কুসংস্কার জিনিসটা থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করলেও চিন্তা-ভাবনায় আধুনিক, বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী অনেকের মাঝে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের ভুল ব্যাখ্যা সহজেই বাসা বাঁধে। ‘সহজেই’ বাসা বাঁধা সম্ভব হওয়ার কারণ হলো এই কুসংস্কারেরা বিজ্ঞানের ছদ্মবেশ ধরে সামনে আসে। এসব কুসংস্কার অনেক সময সত্যের অপলাপ — এরা প্রকৃত-তথ্য বিকৃত করে তৈরি। অনেকক্ষেত্রে এরা গঠিত হয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা-ফলাফলের অপব্যাখ্যা ও ভুল বিশ্লেষণ থেকে। তাই দেখতে-শুনতে ‘বৈজ্ঞানিক’ বলে বেশিরভাগ সময় কোন প্রশ্ন ছাড়াই এদেরকে মেনে নেওয়া হয়।
মস্তিষ্ক নিয়ে এমন বেশ কিছু ‘বৈজ্ঞানিক’ কুসংস্কার প্রচলিত আছে আমাদের মধ্যে। এর মধ্যে একটা জনপ্রিয় কুসংস্কার হলো বেশির ভাগ মানুষ মস্তিষ্কের মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ ব্যবহার করেন, আর খুব প্রতিভাধরেরা সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশের মতো ব্যবহার করতে পারেন। মস্তিষ্কের বাকি অংশটুকু নাকি সারা জীবন অব্যবহৃত থেকে যায়।
প্রকৃত ঘটনা হলো, সারা দিন আমরা মস্তিষ্কের প্রায় সবটুকুই ব্যবহার করি। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক যে আপনি যখন এই লেখাটা পড়ছেন আয়েশ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে, তখন হয়তো ফাঁকে ফাঁকে এক বাটি কিঞ্চিৎ ঝাল নুডুলসও একটু একটু করে খাচ্ছেন। যখন আপনি পড়ছেন, আপনার সেরেব্রাল কর্টেক্সের ফ্রন্টাল লোব লেখাটার যুক্তি বিশ্লেষণ করতে নিমগ্ন। আবার সুস্বাদু নুডুলস খুব ভালো লাগছে কারণ মস্তিষ্কের প্যারাইটাল লোব খাবারের সুস্বাদ, ঘ্রাণের অনুভূতি নিতে সহায়তা করছে আপনাকে। এই লেখাটার অক্ষরগুলো দেখতে সহায়তা করছে অক্সিপিটাল লোব; কিছুক্ষণ পর পর যে আপনার চোখের পাতা বন্ধ করছেন সে জন্যে দায়ী মস্তিষ্কের মোটর অঞ্চল। একই সাথে সাথে আপনি বুকভরে দম নিচ্ছেন, পেটের মধ্যে হজম করছেন সুস্বাদু নুডুলস, হৃদপিন্ডের চাপে অক্সিজেন-ভর্তি রক্ত সঞ্চালন করছেন মস্তিষ্কের দিকে কোন রকমের সচেতন প্রচেষ্টা ছাড়াই – এজন্যে ধন্যবাদ দিতে পারেন ব্রেনস্টেমকে। আর এই অনুচ্ছেদ শেষ করে আপনি পরবর্তীতে স্মরণ করতে পারবেন যে মানুষ বলতে গেলে মস্তিষ্কের পুরোটাই ব্যবহার করে। ‘মনে করার সময়’ স্মৃতির এই কারিশমাটা দেখায় হিপ্পোক্যাম্পাস, স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিকে দীর্ঘস্থায়ী রূপে ধর্মান্তরিত করাটা হিপ্পোক্যাম্পাসের কাজ। মস্তিষ্কের হাবিজাবি অঞ্চলের কঠিন কঠিন নাম দেখে যদি আপনার ভ্রু কুঁচকে উঠে তাহলে জানাই, এদের সাথে পরিচয় ঘটানোই এ অধ্যায়ের অন্যতম উদ্দেশ্য।
আসুন মগজটাকে চিনি
