এইচআইভি ভাইরাসকে মানব ডিএনএ থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হলেন বিজ্ঞানীরা!!

0
452

এইচআইভি ভাইরাস যদি একবার মনুষের দেহের কোন কোষে প্রবেশ করতে পারে তবে সেখানে চিরকাল থেকে যায়। এই ভাইরাসটি তার মারাত্মক জেনোম আক্রান্ত ব্যক্তির ডিএনএ তে স্থায়ীভাবে ঢোকায় এবং তাকে চিকিৎসকের দারস্থ হতে বাধ্য করে।

কিন্তু ফিলাডেলফিয়ার গবেষকরা প্রথমবারের মতো এইচাইভি ভাইরাসকে ছাঁটাই (snipping) পদ্ধতির মাধ্যমে মানব ডিএনএ থেকে স্থায়ীভাবে মুছে ফেলার পথ বের করেছেন। টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষক দল বলেন, মানব কোষ থেকে সুপ্ত এইচআইভি-১ ভাইরাসটি বাদ দেয়ার প্রথম প্রয়াসটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং এই পদ্ধতিতে অন্যান্য সুপ্ত সংক্রামক থেকেও নিরাময় পাওয়া সম্ভব হবে।

টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামেল খলিলি বলেন, “এইডস থেকে চিরতরে আরোগ্য লাভে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।” তিনি আরও বলেন, “এটি অসাধারণ আবিষ্কার হলেও পদ্ধতিটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। আমার যে সঠিক পথেই এগুচ্ছি এটা তারই প্রমাণ বহন করছে।”

জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি প্রকাশিত একটি গবেষণায় ড. খলিলি এবং তাঁর সহযোগীরা বর্ণনা করেন কিভাবে ডিএনএ থেকে এইচআইভি-১ দূর করার জন্য আনবিক সরঞ্জাম তৈরি করেছেন।

যখন নিউক্লিয়েজ নামক ডিএনএ-ছাটাই এনজাইম এবং একটি গাইড আরএনএ (gRNA) সংমিশ্রন ছেড়ে দেয়া হয় তারা দুষিত জিনোমকে অনুসরণ করে এবং ডিএনএ থেকে এইচআইভি-১ অপসারণ করে। সেকান থেকে কোষের জিন মেরামতকারী যন্ত্রাপাতি লাগানো হয়। যা কোষকে ভাইরাস মুক্ত করার ফলে আলগা হওয়া জিনোমের প্রান্ত ঝালাই করে দেয়।

খলিলি ব্যাখ্যা করেন, “যেহেতু ইমিউন সিষ্টেম থেকে এইচআইভি-১ মুক্ত করা সম্ভব নয় তাই রোগটি নিরাময় করার জন্য ভাইরাসটি অপসারণ করার প্রয়োজন পড়ে।” এই আনবিক যন্ত্রগুলি থেরাপিউটিক টিকার মতোও কাজ করে। সশস্র কোষ এবং নিউক্লিস আরএনএ-র সংমিশ্রণকে এইচআইভি সংক্রমণ ভেদ করতে পারেনা।

বিশ্বব্যাপী ৩৩ মিলিয়ন মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত যার মাঝে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্ত অন্তঃত ১ মিলিয়ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কন্দ্রের হিসেবে প্রতিবছর আরও ৫০ হাজার আমেরিকান এই ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়। এদিকে যুক্তরাজ্যে ২০১৩ তে ১লক্ষ মানুষ এইচআইভি নিয়ে বসবাস করেছে যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৬৫ জনে একজন।

যদিও উন্নত দেশগুলিতে গত ১৫ বছর পর্যন্ত সংক্রমিত মানুষদের Highly active antiretroviral therapy (Haart)পদ্ধতির মাধ্যমে এইচআইভি-১ নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। তবে চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে নতুন আক্রোশে ফিরে আসতে পারে।

খলিলি আরোও বলেন, “স্বল্পমাত্রার এইচআইভি-১ এর পুনরাবৃত্তি সাধারণত রোগীদেরকে বাধৃক্যগ্রস্ততার সাথে সাথে ভোগান্তিতে ফেলে।” আর এই সকল আক্রান্ত ব্যাক্তির ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গ্রহণকৃত বিভিন্ন বিষাক্ত ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলাফল হিসেবে হৃদপিন্ডের পেশী দুর্বল করা, হাড়ের রোগ, কিডনী বিকল করাসহ স্নায়বিক ভাসাম্যহীনতাজনিত সমস্যাগুলি প্রায়ই দেখা যায়।

rbc

এই সংক্রমণ রোধে গবেষকরা দ্বিস্তর ভিত্তিক এইচআইভি-১ সম্পাদন পদ্ধতির উপর নির্ভর করেছেন যা ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরক্ষার প্রক্রিয়া হিসেবে উন্নতি সাধন করা হয়েছে।

ড. খলিলির গবেষণাগারে এইচআইভি-১ ডিএনএ কে নিশানা করার জন্য gRNA এর নিওক্লিওটাইড প্রস্তুত করে তা ডিএনএ ছাটাইকারী এনজাইম যাকে Cas9 নামে ডাকা হয় তার সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে। এটি মূলত মানুষের জিনোমকে সম্পাদনার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ড. খলিলি বলেন, “ আমরা কিছু সংখ্যক কৌশল ব্যবহার করে কাজগুলি চালিয়ে যাচ্ছি যাতে আমরা চিকিৎসাক্ষেত্র পূর্ব গবেষণা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারি। আমরা রেগীর দেহ থেকে এইচআইভি-১ এর প্রত্যেকটা অংশ নির্মূল করতে চাই। তারা এইডস থেকে মুক্তি পাবে। আমি মনে করি এই প্রযক্তির মাধ্যমেই কাজটি আমরা সম্পাদন করতে পার।”

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.