এবারের অ্যাবেল পুরষ্কার পেলেন ব্রিটিশ গণিতবিদ স্যার এন্ড্রু উইলস। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক। ফার্মার শেষ উপপাদ্যের প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য তিনি এই পুরষ্কারে ভূষিত হন। গণিত জগতের সবচেয়ে বিখ্যাত অমীমাংসিত সমস্যা হচ্ছে ফার্মার শেষ উপপাদ্য। এই অমীমাংসিত সমস্যাটির সমাধান করে তিনি পৃথিবীতে বিরল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, এবং এবারের অ্যাবেল পুরষ্কার জিতে নেন।
গণিতের সবচেয়ে সম্মানিত পুরষ্কার অ্যাবেল পদক। পুরষ্কারের অর্থ হিসেবে দেয়া হয় ৬ মিলিয়ন নরওয়েজিয়ান ক্রোন। পুরষ্কার ঘোষণার সময় পুরষ্কার কমিটি থেকে বলা হয় “এন্ড্রু উইলসের সমাধান এতটাই চমৎকার ও নাটকীয় যে গণিতের খুব অল্প সংখ্যক সমাধানই এই পর্যায়ে পড়ে।”
ফার্মার শেষ উপপাদ্যটি অনেকটা এমন আকৃতির কোনো পূর্ণ সংখ্যার সমাধান পাওয়া যাবে না যখন n এর মান ২ এর চেয়ে বেশি। সর্বোচ্চ ২ পর্যন্ত এর স্বাভাবিক মান পাওয়া যাবে। যেমন পিথাগোরাসের উপপাদ্য । n এর মান ২ এর চেয়ে বেশি হলে ভগ্নাংশ বা দশমিক আকৃতির সংখ্যা চলে আসবে, সংখ্যা আর ‘পূর্ণ’ থাকবে না।
ফরাসী গণিতবিদ পিয়েরে ডি ফার্মা এই সমস্যাটিকে সূত্রবদ্ধ করেন। তাঁর একটা স্বভাব ছিল বইয়ের ফাঁকা জায়গায় লিখে রাখা। বইয়ের মার্জিনের দুইদিকে কিছু স্থান সাদা থাকে, ঐ স্থানে তিনি গণিত সম্পর্কিত এটা-ওটা লিখে রাখতেন। এক জায়গায় তিনি লিখেছিলেন যে তিনি নাকি এই সমস্যাটার একটা চমৎকার সমাধান খুঁজে পেয়েছেন কিন্তু বইয়ের পাতায় সমাধানটা লেখার মতো ফাঁকা জায়গা নেই বলে লিখতে পারেননি। পরবর্তীতে এটা অন্যান্য গণিতবিদদের পেয়ে বসে। তিনি তাঁর জীবনে খুব রহস্যময় চলাফেরা করতেন। কেউ কেউ ভাবলেন এই সমস্যাটা নিয়েও হয়তো তিনি রহস্য করে এটা লিখেছিলেন। হতে পারে সমস্ত গণিত দুনিয়ার সাথে এটা একটা রসিকতা। কেউ কেউ মনে করলেন সত্যিই হয়তো তিনি সমাধান পেয়েছিলেন। ফার্মার এই নোটের কারণে সমস্যাটি আরো রহস্যময় ও জনপ্রিয় হয়। তখন থেকে অনেকে লেগে পড়েন কী ছিল সেই সমাধান? ১৬৩৭ সাল থেকে শুরু করে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কেউ এই সমস্যার সমাধান করতে পারেননি।
শত শত বছর ধরে এটি নানান গণিতবিদদের আগ্রহী করেছে, ঘুম নষ্ট করেছে, ব্যর্থ করেছে। অনেকগুলো বছর পর ১৯৯৩ সালে এন্ড্রু উইলস এই সমস্যাটির একটি সমাধান উপস্থাপন করতে সমর্থ হন।
এন্ড্রু উইলস যখন খুব ছোট তখন থেকেই ফার্মার এই উপপাদ্য নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেছিলেন। শুধু আগ্রহীই না, বলা যায় অন্ধভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এই সমস্যাটি সমাধানে প্রচুর সাধনা করেন। তার ভাষায় “এই সমস্যাটি আমাকে এক ধরনের মোহে আবিষ্ট করে ফেলেছিল।”
দিনের পর দিন অধ্যবসায়ের পরিচয় দিয়ে তিনি ১৯৯৩ সালে সমাধানটি দাড় করান। নিশ্চিত হবার আগ পর্যন্ত তাঁর এই ফলাফল স্ত্রীকে ব্যতীত কাউকে জানাননি। এই বছরেই তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি লেকচারে তার প্রমাণ উপস্থাপন করেন। যখন তিনি তাঁর প্রমাণটি বোর্ডে লিখেন তখন সমস্ত হল ঘর করতালিতে ফেটে ওঠে।
পরবর্তীতে অবশ্য কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। একজন গণিতবিদ এন্ড্রু উইলসের করা প্রমাণে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ত্রুটি খুঁজে পান। পরবর্তীতে উইলস এই ত্রুটি সংশোধন করে আবারো উপস্থাপন করেন। এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এই বছর অর্জন করে নেন অ্যাবেল পুরষ্কার।
গত বছর এই পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছিলেন গণিতের কিংবদন্তী জন ন্যাশ। গেম থিওরি প্রদান করে অর্থনীতিতে নোবেলও পেয়েছিলেন তিনি। উল্লেখ্য ২০০১ সাল থেকে অ্যাবেল পুরষ্কার প্রচলন হয়। নরওয়েজিয়ান সরকার পুরষ্কার প্রদান করে থাকে। নরওয়ের গণিতবিদ নিলস্ হেনরিক অ্যাবেল এর নামানুসারে এই পুরষ্কারের নামকরণ করা হয়। গণিতবিদ অ্যাবেল উপবৃত্তীয় ফাংশন নিয়ে কাজ করে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।
⚫ সিরাজাম মুনির