মস্তিষ্কে বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ, ইন্দ্রিয় থেকে আসা সংকেতের অর্থ অনুবাদ, দেহ পরিচালনা ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ সংগঠিত হয়। হাড়ের তৈরি করোটি একে সুরক্ষা প্রদান করে। মানুষের যাবতীয় মানবিক গুণাবলীর উৎস এ মস্তিষ্ক দেহের মূল্যবান রাজমুকুট।
শত শত বছর আগ থেকেই চিন্তাবিদ ও বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্ক নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। মস্তিষ্কের ধাঁধাঁগুলোর সমাধান সম্ভব না বলে মনে করতেন কেউ কেউ। এখন ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের রহস্যজট খুলে যাচ্ছে। গত কয়েক দশকে বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্ক নিয়ে যে পরিমাণ তথ্য জেনেছেন তা এর আগের শত বছরের মস্তিষ্ক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়ে বহুগুণ বেশি। এর জন্যে অবশ্যই আধুনিক গবেষণা-প্রযুক্তির অগ্রগতিকে ধন্যবাদ দিতে হয়।
যে জ্যান্ত-যন্ত্রটা আমরা মাথার ভেতরে রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছি তা কিভাবে কাজ করে এই কৌতুহল যে শুধু বিজ্ঞানীদেরই হবে এমন নয়। মগজের কোথায় কি ঘটে সেটা জানার জন্যে আগ্রহ তো সবারই খানিকটা আছে। স্মৃতি কিভাবে মস্তিষ্কযন্ত্রে জমা থাকে, আমরা কেন স্বপ্ন দেখি, কেউ কেউ কেন নেশা ছাড়তে পারে না এ সব প্রশ্নের জট তো শেষপর্যন্ত মস্তিষ্ক গিয়ে আটকে যায়। এই মগজী-বস্তুটার কোন ঘরে কে বসত করে তা চিনতে পারলে উপরের প্রশ্ন সহ আরো নানা রহস্যের সুলুক-সন্ধান সহজ হবে।
মগজের কোথায় কে আছে
মস্তিষ্ককে আমরা একদল বিশেষজ্ঞের জোট হিসেবে কল্পনা করতে পারি। এই বিশেষজ্ঞরা একসাথে কাজ করে বলেই আইসক্রিম খেতে মজা লাগে, বন্ধুর সাথে দাবা খেলতে পারি, নতুন কিছু জানতে ভালো লাগে। কাজ করার সুবিধার জন্যে এই বিশেষজ্ঞরা মস্তিষ্কের বিভিন্ন এলাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছে। প্রত্যেক অঞ্চলেরই নিজস্ব বিশেষ দক্ষতা আছে। মস্তিষ্কের কোন অংশ কি ধরনের কাজ করতে দক্ষ তা মোটাদাগে দেখে নেয়া শুরু করি চলুন। মস্তিষ্ককে তিনটি মৌলিক ভাগে ভাগ করা যায়। ফোরব্রেইন, মিডব্রেইন ও হিন্ডব্রেইন।
হিন্ডব্রেইন আমাদের সুষুন্মাকান্ড বা স্পাইনাল কর্ডের উপরের অংশ এবং বলের মতো গোলগোল একদলা টিস্যু যথাক্রমে ব্রেন স্টেমও সেরেবেলাম নিয়ে তৈরি। হিন্ডব্রেইন দেহের শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণের মতো অত্যাবশ্যকীয় কাজ করে থাকে। আপনার নড়াচড়ার করার ক্ষমতার জন্য সেরেবেলামকে ধন্যবাদ দিতে পারেন। ক্রিকেট খেলা কিংবা পিয়ানো বাজানোর মতো কাজ করার সময় আমাদের যে ধরনের দেহ পরিচালনা করার কুশলতা লাগে তা নিয়ন্ত্রণ করে সেরেবেলাম। ব্রেইনস্টেমের উপরের অংশটি হলো মিডব্রেইন। এই মিডব্রেইন আমাদের প্রতিবর্তী ক্রিয়ার বা