আগামী দশ বছরের মধ্যেই ক্যানসার প্রতিরোধ করতে চায় মাইক্রোসফট

0
298

মাইক্রোসফট আগামী দশ বছরের মধ্যে কম্পিউটার বিজ্ঞান ব্যবহার করে ক্যান্সার সমস্যার সমাধানের মতো উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে।

যদিও এটি অনেক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার অন্তর্ভূক্ত, তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রস্তাব হচ্ছে অতি ক্ষুদ্র ডিএনএ কম্পিউটার তৈরী করা যা একজন ব্যাক্তির ভেতরে অবস্থান করবে এবং ক্যান্সারের কোষকে নজরদারির মধ্যে রাখবে। এবং যখনি এই কোষগুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে এই ডিএনএ কম্পিউটার তাদের স্বাস্থ্যকর কোষে পরিণত করবে।

দি টেলিগ্রাফকে মাইক্রোসফট গবেষক ক্রিস বিশপ বলেন, “মাইক্রোসফটের এমন একটি সমাধান খোঁজার বিষয়টিকে আমি সাধারণভাবেই নিচ্ছি, কারণ আমাদের কাছে কম্পিউটার বিজ্ঞানের অসাধারণ দক্ষ লোক রয়েছে। আর ক্যান্সার ক্রমাগত গণনীয় সমস্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে।”

“এটি কোন উপমা নয়, এটি একটি গভীর গাণিতিক অন্তর্দৃষ্টি। জীববিজ্ঞান এবং কম্পিউটিং সাদৃশ্য অনেকটা চক এবং পণিরের মতো কিন্তু তাদের মৌলিক স্তরে গভীর সংযোগ রয়েছে।”

মাইক্রোসফট তাদের উদ্দেশ্যকে বাস্তব করার জন্য তাদের চিন্তাকে একটি ইলেকট্রনিক আকার দেয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই, ক্যান্সারের বিভিন্ন গবেষণার উদ্দেশ্যে তাঁরা সারা বিশ্বের জীববিজ্ঞানী ও কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ দলে একত্রিত করেছেন।

যদিও তাদের কর্মপরিকল্পনার বর্ণনা খুবই অল্প, তবুও তাদের একটি দল যান্ত্রিক শিক্ষা এবং কম্পিউটার ভিশন ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছেন। যেখানে কম্পিউটারগুলো বিভিন্ন ছবি অথবা ভিডিও থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে যার সাহায্যে তাঁরা রেডিওলজিস্টদের বুঝতে সক্ষম করে তোলে কিভাবে একজন রোগীর টিউমার বেড়ে উঠে।

আর এই পদ্ধতিটি ব্যাক্তিগত ঔষধের মাঝে আরো সুক্ষ পার্থক্য সৃষ্টি করবে।

আরেকটি দল গাণিতিক সমাধান পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি টিউমারের ধরণ চিহ্নিত করে ভবিষ্যৎ আক্রমণ পদ্ধতির উপর কাজ করে যাচ্ছে।

এজন্য তাঁরা ‘moonshot‘ ধারণার উপর কাজ করে যাচ্ছেন যেন কম্পিউটার ডিএনএর মধ্য দিয়ে শরীরের ভেতরের ক্যান্সার কোষকে নজরদারী এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

টেলিগ্রাফে আরো বলা হয়েছে, “চিন্তাটা এমন ভাবে করা হয়েছে যে, যখনি শরীরে ক্যান্সারের কোষ বেড়ে উঠতে শুরু করবে তখনি কম্পিউটার এটা জেনে যাবে এবং সিস্টেম রিবুট করে রোগাক্রান্ত কোষটিকে পরিষ্কার করে ফেলবে।”

এরকম বৈচিত্রময় পন্থা হওয়া সত্ত্বেও মাইক্রোসফট বলছে, তাঁদের সকল প্রকল্পগুলো বিভিন্ন হলেও কোন সমস্যা নেই। তাঁরা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং মেশিন লার্নিং এই দুটি কম্পিউটার বিজ্ঞানের অভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করছে।

কোম্পানীটি বলছে, “এ পদ্ধতির ধারণার একটি মূলে নিহিত যা ক্যান্সার এবং অনান্য জৈব কার্যাবলী তথ্য প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতিতে রয়েছে।”

এদিকে দলটি বলছে মেশিন লার্নিং গবেষকদের লক্ষ লক্ষ জৈবিক উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি খোঁজ করার এবং প্রক্রিয়াযাত করার সুযোগ করে দেবে। যা একন পর্যন্তও হাতে সম্পাদন করা হচ্ছিল। আর মেশিন লার্নিং এই কাজের গতি আরও দ্রুততর করতে পারবে।

ডেভিড হ্যাকারম্যান মাইক্রোসফট জেনোমিকস দলের পরিচালক একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “ক্যান্সার চিকিৎসার অংশ হিসেবে আমরা একটা বিপ্লবের মধ্যে রয়েছি। এমনকি ১০ বছর আগেও মানুষ মনে করতো যে আপনি টিস্যুর চিকিৎসা করছেন। আপনার মস্তিষ্কে ক্যান্সার আছে তো আপনি মস্তিষ্কের চিকিৎসা পেতে পারেন; আপনার ফুসফুসে ক্যানসার আছে তো আপনি ফুসফুসের চিকিৎসা পাচ্ছেন।”

তাঁদের উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনা হিসেবে বলছেন, এক দশকের মধ্যে ক্যান্সার সমস্যার মিমাংসা করার লক্ষ্যে কাজ করছেন এবং তাঁদের অনেক গবেষকগণই এই প্রকল্পের সফলতার ব্যাপরে খুবই আত্মবিশ্বাসী ।

জ্যেষ্ঠ গবেষক জেসমিন ফিশার বলেন “যদি আমরা ক্যানসারকে নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখতে পারি তবে এটা আর বাকি আট দশটা দীর্ঘস্থায়ী রোগের মতো হয়ে যাবে এবং সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।”

“আমি মনে করি কিছু কিছু ক্যানসারে জন্য পাঁচ বছর তবে অবশ্যই এক দশকের মাঝেই এটা সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে। তারপর সম্ভবত আমরা ক্যানসার বিহীন একটি শতাব্দি পেতে যাচ্ছি।”

তাঁরা কি সঠিক না ভুল এটা শুধু সময়ই বলতে পারবে, কিন্তু একটা সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় তাঁরা ভালো কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.