পাঁচ বছরের মাঝেই অলঝেইমারের ভ্যাকসিনঃ গবেষকদের দাবী

0
230

নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত নতুন একটি গবেষণা বলছে আরোগ্য লাভ করা যায় না এমন মানসিক রোগ অলঝেইমারের ভ্যাকসিনের স্বপ্ন পাঁচ বছরের মাঝেই বাস্তব হতে পারে। এটি হলে অল্প সময়ের মাঝেই সেটি এই ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থকরণে ব্যবহার করা যাবে।

উল্লেখ্য অলঝেইমার হচ্ছে এক প্রকার মারাত্মক মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে ব্যক্তি স্মৃতিভ্রষ্টতায় ভোগে। কোনো কিছুই মনে থাকে না। ক্ষেত্রবিশেষে অবাস্তব কল্পিত দৃশ্য দেখতে পায়। অলঝেইমার কেন ও কীভাবে সংঘটিত হয় কিংবা এর ম্যাকানিজম কী তা এখনো শতভাগ পরিষ্কার নয়। শতভাগ পরিষ্কার না হলেও এ সম্পর্কে অনেক তথ্যই আছে বিজ্ঞানীদের কাছে। বিজ্ঞানীরা জানেন যে এমিলয়েড বিটা (a-beta) এবং টাউ (tau) নামে দুটি প্রোটিন অলঝেইমার রোগ সৃষ্টির জন্য মস্তিষ্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রোটিনগুলো যখন নষ্ট হয়ে যায় তখন এরা স্নায়ুকোষের সংযোগে বাধা হিসেবে কাজ করে।

ট্যাপের পানি প্রবাহের পাইপে যদি কিছু পরিমাণ ছোট বড় ইট সুরকির কণা প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয় তাহলে তাতে অবধারিতভাবে পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটবে। কার্যকরিতা নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রোটিন কণাও অনেকটা ইটের কণার মতো কাজ করে। এতে মস্তিষ্কের কোষে পরস্পর তথ্য আদান প্রদানে সমস্যা হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন অলঝেইমার আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্কে এই ধরনের নষ্ট প্রোটিন কণার আধিক্য থাকে।

নষ্ট প্রোটিনের এই বৈশিষ্ট্যকে টার্গেট করেই বিজ্ঞানীরা অলঝেইমারের ভ্যাকসিন তৈরিতে নেমেছেন। তারা এমন একটি উপাদানের ডিজাইন করেছেন যা বিঘ্ন সৃষ্টিকারী প্রোটিনগুলোকে সরিয়ে দিবে কিংবা নিউরনের সংযোগের রাস্তাকে পরিষ্কার করে দিবে। এর ফলে নিউরনের সিগনাল সঠিক রাস্তায় সঠিকভাবে প্রবাহিত হবে। যা অনারোগ্য অলঝেইমারকে আরোগ্য লাভ করার পথ দেখাবে। এবিসি নিউজকে ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এমনটাই জানিয়েছেন।

ভ্যাকসিন তৈরিতে দুটি প্রোটিনকে টার্গেট করা হয়েছে যেগুলো অলঝেইমারের জন্য দায়ী।
ভ্যাকসিন তৈরিতে দুটি প্রোটিনকে টার্গেট করা হয়েছে যেগুলো অলঝেইমারের জন্য দায়ী। ছবিঃ Nic MacBean

অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি ও ইন্সটিটিউট অব মলিকিউলার মেডিসিন-এর গবেষকরা একত্রে মিলে অলঝেইমারের ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণাটি করেন এবং এর প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিনের ডিজাইন করেন। পাঁচ বছরের ভেতর এই ডিজাইন বাস্তবে রূপ লাভ করলে তা মানসিক চিকিৎসায় বিপ্লব বয়ে আনবে।

ইতিমধ্যে এই পদ্ধতি অবশ্য অন্যান্য প্রাণীর উপর প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রাণীর উপর প্রয়োগ করা হলেও তা মানুষের উপর প্রয়োগের উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি এখনো। প্রাণীর উপর প্রয়োগ করে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। পরীক্ষায় দেখা যায় ভ্যাকসিনের এন্টিবডিগুলো a-beta কণাগুলোর উপর ভালো কাজ করে। তবে এ কার্যকরিতা রোগের চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছার আগে সক্রিয় থাকে। অন্যদিকে tau কণার উপরে এর কার্যকরিতা রোগ চূড়ান্ত অবস্থায় থাকার পরেও সক্রিয় থাকে। মানুষের উপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার কার্যক্রম চলছে। গবেষকরা জানিয়েছেন পাঁচ বছরের ভেতরেই প্রয়োজনীয় সবকিছু সম্পন্ন করে মানুষের উপযুক্ত হয়ে ওঠবে এই পদ্ধতি।

-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.