রিফ্লেক্সের জন্যে দায়ী। এই প্রতিবর্তী ক্রিয়া জিনিসটা কি? আপনাকে কেউ হঠাৎ ঘুষি দিলে আপনি মাথাটা সরিয়ে নেবেন একদিকে। এই সরিয়ে নেয়ার জন্যে আপনাকে কোন রকম চিন্তা করতে হয় না। কোন চিন্তাভাবনা না করেই প্রতিবর্তী ক্রিয়া প্রয়োজনের সময় দ্রুত কাজ করতে সাহায্য করে। আমাদের চোখের দ্রুত নড়াচড়া সহ অন্যান্য ঐচ্ছিক নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের যে রাস্তা তার একটা অংশ গিয়েছে এই মিডব্রেইনে। ফোরব্রেইনকে বলা হয় মস্তিষ্কের সর্বাধিক উন্নত ও বড় স্থান। এটা মূলত সেরেব্রাম ও সেরেব্রামের নিচের কিছু জিনিস নিয়ে তৈরি। ফেলুদা জটিল রহস্যের সমাধান করেন উল্লিখিত ফোরব্রেইন ব্যবহার করেই।
পাশে আপনি মস্তিষ্কের যে ছবিটা দেখেছেন তার কোন অংশটা আপনার নজর কেড়েছে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা হবে মস্তিষ্কের উপরের গোলাকার অংশটি। এটাই সেরেব্রাম। মস্তিষ্কের একদম উপরের স্তরে বসে সেরেব্রাম মানুষের সব ধরনের বৌদ্ধিক ক্রিয়াকর্মের উৎস হিসেবে কাজ করে। স্মৃতি সংরক্ষণ করে সেরেব্রাম। সেরেব্রামের কারণে আপনি পরিকল্পনা করতে পারেন, কল্পনা ও চিন্তা করতে পারেন।
সেরেব্রাম মাঝামাঝি একটা জায়গায় চিরের কারণে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। চিরের কারণে বিভক্ত সেরেব্রামের প্রতিটি ভাগকে বলা হয় হেমিস্ফিয়ার। চির দিয়ে আলাদা হওয়া সত্ত্বেও সেরেব্রামের হেমিস্ফিয়াররা পরস্পর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে একদলা মোটা স্নায়ুর সংযোগে। ‘একদলা’ বললেও আসলে দুইশ থেকে আড়াইশ স্নায়ুতন্তু এই যোগাযোগটা রক্ষা করে, যাদেরকে ডাকা হয় করপাস ক্যালুসাম নামে। দুই হেমিস্ফিয়ারকে একে অন্যের আয়না-প্রতিবিম্ব মনে হলেও আসলে কিন্তু তারা ভিন্ন। যেমন বাম হেমিস্ফিয়ার শব্দ তৈরির ক্ষমতা ধারণ করে। অন্যদিকে ডান হেমিস্ফিয়ার যুক্তিচিন্তা করার দক্ষতা নিয়ন্ত্রণ করে।
চিন্তার ভুগোল
সেরেব্রামের উভয় হেমিস্ফিয়ারকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। এসব ভাগ বিভিন্ন লোব নামে পরিচিত। যেমন ধরা যাক ফ্রন্টাল লোব। দুই হেমিস্ফিয়ারে দুইটি ফ্রন্টাল লোব কপালের ঠিক পেছনে অবস্থিত। যখন আপনি সারাদিন কি কি করবেন সেটা ঠিক করেন, ভবিষ্যতে কি কি হতে পারে তা কল্পনা করেন, কিংবা যুক্তির সুতোয় বুনে কোন আলোচনা করেন তখন এই দুইটি লোব অনেক পরিশ্রম করে। এই ফ্রন্টাল লোব সম্ভবত স্মৃতি স্বল্পসময়ের জন্য সংরক্ষণ করে করে কাজ করে। এর ফলে মস্তিষ্কে একটি বুদ্ধি বা ভবনা সাময়িক সময়ের জন্য জমা রেখে সমান্তরালে বিকল্প বুদ্ধি বা ভাবনা নিয়ে চিন্তা করা সম্ভব হয়। ফ্রন্টাল লোব দুইটির ঠিক পেছনেই আছে মোটর অঞ্চল। এই এলাকা ঐচ্ছিক পেশির নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে। বাম ফ্রন্টাল লোবের কাছেই আছে ব্রোকা-র অঞ্চল। বিজ্ঞানী ব্রোকার নামে নাম রাখা এই অঞ্চলে চিন্তাকে শব্দের রূপদান করা হয়।
