মঙ্গলে প্রাণের উদ্ভবে প্রয়োজনীয় শক্তি সৃষ্টি হতে পারে ভূমিকম্পের মাধ্যমে

0
220

আধিকাংশ প্রাণী, মানুষ, উদ্ভিদ এবং ছত্রাক তাদের শক্তির বেশীরভাগ অংশ জৈব যৌগের মধ্যে বিক্রিয়ার মাধ্যমেই পেয়ে থাকে। যেমন, শর্করা। একইভাবে অণুজীবগুলোও তাদের প্রয়োজনীয় শক্তির জন্য বিভিন্ন বিক্রিয়ার একটা শ্রেণিবিন্যাসের উপর নির্ভর করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন গ্যাসের বিক্রিয়া হাইড্রোজেনোট্রফস নামক ব্যাকটেরিয়াকে পৃথিবীর গভীর ভূগর্ভস্থ এলাকায় টিকে থাকতে সাহায্য করে। এবং পূর্বের এক গবেষণায় দাবি করা হয় এমনি কোন এক বিক্রিয়ার ফলেই পৃথিবীর শুরুর দিকের জীবনের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে থাকবে।

পূর্বের এক ফলাফলেও ধারণা করা হয়েছিলো, যখন পৃথিবীতে ভূমিকম্প হয়েছিলো তখন শিলা গুলোতে ফাটল ধরে এবং পরস্পরের সাথে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়। আর ঐ সময়ে সিলিকন হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করার জন্য পানির সাথে বিক্রিয়া ঘটিয়ে থাকতে পারে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওমাইক্রোবাইয়োলজিস্ট শন ম্যাকমোহন এবং তাঁর সহকর্মীরা দেখতে চেয়েছিলেন যদি যদি মঙ্গলে ভূমিকম্প হয় তবে কি কোন হাইড্রোজেন শক্তি উৎপন্ন হবে যার সাহায্যে অণুজীবগুলোর লাল গ্রহটিতে বেঁচে থাকতে সক্ষম হবে?

ভূমিকম্পের সময় গঠিত বিশেষ ধরনের শিলারপরীক্ষা করেছেন যেগুলো কম্পনের সময় একে অপরের সঙ্গে ঘর্ষনে মিলিত হয়েছিলো। বিজ্ঞানীরা নমুনাগুলো স্কটল্যান্ড, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডের সিসিলি দ্বীপপুঞ্জ, স্কটল্যান্ডের বাইরের গেব্রিস উপকূল থেকে সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে দেখেন সেগুলো পার্শ্ববর্তী শিলার (যেগুলো একইভাবে চূর্ণ হয়নি) তুলনায় শতগুণ বেশি হাইড্রোজেন গ্যাস সমৃদ্ধ।

ম্যাকমোহন বলেন, “আবিষ্কারটি আমাদের অবাক এবং উত্তেজিত করে তুলেছিল কারণ আমরা জানতামই না যে এরকম কিছু খুঁজে পেতে যাচ্ছি।” গবেষকগণ বলেন তাঁদের গবেষণাকৃত নমুনাগুলোতে হাইড্রোজেনোট্রফস ধারণ করার জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণে হাইড্রোজেন গ্যাস ছিল।

ম্যাকমোহন Space.com কে বলেন, “আমাদের তথ্যগুলো কিভাবে ভূতাত্ত্বিক পক্রিয়ায় চরম পরিবেশে অনুজীবীয় জীবন নির্বাহ করতে পারে তার একটা পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছে। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে তলে কত মাইল এলাকা জুড়ে খাদ্য বিস্তৃত রয়েছে সে ব্যাপারে আমাদের তেমন ধারণা নেই। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা পৃথবী পৃষ্ঠ তলে বিপুল পরিমাণে জৈববস্তুপুঞ্জের সন্ধান পেয়েছে। হয়তো তা  পৃথিবী পৃষ্ঠের তুলনায় ২০ শতাংশ কিংবা তারও বেশি হতে পারে।”

মঙ্গলে পৃথিবীর মতো এতোটা কম্পন হয়না। কেননা আজকাল এই লাল গ্রহটিতে আগ্নেয়ক্রিয়া এবং টেকটনিক প্লেটের অভাব রয়েছে। পূর্বের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই গ্রহটিতে বড় পরিমাণের পানির মজুদ থাকতে পারে, তবে সেটা এর অনেক গভীরে। গভীরতা আনুমানিক ৩ মাইল বা ৫ কিঃমিঃ। অতএব, যদি কখনো মঙ্গলের ভূমি কম্পিত হয় আর পানির সঙ্গে মিলিত হয়ে কাজ করে তবে হাইড্রোজেন গ্যাসের সৃষ্টি হতে পারে।

নাসার মার্স গ্লোবাল সার্ভেয়ার থেকে গবেষকগণ তথ্য সংগ্রহ করে দেখেন, মঙ্গলে এখনোও ২-মাত্রার ভূমিকম্প প্রতি ৩৪ দিনে একবার অনুভুত হয় এবং ৭-মাত্রার ভূমিকম্প প্রতি ৪,৫০০ বছর পর পর অনুভুত হয়। এর মানে মঙ্গলের ভূমিকম্প বছরে ১১ টনের কম হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে সমগ্র মঙ্গল গ্রহ জুড়ে। যার ফলশ্রুতিতে ক্ষুদ্র জীবাণুগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সংখ্যক জ্বালানি গহবর থাকতে পারে। গবেষকগণ বলেন, যা প্রাণের জন্য যথেষ্ট।

“এই হাইড্রোজেন সম্ভবত অল্প পরিমাণে জৈববস্তুপুঞ্জ সরবরাহ করতে পারে। তবে অল্প পরিমাণ জীবমন্ডলের এই ক্রমবর্ধমান চিত্র মঙ্গলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যদি আপনি পৃথিবীর ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য অণুজীবের দিকে তাকান তবে আপনি লক্ষ্য করবেন এরা দীর্ঘ সময়ের জন্য সুপ্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে থকতে সক্ষম। পরে তারা জেগে উঠে ও পুনরায় বংশ বৃদ্ধি করে থাকে এরপর এরা আবার ঘুমিয়ে পরে ১০,০০ হাজার বছর কিংবা তারও বেশি সময়ের জন্য।”

ম্যাকমোহন লক্ষ্য করেন, যেসব শিলায় পানির অভাব থাকা সত্ত্বেও ভূমিকম্পের সময় তারা হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করতে পারে। এর মানে দাড়ায় ঘর্ষণের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার বাধ্যবাধকতার জন্য শিলাগুলো হাইড্রোজেঙ্কে মুক্ত করে দেয়। তিনি বলেন, “হাইড্রোজেন কিভাবে মুক্ত হয় এটা জানার জন্য আরো কাজ করার প্রয়োজন হবে।”

নাসার ২০১৮ সালের ইনসাইট মিশনের পরিকল্পনা হবে মঙ্গলের ভূকম্পীয় কার্যকলাপ পরিমাপ করা। ম্যাকমোহন বলেন, “মঙ্গল পৃষ্ঠ থেকে পাঠানো মঙ্গলে ভূমিকম্পের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যাবে তাঁদের কাজ কি প্রাসঙ্গিক হচ্ছে কিনা।”

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.