তিনটি মারাত্মক সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে একটি ঔষধ

0
389

স্লিপিং সিকনেস, চাগাস রোগ (Chagas disease) এবং লেইশম্যানিয়াসিস (Leishmaniasis) এই তিনটি প্রধান সংক্রমণে উন্নয়নশীল দেশের প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ সংক্রমিত হয়। আর এই তিনটি সংক্রমণই শুধুমাত্র একটি ঔষধ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। এই ঔষধ এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র পশুদের উপর পরীক্ষা করা হয়েছে এবং ফলাফল ইতিবাচক। আর এর চলতি নিরাপত্তা পরীক্ষা শেষ করার পর গবেষকরা মানুষের উপর প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক এলমায়ার মাইবার্গ বিবিসিকে বলেন, “প্রধান তিনটি পরজীবিকে এই ঔষধটি নিশানা করার ক্ষমতাই একে বিশেষ করে তুলেছে। আর প্রথমবারের মতো এই কাজটি করা সম্ভব হয়েছে।” তিনি আরোও বলেন, “আমার কাছে সত্যিই এটা অসাধারণ একটি বিষয় আর এ রোগ থেকে নিরাময় পেতে এবং তা রোগীদের হাতের নাগালে পৌছে দেয়ার জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কারণ একটি বিশাল সংখ্যক মানুষ যারা অত্যন্ত দরিদ্র তারা এসব রোগের পেছনে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যায় করছে কিন্তু আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছেনা।” আপাতত ঔষধটিকে GNF6702 নামে ডাকা হচ্ছে।

সান দিয়াগোর নোবার্টিস রিসার্চ ফাউন্ডেশন গবেষক কর্তৃক নেতৃত্ত্ব দেয়া দলটি এর প্রভাব পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা বলেন, এটি যেসকল পরজীবিদের জন্য সংক্রমণ হয় তাদের খুঁজে বের করে এবং ধ্বংস করে রোগগুলো নিরাময় করতে সক্ষম হয়। যার সবগুলোই kinetoplastids নামক একপ্রকার এককোষী জীব।

স্লিপিং সিকনেস একটি সংক্রমণ Trypanosoma brucei নামক পরজিবী থেকে হয়, যার ফলে দীর্ঘায়িত কোমার সৃষ্টি হয়। এগুলো আফ্রিকার মাছিদের মাঝ ছড়িয়ে রয়েছে। চাগাস রোগে মানুষের হৃৎপিন্ডে বৃদ্ধি পায় যা Trypansosoma cruzi পরজিবী দ্বারা সৃষ্টি হয় এবং এক প্রকার গুপ্ত রোগজীবসংক্রমক দ্বারা ছড়ায়।

আর লেইশম্যানিয়াসিস নামক তৃতীয় রোগটি লেইশ্ম্যানিয়া পরজীবির কারণে হয়ে থাকে যা একপ্রকার বালি মাছি বা স্যান্ড ফ্লাইয়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। আপনি শুধু গুগল করেই জানতে পারেন কি বিধ্বংসী এই মাছি। এ রোগগুলির কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বছরে ৫০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে।

microorganism

দলটি ঔষধটিকে কার্যকরি প্রক্রিয়ায় নকশা করেছে যার মাধ্যমে প্রোটিয়াসোম নামক একপ্রকার প্রোটিন যৌগ খুঁজে বের করে ধ্বংস করতে পারে। আর এই প্রোটিয়াসোম মানুষসহ ইউকারইওট এবং আর্কিয়া প্রজাতির মধ্যে পাওয়া যায়।

অতীতে গবেষকগণ ভেবেছিলেন প্রোটিয়াসোমকে হয়তো নিশানা করা যাবেনা কারণ প্রজাতিগুলো থেকে এদের  পৃথক করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। কিন্তু গবেষকগণ একটি নিশানা খুঁজে পেয়েছিলেন যা এই তিনটি পরজীবির মাঝে সাতিশয় সাদৃশ তৈরি করেছে। তবে এটি মানুষের সংস্করণ থেকে যথেষ্ট স্বতন্ত্র। যখন একটি ঔষধ দ্বারাই তিনটি রোগ নিরাময় করা যাবে তখন এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে। এটা হবে সস্তা, ব্যবহার করা হবে সহজে এবং বিতরণ করা যাবে সব যায়গায়। তবে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য গবেষকগণ তিনটি স্বতন্ত্র ঔষধ উন্নয়ন করতে চাচ্ছেন।

দলের আরেক সদস্য রিচার্ড গ্লিন বলেন, “তিনটি রোগের জন্য একটি ঔষধ ভালো সম্ভবত কৌশল হবে না। রোগগুলোর জীবতত্ত্ব ভিন্ন ধরণের। উদাহরণস্বরূপ, স্লিপিং সিকনেসে পরজীবি থাকে মস্তিষ্কে, তাই আপনার এমন ঔষধ লাগবে যা মস্তিষ্কে কাজ করব। তাই সেখানে স্বমন্বয় করার প্রয়োজনীয়তা হতে পারে।”

ওয়েলকাম ট্রাস্ট এর গবেষক স্টিফেন ক্যাডিক বলেন, “আমরা সংক্রমিত মানুষদের মাঝে সাশ্রয়ী মূল্যে ঔষধ পৌছে দিতে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি আর এক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। অন্যদিকে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা যার জন্য আমি খুবই উত্তেজিত। কিন্তু এখনো ফলাফল পেতে বহু পথ অতিক্রম করতে হবে।”

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.