আপনি যখন কোন রেস্টুরেন্টে বসে বটিকাবাব খান – কাবাবের স্বাদ, পোড়া পোড়া চেহারা, ধোঁয়াটে সুবাস উপভোগ করেন – তখন ফ্রন্টাল লোবের পেছনে প্যারাইটাল লোব সক্রিয়ভাবে কাজ করে। মোটর অঞ্চলের ঠিক পেছনে আর প্যারাইটাল লোবের সামনের দিকের অংশে অবস্থিত সেন্সরি বা ইন্দ্রিয়-অঞ্চল। এখানে তাপমাত্রা, স্বাদ, স্পর্শ, সারা শরীরের বিভিন্ন অংশের নড়াচড়ার খবর আসে। প্যারাইটাল লোবে পড়া এবং পাটিগণিতের অংক কষার কাজও করা হয়।
এই পৃষ্ঠার শব্দ ও ছবির দিকে যখন আপনি তাকিয়ে আছেন, আপনার মস্তিষ্কের পেছনে দুইটি লোব খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এরা হলো অক্সিপিটাল লোব। এটা মস্তিষ্কের শেষপ্রান্তের লোব, মস্তিষ্কের দৃশ্য সম্পর্কিত অঞ্চল এটি, চোখ দেখে পাওয়া সংকেত প্রক্রিয়াজাত করে ছবির সাথে সম্পর্কিত তথ্য স্মৃতিতে সংরক্ষণ করা তার কাজ।
সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারের আরেকটি লোব হলো টেম্পোরাল লোব। এরা প্যারাইটাল ও ফ্রন্টাল লোবের নিচে এবং দৃশ্য-অঞ্চলের সামনে অবস্থিত। আপনি যখন রবীন্দ্রসংগীত কিংবা শিরোনামহীনের গান শোনেন তখন আপনার মস্তিষ্ক এই লোবের কর্মকান্ডের মাধ্যমে সাড়া দেয়। প্রতিটি টেম্পোরাল লোবের উপরে একটি অঞ্চল আছে যা কান থেকে পাওয়া শব্দ-সংকেত বিশ্লেষণ করে। আর এই লোবের নিচের অংশ স্মৃতি তৈরি ও স্মরণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সেরেবেরাল কর্টেক্স
গাছের কান্ডকে যেমন ছাল-বাকল ঢেকে রাখে, তেমনি সেরেব্রাম ও সেরেবেলামের উপরিতলকে একধরনের কলা ঢেকে রাখে। একে বলে কর্টেক্স। কর্টেক্সের ল্যাটিন মানে হলো গাছের ছাল। মস্তিষ্কের বেশিরভাগ প্রকৃত-তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ হয় এই জায়গায়। যখন কেউ মস্তিষ্কের ধূসর কোষ নিয়ে কথা বলে তখন বুঝবেন সেরেব্রাল কর্টেক্সের কথা হচ্ছে। এই অঞ্চলের স্নায়ুকোয়গুলোর কোন আবরণ থাকে না যে কারণে এদেরকে ধূসর দেখায়। এখানকার অসংখ্য ভাঁজ আসলে উপরিতলের ক্ষেত্রফল বাড়ায়, ফলে ধূসর জিনিসের পরিমাণও বাড়ে। ধূসর বস্তুর পরিমাণ বাড়লে প্রক্রিয়াজাত করার জন্যে তথ্যের পরিমাণও বেড়ে যায়।
ইনার ব্রেইন
মস্তিষ্কের গভীরে রোপন করা আছে এমন কিছু অঞ্চল যারা সুষুন্মাকান্ড ও সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারের মাঝে দ্বাররক্ষী হিসেবে কাজ করে। এরা আমাদের আবেগীয় অবস্থা নিরুপন করে। এরা এতোটাই শক্তিশালী যে আমাদের আবেগীয় অবস্থা অনুযায়ী ঘটনার উপলদ্ধিকে বদলে দিতে পারে। ফলে একই ঘটনা বিভিন্নজন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে। প্রিয় মানুষের অপরাধ সহজেই আমরা ক্ষমা করে দেই, কিন্তু বাঁকা-চোখে-দেখা কারো সামান্য ত্রুটি নিয়ে পরচর্চায় মেতে উঠি। সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারের মতো এখানকার বিভিন্ন অঞ্চলগুলো জোড়ায় জোড়ায় আসে।
