বই পড়ুয়ারা তুলনামূলকভাবে বেশি দিন বাঁচে!

0
306

বইয়ের পোকাদের জন্য সুখবর। নতুন একটি গবেষণা বলছে যেসকল মানুষদের প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৩০ মিনিট করে বই পড়ার অভ্যাস আছে তারা সাধারণ মানুষের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশিদিন বাঁচে। যারা বই পড়ে না তাদের চেয়ে প্রায় দুই বছর বেশি বাঁচে বই পড়ুয়ারা। ৩ হাজার ৬৩৫ জন মানুষের উপর চালানো একটি জরিপ থেকে এই তথ্য বেরিয়ে আসে। জরিপে অংশ নেয়া সকলের বয়সই ছিল ৫০ এর চেয়ে বেশি।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর একদল গবেষক পড়ুয়াদের নিয়ে এই অনুসন্ধান পরিচালনা করেন। তারা বলছেন, সপ্তাহে অন্তত সাড়ে তিন ঘণ্টা করে পড়লেই তা আয়ুর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মানুষ থেকে ভিন্নতা সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। গবেষকরা তাদের অনুসন্ধানের ফলাফল সোশ্যাল সায়েন্স এন্ড মেডিসিন জার্নালের সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রকাশ করেন।

জরিপের জন্য গবেষকরা পঞ্চাশোর্ধ সাড়ে তিন হাজারের চেয়েও বেশি পরিমাণ মানুষকে বিবেচনা করেন। তারা এদেরকে তিন ভাগে ভাগ করেন। যারা সপ্তাহে সাড়ে তিন ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় পড়ায় কাটায় তারা এক দলে, যারা সপ্তাহে সাড়ে তিন ঘণ্টার চেয়ে কম সময় কাটায় তারা আরেক দলে, যারা একদমই পড়ে না তারা অন্য আরেক দলে। তাদের লিঙ্গ, জাতি, শিক্ষা সম্পর্কিত তথ্য বিবেচনায় আনেন। তাদের উপর এই পর্যবেক্ষণ টানা ১২ বছরের চেয়েও বেশি সময় ধরে চালিয়ে যান গবেষকরা। ১২ বছর পর তারা দেখতে পান যারা বই পড়ার পেছনে সাড়ে তিন ঘণ্টার চেয়ে বেশি সময় পার করে তারা অন্যদের তুলনায় বেশি পরিমাণ সময় বাঁচে। যারা একদম পড়েই না তারা পড়ুয়াদের চেয়ে কম আয়ু পায়। যারা বই পড়ায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেয়ে কম সময় পার করে তারা আয়ুর দিক থেকে দুইয়ের মাঝামাঝিতে অবস্থান করে।

বই পড়ার অভ্যাস থাকলে তা আপনাকে দিতে পারে বাড়তি উপযোগ। ছবিঃ Alamy
বই পড়ার অভ্যাস থাকলে তা আপনাকে দিতে পারে বাড়তি উপযোগ। ছবিঃ Alamy

তবে বৈজ্ঞানিক দিক থেকে এই অনুসন্ধানে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। অনুসন্ধানকারীরা শুধু বই পড়ার সাথে বই পড়ুয়াদের আয়ুর সম্পর্ক অনুসন্ধান করেছেন। ঠিক কোন কারণে বা ঠিক কীসের জন্য এমনটা হয় তা অনুসন্ধান করেননি। এই ঘটনার কার্যপ্রণালী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এ সম্পর্কে আরো গবেষণা ও অনুসন্ধান করে যাওয়া দরকার।

কিছু কিছু গবেষক মনে করছেন বই পড়ার সময় পাঠক যে মগ্ন থাকে এবং ধীরে সুস্থে কাজ করে তা আয়ুর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে। মগ্ন হয়ে বইকে আত্মস্থ করার সময় মস্তিষ্কের ভেতর যে কার্যপ্রণালী চলে তা মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অঞ্চলকে উদ্দীপিত করে। এর মানে হচ্ছে শারীরচর্চা করলে যেমন শারীরিক ব্যায়াম হয়, তেমনই বই পড়লে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয়। শারীরিক ব্যায়ামে যেমন দেহ ও মনের উপকার হয় তেমনই মস্তিষ্কের ব্যায়ামেও দেহ ও মনের উপকার হয়। কারণ দেহের সকল কার্যপ্রণালী মস্তিষ্কের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়। মস্তিষ্ক অসুস্থ হওয়া মানে দেহ অসুস্থ হয়ে যাওয়া, মস্তিষ্ক চনমনে থাকা মানে দেহও চনমনে থাকা।

– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.