আপনাদের কি ধারনা? ঘাস ছাড়া কি একদিন বেঁচে থাকতে পারবেন? হয়ত ভাবছেন পাগলটা বলে কি? ঘাসের সাথে আমাদের বেঁচে থাকার সম্পর্ক কি? আমরাতো আর ঘাস খাই না! তবে যাই ভাবুননা কেন আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে যে ঘাস ছাড়া একদিন ও বেঁচে থাকবেন। কেন একথা বলছি সেটা জানতে হলে আগে যাবতীয় মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন আর তারপর নিচের লেখায় মনোযোগ দিন।
আমরা মাছে ভাতে বাঙ্গালি। আমরা দিনে তিন বেলা ভাত খেতে পছন্দ করি। কেউ কেউ অবশ্য দুই বেলা ভাত খাই আর একবেলা রুটি খাই। বলুনতো দেখি ভাত আর রুটি আসে কোথা হতে? (প্লিজ এখনই নিরাশ হবেন না, আরেকটু পড়ুন) পারলেন না তো! আসলে ভাত আসে ভাত গাছ (মতান্তরে ধান গাছ) হতে আর রুটি আসে রুটি গাছ (মতান্তরে গম গাছ) থেকে। আপনি যদি আগে থেকে জেনে থাকেন এদুটো আসে যথাক্রমে ধান ও গম ক্ষেত থেকে তবে সেটাও ঠিক।
নাহ্, আর হেঁয়ালি না, এবার মারাত্মক (serious) হয়ে যাচ্ছি। আসলে আমাদের প্রতিদিনকার যাবতীয় খাদ্য উৎসের ৮০% ই আসে ঘাস থেকে। হ্যাঁ, ধান, গম, ভুট্টা, যব এসবই হচ্ছে ঘাস। কাজেই বলতে পারেন ঘাসই মানব সম্প্রদায়কে টিকিয়ে রেখেছে। আপনার যদি সন্দেহ থেকে থাকে উপরের উদ্ভিদগুলো ঘাস নয়, তবে এক কাজ করুন। এক হাতে এমন একটি উদ্ভিদ নিন যেটা ঘাস বলে আপনি ১০০% নিশ্চিত(অন্তত ছোট বেলা থেকে বিশ্বাস করে আসছেন সেটা ঘাস) আর অন্য হাতে উপরের যে কোন একটি উদ্ভিদ। তারপর দুটোর মাঝে তুলনা করুন। পাতা গুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখুন, কান্ডের গঠন দেখুন, শীষের গঠন লক্ষ্য করুন, দুটোর মধ্যে যথেষ্ট মিল পাবেন। যদি তারপরও যথেষ্ট মিল খুঁজে না পান কিংবা নিজের পর্যবেক্ষণের উপর বিশ্বাস না থাকে তাহলে একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানীর সাহায্য নিন। আর যদি আশ্বস্ত হয়ে থাকেন প্রতিদিন দুবেলা করে ‘ঘাসফল’ খেয়ে আসছেন তাহলে এবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন (ঘাসের এবং আমার প্রতি) আর ভেবে দেখুন ঘাস ছাড়া সত্যিই একদিনও টিকতে পারবেন কিনা।
ঘাস হতে আমরা শস্য ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাবার ও উপকরন পাই। আমাদের রোজকার খাদ্যতালিকায় চিনি বেশ উপরের দিকেই আছে। এই চিনির প্রধান উৎস হল ঘাস কেননা আখ আসলে এক ধরনের ঘাস। বাংলাদেশের ঘর-বাড়ি নির্মানের প্রধান উপকরন বোধকরি বাঁশ। এই বাঁশ ও একধরনের ঘাস। ঘরের চালায় ব্যবহার করি বিশেষ ধরনের ছন ঘাস। বিশেষ বিশেষ ঘাসের রয়েছে অত্যন্ত কার্যকরী ঔষধি গুণ। ঘাসের দিকে তাকিয়ে থাকা চোখের জন্য আরামদায়ক। ঘাসবিহীন খেলার মাঠের চিন্তা করাটাও কষ্টকর আর আমাদের আঙ্গিনার সৌন্দর্য বর্ধনের কথা বাদই দিলাম (ঘাসবিহীন লন কি খুব বেশী দেখেছেন? দেখলেও সহ্য হয়েছে?)। সম্প্রতি ঘাস থেকে বিদ্যূৎ উৎপাদন করা হচ্ছে!
শুধু আমরাই নই পৃথিবীর যাবতীয় মানব সম্প্রদায়ের খাবারের অধিকাংশই আসে ঘাস থেকে। শুধু মানব সম্প্রদায়ই বা বলছি কেন, পৃথিবীর যাবতীয় প্রানিকূলের খাদ্যই আসে ঘাস থেকে। কেননা তৃণভোজী প্রাণিকূল খাদ্যের জন্য প্রায় সম্পূর্ণরূপেই ঘাসের উপর নির্ভরশীল (কাঁঠালপাতা অবশ্য খাদ্যের উৎস হিসেবে কিছুটা ভূমিকা পালন করে থাকে তবে সেটা নগন্য)। আর মাংসাসী প্রানিকূল সেই তৃণভোজীর উপর নির্ভরশীল।
এতক্ষণ পড়ে আপনার এই ধারনা জন্মাতে পারে যে, তাহলে বোধহয় উদ্ভিদ জগতের অধিকাংশই ঘাস। মোটেই তা নয়। বরং ঘাস হল যাবতীয় উদ্ভিদের একটা অতি ক্ষুদ্র অংশ। ভেবে দেখুন এই ক্ষুদ্র অংশ আমাদের কত বিশাল উপকারটাই না করছে।
আসুন বেশি বেশি ঘাস লাগাই এবং পরিবেশের উপর আমাদের প্রভাব প্রশমিত করি। তবে বেশী বেশী ঘাস লাগাতে গিয়ে অন্যান্য গাছ কম কম লাগাবেন না যেন।
-ইমতিয়াজ আহমেদ
সম্পাদক, বিজ্ঞান পত্রিকা
[ফেসবুক প্রোফাইল]
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া