টাগিশ লেক উল্কাপিন্ড: বহিঃসৌরজগত থেকে আসা প্রথম বস্তু!!

0
519

দীর্ঘ ১৬ বছর পর অবশেষে পৃথিবী পৃষ্ঠে আঘাত হানা একটি বহিরাগত উল্কাপিন্ডের উৎপত্তি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন যে, ২০০০ সালে কানাডায় আঘাত হানা টাগিস লেক উল্কাপিন্ডটি কুইপার বেল্ট থেকে এসেছে যা আমাদের সৌরমন্ডলের বাইরের দিকে অবস্থিত।

কুইপার বেল্টের অবস্থান
কুইপার বেল্টের অবস্থান

২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে বৃটিশ কলম্বিয়ার উত্তর-পশ্চিমের হিমায়িত টাগিশ হ্রদে অগ্নিসাদৃশ উল্কা দ্রুতগতিতে আঘাত হানে। অগ্নিগোলকটি গ্যাসীয় বলয় ধারণ করে একটি গাড়ির আকারের শিলায় পরিণত হয় এবং বরফাচ্ছাদিত এলাকায় বিজ্ঞানীদের সংগ্রহ করার জন্য যথেষ্ট ধ্বংসাবশেষ রেখে যায়।

কলোরাডোর রিসার্স ইন্সটিটিউটের ক্লার্ক চ্যাপম্যান  বলেন, “এই আদিম উল্কাপিন্ডগুলো  কঠিন শিলা থেকে বেশি অবিশুদ্ধ এবং খুবই ভঙ্গুর। যদিও এটি পৃথিবীর আবহাওয়ায় আঘাত হানার সময় ৫ মিটার জায়গা জুড়ে অবস্থিত একটি বস্তুর সমান ছিল তবে এটি থেকে কয়েক কিলোগ্রামের  বেশি ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করা যায়নি।”

পৃথিবীতে পাওয়া অন্যসব উল্কাপিন্ডের থেকে টাগিস লেক উল্কাপিন্ডটি একদম আলাদা হওয়ায় চ্যাপম্যান ও তাঁর দল ধারণা করছেন সম্ভবত এটি আমাদের সৌরজগতে সবচেয়ে প্রাচীনতম খন্ড। চ্যাপম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এর গঠন অনেকটা সূর্যের গঠনের অনুরূপ(বায়বীয় বস্তু বাদ দিয়ে) এবং এ জাতীয় উল্কার ক্ষেত্রে খনিজের যে পরিমাণ পরিবর্তন দেখা যায় তা এতে খুব সামন্যই ঘটেছে।

এই বিশাল সৌরজগতের অংশ হিসেবে ছায়াপথ থেকে নানা ধরনের শিলা পৃথিবীর সংস্পর্শে আসে। তবে আমাদের নিকটতম ছায়াপথের বাইরে থেকে খুব কম সংখ্যক শিলার দেখা পাওয়া যায়। অসংখ্য উল্কা এসব অঞ্চলে তৈরী হয় এবং টাগিস লেক উল্কাপিন্ড ছাড়া বাকি সবগুলোই মঙ্গল এবং বৃহষ্পিতির মাঝের গ্রহাণু বেষ্টনীতে ধরা পরে।

সাউথইষ্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট এই অদ্ভুত উল্কাপিন্ডের উৎসস্থল সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, চার বিলিয়ন বছর আগে কোন গ্রহের সঙ্গে ঘটা সংঘর্ষেই এর সৃষ্টি হয়েছে। সৌরজগতের গোড়ার দিকে বৃহষ্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনের মতো বৃহৎ গ্রহগুলো যখন নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে একে অপরকে আঘাত করে এমন কিছু নকশা উপর ভিত্তি করে তাঁরা বলেন, মহাকর্ষীয় আকর্ষণের ফলে তারা যেমন নানারকম শিলা  উপরের দিকে নিক্ষেপ করে কুইপার বেল্টের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি হয়েছে।

পৃথক এক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে, বৃহষ্পতি গ্রহ দ্বারা বিতারিত হওয়ার আগে সৌরজগতে পঞ্চম বৃহৎ গ্যাসীয় গ্রহের অস্তিত্ব ছিল যা থেকে এরূপ ঘটার সম্ভাবনা তৈরী হতে পারে।

হারিয়ে যাওয়া সেই পঞ্চম বৃহৎ গ্রহটিই কি দুরবর্তী কুপার বেল্ট থেকে গ্রহাণু বেষ্টনিতে বিভিন্ন বস্তু পাঠিয়ে আসছে?

দলটির এক সদস্য বিল বটেক নিউ সাইন্টিষ্টের টেইলর রেড বলেন, “সৌরজগতের স্বল্প সময়ের ইতিহাসে বৃহৎ গ্রহগুলো ধুমকেতুর বিশাল গ্যাসীয় সাগরে আবৃত থাকার সময়ে একে অন্যকে আঘাত করতো, বিষয়টি অনেকটা নাটকীয় ছিল।” এই দলটির ধারণা পূর্ববর্তী এক গবেষণা সমর্থন করেছে। তাদের গবেষণায়ও বলা হয়েছে টাগিশ লেক উল্কাপিন্ডটি ডি-টাইপ গ্রহাণৃর টুকরা বিশেষ যা গ্রহাণু বেষ্টনীতে পাওয়া অন্যসব গ্রহাণু থেকে আলাদা গঠনের। কিন্তু বৃহৎ গ্রহ থেকে পাওয়া বস্তুগুলোর সাথে সাদৃশপূর্ণ।

টেইলর রেড আরও বলেন, “শুধুমাত্র অল্প কিছু অস্বাভাবিক শ্রেণীর শিলা গ্রহাণু বেষ্টনীতে অদৃশ্য হয়ে থাকে যদিও কালো নমুনাগুলো অসংখ্য পরিমাণে বৃহৎ গ্রহগুলির চারপাশে ছড়িয়ে থাকে।”

তবে ভালো খবর হচ্ছে, আমাদেরকে আর কল্পনাপ্রসুত কোন ধারণা প্রকাশ করতে হবেনা। সম্প্রতি নাসা কুইপার বেল্ট বস্তুগুলি দেখার জন্য নিউ হরাইজন প্রকল্প 2014 MU69 অনুমোদন দিয়েছে। সুতরাং আমাদের হাতে কুইপার বেল্টের কিছু নমুনা আসতে আর খুব বেশি সময় লাগবে না।

শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.