জ্বালানীর জন্য কোনো প্রকার যাত্রা বিরতি ছাড়াই একটানা ২৩ দিন ব্যাপী ৪৩ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করে পৃথিবী প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করেছে সৌরচালিত বিমান ‘সোলার ইমপালস- ২’।
গত মঙ্গলবার ঐতিহাসিক এই পৃথিবী ভ্রমণ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিহাসে এটিই প্রথম বিমান যা সম্পূর্ণ সৌর শক্তিকে ব্যবহার করে পুরো পৃথিবী পাক দিয়েছে। পরিবেশ দূষক তেল-গ্যাসকে নিরুৎসাহিত করতে এবং নবায়নযোগ্য সৌর শক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়।
ভ্রমণ সম্পন্ন করে এটি যখন আবুধাবিতে অবতরণ করে তখন এর পেছনে শ্রম দেয়া মানুষদের করতালি আর উল্লাসে ফেটে পড়ে এলাকা। এই প্রকল্পের প্রধান সুইডেনের অনুসন্ধিৎসু বার্ট্রার্ন্ড পিকার্ড তখন ককপিটে ছিলেন। কায়রো থেকে শুরু করে লোহিত সাগর অতিক্রম করে সৌদির মরুভূমি পেরিয়ে এটি আবুধাবিতে এসে নামে। এতে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছিল।
২৩ দিনের দীর্ঘ এই ভ্রমণে এটি চারটি মহাদেশ, দুটি সমুদ্র ও তিনটি সাগর পাড়ি দেয়। এতে মোট অতিক্রম হয় ২৬ হাজার ৭০০ মাইল (৪৩ হাজার কিলোমিটার)। যাত্রাপথে জ্বালানীর জন্য কোনোপ্রকার বিরতি দিতে হয়নি। অবতরণ করার পর উল্লাসের সাথে পিকার্ড বলেন “আকাশ ভ্রমণের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, আকাশ ভ্রমণের ভবিষ্যৎ শুরু হলো এখন থেকে, আমাদের সবাই মিলে একে এগিয়ে নিতে হবে।”
তিনি আরো বলেন “একটা জিনিস আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, আকাশ ভ্রমণের ইতিহাসে এটি যেমন একটি মাইল ফলক অর্জন করেছে তেমনই শক্তির ব্যবহারের ইতিহাসেও এটি মাইল ফলক অর্জন করেছে। (জ্বালানী) সমস্যার জন্য আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ সমাধান ও যথেষ্ট পরিমাণ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা আছে, আমাদের কারো উচিৎ নয় পৃথিবীকে দূষণের জ্বালানীর হাতে তুলে দেয়া।”
বিমান অবতরণ করার এক ঘণ্টা আগে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এক ভিডিও কথোপকথনে তাঁদের সাধুবাদ জানান।
সৌরশক্তি চালিত বিমানের বাস্তবায়ন সম্পন্ন করার জন্য বার্ট্রান্ড পিকার্ড ও আন্ড্রে বর্শবার্গ অনেক দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছিলেন। তাঁরা এর পেছনে গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাস্তবায়নের জন্য এক যুগেরও বেশি সময় ব্যয় করেছেন। অবশেষে তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো।
সোলার ইমপালস তেমন ভারী নয়, সাধারণ একটি গাড়ির মতোই ভর। তবে ভরে কম হলেও ডানার দিক দিয়ে একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমান থেকেও লম্বা। এত বেশি লম্বা হবার কারণ এটি ডানায় ১৭ হাজারের মতো সৌর কোষ বহন করে। এই সৌর কোষ ৯৪২ কেজি লিথিয়াম ব্যাটারির সমমানের চার্জ সংগ্রহ করতে পারে। ফলে রাতের বেলা যখন সূর্যের উপস্থিতি থাকে না তখন এত পরিমাণ ব্যাটারির চার্জ একে উড়তে সাহায্য করে। এই চার্জ একটি বিমানকে উড়িয়ে নেবার জন্য যথেষ্ট।
তবে এই মুহূর্তে এতে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এটি এখনও যাত্রী বহনের জন্য উপযুক্ত নয়। ককপিটে মাত্র একজন বা বড়জোর দুইজন বসার জায়গা আছে মাত্র এতে। অবশ্য এটি মাত্র পরীক্ষামূলক শুরু। ধীরে ধীরে অবশ্যই একে আরো উন্নত করা হবে, তখন সাধারণ যাত্রী বহনের উপযুক্ত হয়ে উঠবে সৌরশক্তি চালিত বিমান। এর জন্য সংশ্লিষ্টরা কাজ করে যাচ্ছেন।
লিখেছেনঃ সিরাজাম মুনির শ্রাবণ