টাইটানে কয়েক শত মিটার গভীর খাদের সন্ধান পেয়েছে ক্যাসিনি

0
404

পৃথিবী ছেড়ে সৌরজগতের কোথাও যদি বসবাসের কথা ভাবা হয় তাহলে মঙ্গল ও চাঁদের পরে শনির উপগ্রহ টাইটানের নামও চলে আসে। কারণ উপগ্রহ হলেও এতে এমন কিছু সুবিধা এবং এমন কিছু উপাদানের উপস্থিতি আছে যা ব্যবহার করে প্রাণ ধারণ করা সম্ভব। সমস্ত বায়ুমণ্ডল জুড়ে নাইট্রোজেনের রাজত্ব। পাশাপাশি মিথেন ও ইথেনের যৌগ মিলে বায়ুমণ্ডলে গ্যাসাচ্ছন্ন কুয়াশার সৃষ্টি করে রেখেছে। কিছু কিছু এলাকায় অতি-শীতল মিথেন তরলিত অবস্থায় নদীর মতো বয়ে চলে। শনির উপগ্রহগুলোর মাঝে সবচেয়ে বড় এটি। এই উপগ্রহটিকে পর্যবেক্ষণের জন্য ক্যাসিনি স্পেসক্রাফট প্রেরণ করা হয়। ক্যাসিনির দেয়া সাম্প্রতিক তথ্য বলছে টাইটানের বুকে কয়েক শত মিটার গভীর খাঁদের অস্তিত্ব আছে এবং ঐ খাঁদে মিথেন বয়ে চলে। সময়ে সময়ে এই এলাকায় মিথেনের বন্যাও হয়।

খাদগুলো ২৪০ থেকে ৫৭০ মিটার গভীর (৭৯০ থেকে ১৮৭০ ফুট)। খাঁদগুলো খুব বেশি প্রশস্ত নয়, আধা মাইলের চেয়েও কম। খাঁদের ঢাল খুব খাড়া। গড়পড়তা ৪০ ডিগ্রি কোণে হেলানো। এই খাঁদের তলদেশে বিজ্ঞানীরা তরলিত হাইড্রোকার্বন (মিথেন)-এর সন্ধান পেয়েছেন। তরলিত এই মিথেনগুলো টাইটানের সাগর থেকে এসেছে। জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার জার্নালে বিজ্ঞানীরা তাদের এই অনুসন্ধান ও প্রাপ্তির বিস্তারিত ফলাফল প্রকাশ করেছেন।

এর পৃষ্ঠ পৃথিবী থেকে ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পরিমাণ বেশি শীতল। এর উত্তর মেরুর পাথুরে ভূমিতে তিনটি মিথেনের সাগর আছে এবং কয়েক ডজন ক্ষুদ্র খাল আছে। সাগরগুলোর নাম ক্রাকেন মেয়ার, পাঙ্গা মেয়ার ও লিজিয়া মেয়ার। জ্যোতির্বিদরা বলছেন খাঁদগুলো লিজিয়া মেয়ারের পাশেই অবস্থিত এবং লিজিয়া মেয়ার থেকেই তরলিত শীতল মিথেন ওখানে যায়। গবেষকরা এখনো নিশ্চিত নন কীভাবে এই খাঁদগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। দ্রুত গতির কিংবা স্বল্প গতির ভূমিক্ষয় কিংবা অকস্মাৎ ভূমির পরিবর্তন কিংবা সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতার পরিবর্তন দায়ী থাকতে পারে এর পেছনে। সবগুলোর সম্ভাবনার কথাই ভেবে দেখা হচ্ছে।

পৃথিবীর বেলায় এমন ধরনের খাঁদের উদাহরণ প্রচুর আছে। সবচেয়ে বিখ্যাত খাঁদ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। গভীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তৈরি হয়েছিল কলোরাডো নদীর আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে। নদীর আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হওয়া খাঁদের এমন উদাহরণ আরো অনেক আছে পৃথিবীব্যাপী।

 গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। ছবিঃ travel.aarp.org
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। ছবিঃ travel.aarp.org

এই গবেষণার সাথে যুক্ত গবেষক পজিয়ালি একটি বিবৃতিতে বলেন “হতে পারে একসাথে কয়েকটি নিয়ামকের উপস্থিতির ফলে টাইটানে গভীর খাঁদের সৃষ্টি হয়েছিল। এটা এখনো পরিষ্কার নয় কোন নিয়ামক কত মাত্রায় উপস্থিত থেকে কাজ করেছিল।”

খুবই স্বল্প পরিমাণ অক্সিজেন এবং পানির অস্তিত্বহীন এই অদ্ভুত উপগ্রহটি জ্যোতির্বিদদের বিশেষ আগ্রহের স্থান। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন এতে ভিন্ন ধরনের প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই কোষ মেমব্রেনের সিম্যুলেশন করে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন অক্সিজেন বা পানির অস্তিত্ব ছাড়াও মিথেন বা এই জাতীয় উপাদানের উপস্থিতিতে বিশেষ ধরনের প্রাণ বিকশিত হতে পারে। অর্থাৎ তাত্ত্বিকভাবে এই গ্রহটিতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব।

বিজ্ঞানীদের নতুন এই আবিষ্কার টাইটানের ভূতাত্ত্বিক বিবর্তন সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার করবে এবং পরবর্তী গবেষণায় সাহায্য করবে। হয়তোবা টাইটানের প্রাণ সম্বন্ধেও অনেক জিজ্ঞাসার সমাধান দিতে পারবে এই আবিষ্কার।

-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.