্যার জন্য একটি সার্বজনীন প্রদর্শনী ছিল।” তিনি আরও বলেন, “আদি মহাবিশ্বের গঠনের কাঠামো ব্যাখ্যা করতে যে তত্ত্ব ব্যাবহৃত সেই একই তত্ত্ব ঠান্ডা গ্যাসের গঠনের কাঠামো বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়েছে।”
KZM কে এখন নিশ্চিত করা হয়েছে, যার ফলে গবেষণাগারে পমাণূকে মডেল হিসেবে ব্যাবহার করতে কিংবা বড় পর্যায়ে প্রত্যক্ষ্য করার দুয়ার উন্মোচন করেছে।
চেন বলেন, “যখন বিশ্বতত্ত্ববিদগণ এখনো কিবেল-যুরিক মেকানিজমের জন্য প্রমাণ খুঁজছেন, তখন আমাদের দল গবেষণাগারে পরমাণুর নমুনাকে অত্যন্ত স্বল্প তাপমাত্রায় সেটা দেখতে পেয়েছেন। অন্যান্য মহাজাগতিক ঘটনা অনুসন্ধানে আমরা সঠিক পথেই রয়েছি। শুধুমাত্র একটি দূরবীন নিয়েই নয় সাথে অণুবীক্ষণ যন্ত্র রয়েছে।”
-শফিকুল ইসলাম