সাধারণভাবে বলা যায়, যখন এমন নতুন কিছু করা হয় যা সাধারণ মানুষের এমনকি কল্পনারও বাইরে থাকে তখন বাজারে বিপ্লব সাধিত হয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এধরনেরই একটি বিপ্লব। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে খুব সামান্যই মানুষের হাতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে একটি হলো প্রিজমা। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রিজমাল্যাব স্মার্টফোনের জন্য এমন একটি অ্যাপ ছেড়েছে যা আলোড়ন তুলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
নানাবিধ ছবি সম্পাদনার সফটওয়্যার প্রচলিত আছে বাজারে। এর মধ্যে অ্যাডোবি ফটোশপ ছবি সম্পাদনার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয়। এতে রয়েছে নানাবিধ ফিল্টার, যেগুলো ব্যবহার করে ছবিতে নানা ধরনের ইফেক্ট তৈরি করা যায়। এছাড়াও ইনস্টাগ্রাম ওয়েবসাইটের ফিল্টারগুলোও বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু প্রিজমা বাজারের আসার পর এর ফিল্টার ইফেক্টের জন্যপ্রিয়তা অন্য সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। কি এমন আছে প্রিজমায়, যার ফলে ছবিগুলো এত শৈল্পিক এত মনভোলানো হয়ে উঠছে?
অন্যান্য ছবি সম্পাদনার সফটওয়্যারের সাথে প্রিজমার পার্থক্য হলো এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা হয়েছে যার ফলে এটি আসলে সুনির্দিষ্ট কোনো ফিল্টার ব্যবহার করে না, বরং একটি ছবির আঙ্গিক বুঝে নিয়ে বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে এটি পুনরায় নতুন করে ছবিটি আঁকে। এটি ছবি রূপান্তরের জন্য এটিকে খ্যাতিম্যান শিল্পীদের বিখ্যাত ছবিগুলো যেমন: এডভার্ড মান্চ এর “দ্যা স্ক্রিম”, রয় লিচেনস্টেইনের “গো ফর ব্যারোক” ইত্যাদির সাথে তুলনা করে এবং সেই সাথে ভ্যানগগ, পিকাসো প্রভৃতি প্রথম সারির চিত্রশিল্পীর ছবি আঁকার ঘরানা ব্যবহার করে ফলে ছবিটি শুধু একটি ফিল্টারযুক্ত ছবি থাকে না বরং একটি শিল্প হয়ে ওঠে।
ফিল্টার প্রয়োগের জন্য এই এ্যাপ্লিকেশনটি নিউরাল নেটওয়ার্ক, কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা এবং ক্লাউড-বেইজড ম্যাশিন লার্নিং এই তিনের সমন্বয় ব্যবহার করে ফলে ছবিগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই অ্যাপটি মানুষ, পশুপাখি এবং অন্যান্য জড়বস্তুগুলোকে আলাদাভাবে সনাক্ত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ীই সেই বস্তুগুলোতে ইফেক্ট তৈরি করে। প্রিজমার অন্যন্য শিল্পবোধের কারণেই অ্যাপ্লিকেশনটি ছাড়ার মাত্র কয়েকঘন্টার মধ্যে এটি ১ কোটি বার ডাউনলোড করা হয়ে যায়। প্রিজমা অ্যাপটিতে সময়ের সাথে নতুন নতুন ফিচার যুক্ত হবে বলে জানান এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অলেক্সি ময়সিনকভ। শুরুতে শুধুমাত্র অ্যাপলের আইফোনের জন্য ছাড়া হলোও এখন এন্ড্রয়েড ফোনের জন্যও পাওয়া যাচ্ছে এই অ্যাপটি।
প্রিজমার অ্যাপে ব্যবহার করা এলগরিদমকে আরো উন্নততর করে তোলা হচ্ছে। এর ফলে এই আরো কমসময়ে ইফেক্টগুলো তৈরি করতে পারবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এই নতুন এ্যালগরিদম ব্যবহার করে প্রিজমাকে স্থির ছবি থেকে ভিডিওতেও ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হচ্ছে।