হাইপোথ্যালামাসের আকার একটা মুক্তোর মতো। এই ছোট্টো জায়গাটাতে অনেক কাজ হয়। হাইপোথ্যালামাস আপনাকে সকালবেলায় ঘুম থেকে জাগায়। কোন পরীক্ষা কিংবা ইন্টারভিউয়ের সময় আপনার রক্তে এড্রিনালিন ছড়িয়ে উত্তেজনা তৈরি করে। এটা আবেগ নিয়েও দারুণ জিমন্যাস্টিক খেলতে পারে। যার ফলে কখনো আমরা রাগী, অসুখী কিংবা নিঃশেষিত অনুভব করি। হাইপোথ্যালামাসের কাছেই আছে থ্যালামাস। থ্যালামাস স্পাইনাল কর্ড ও সেরেব্রামের মধ্যে তথ্য যাতায়াতে সাহায্য করে।
হাইপোথ্যালামাস ও থ্যালামাস থেকে বাঁকানো এক দলা স্নায়ুকোষ যায় হিপ্পোক্যাম্পাস নামের অঞ্চলে। এরা স্মৃতির হিসাব রাখে। দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি সংরক্ষণ ও প্রয়োজন মতো স্মৃতির স্মরণ করার কাজটা বেশ গুরুত্ব দিয়েই করে হিপ্পোক্যাম্পাস।
মানব মস্তিষ্ককর বিভিন্ন অংশ সুনির্দিষ্ট কাজের জন্যে দক্ষ। মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশ নিয়ে আরো বিস্তারিত জানাটা বেশ আগ্রহোদ্দীপক হবে অবশ্যই। যেমন ধরা যাক দর্শন – আমাদের চোখ ক্যামেরার মতো উল্টো বিম্ব সৃষ্টি করে রেটিনার গায়ে, কেবলমাত্র দৈর্ঘ্য-প্রস্থ দুই মাত্রার। এই বিম্ব থেকে সৃষ্ট তড়িৎরাসায়নিক সংকেত যখন অক্সিপিটাল লোবের দৃশ্য-কর্টেক্স বা ভিজুয়াল কর্টেক্সের স্নায়ুকে উত্তেজিত করে তখন মস্তিষ্ক সেই বিম্বের একটি ত্রিমাত্রিক প্রতিমা উপস্থাপন করে, আমরা আঁখিপটের ছবিতে গভীরতা অনুভব করি। এই কাজটি করার জন্য দৃশ্য-কর্টেক্সকে মস্তিষ্কের অন্যান্য এলাকার স্নায়ু থেকে ভিন্ন ও সুনির্দিষ্ট কিছু কাজে বিশেষ নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে হয়। কিন্তু মস্তিষ্কের আরেকটি গুণ আছে যা এই কর্মবিভাজনের সাথে সাংঘর্ষিক – মস্তিষ্ক কাজের দিক দিয়ে নমনীয়, Plastic। তার অর্থ হলো মস্তিষ্কের এক অংশ যে কাজের জন্য দক্ষ, সেটা ছাড়াও ভিন্ন কোন কাজের জন্যে নিজেকে পরিবর্তিত করতে পারে, নতুন কাজ শিখতে পারে। এই নমনীয়তার কারণে সম্ভব হচ্ছে এমন যন্ত্র তৈরি করা যার সাহায্যে জন্মান্ধরাও দেখতে পারছে। মস্তিষ্কের কর্মবিভাজন এবং এর নমনীয়তা — এই দুইটি গুণ নিয়ে আরো আলোচনা করা যাক। কর্মবিভাজনের জন্য আমরা চোখের মাধ্যমে দেখার উদাহরণকেই প্রাধান্য দেবো।
[আরাফাত রহমানের মস্তিষ্ক, ঘুম ও স্বপ্ন বই থেকে । বইটি ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞানপত্রিকায় প্রকাশ করা হবে।]
[বইয়ের সূচীপত্র তথা সবগুলো লেখা একত্রে পাবেন এখানে]
⚫ আরাফাত রহমান
প্রভাষক, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
[ফেসবুক প্রোফাইল]
খুব সুন্দর প্রবন্ধ ! অনেক কিছু জানতে পারলাম !