অদ্ভুত আবিষ্কার! পতঙ্গে পাওয়া গেল যান্ত্রিক গিয়ার

0
689

প্রথম বারের মতো যান্ত্রিক গিয়ারের জৈবিক রূপ পাওয়া গেল এক ধরনের পতঙ্গের দেহে। Issus গণের অন্তর্ভুক্ত এই ধরনের পতঙ্গদের ইউরোপের বাগানে ও ক্ষেত খামারে পাওয়া যায়।

এই প্রজাতির পতঙ্গদের সামনের পায়ের জয়েন্টে এমন ধরনের খাঁজ আছে এবং ঐ খাঁজগুলোকে তারা এমনভাবে ব্যবহার করে যা অনেকটা যান্ত্রিক গিয়ারের মতো। পতঙ্গের দুই পা একই সময়ে চলনশীল করার জন্য তারা এই গিয়ার সদৃশ মেকানিজম ব্যবহার করে। পতঙ্গ যখন লাফ দেয় তখন দুই পা একই সময়ে চাপ দিতে হবে। যদি দুটির কোনোটা আগে বা পরে হয় তাহলে পতঙ্গ তার উদ্দিষ্ট লক্ষ্য থেকে সামান্য ডানে বা বামে চলে যাবে। যা তার শিকার কিংবা বেঁচে থাকার জন্য নেতিবাচক। পায়ে প্রাকৃতিক গিয়ারের ব্যবহার তাদেরকে এই নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।

উল্লেখ্য গিয়ার হচ্ছে এক ধরনের ঘূর্ণনশীল যন্ত্রাংশ। বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে আভ্যন্তরীণ গতি পরিবর্তনের জন্য গিয়ার ব্যবহার করা হয়। আশেপাশের সাইকেল রিকশা হতে শুরু করে অগণিত যন্ত্রে গিয়ার ব্যবহার করা হয়। আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার অন্যতম ভীত হচ্ছে এই গিয়ার। হাতের হোক বা দেয়ালের হোক, ঘণ্টা মিনিট ও সেকেন্ডের কাঁটাওয়ালা ঘড়ি দেখে থাকবেন হয়তো। ওসব ঘড়িতে কাটাগুলো পরস্পরের সাপেক্ষে আনুপাতিক হারে ঘোরানোর জন্য গিয়ার ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ঘড়িকে একটু খুলে নিলেই গিয়ারগুলো দেখা যাবে।

Picture2

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই প্রজাতির পতঙ্গের গিয়ার ব্যবহারের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সায়েন্স জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। সেখানে এর শারীরিক ও অঙ্গসংস্থানিক গঠনের বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং হাই স্পিড ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে এর পায়ের নড়াচড়া ও কার্যপ্রণালীর বিবরণ দেয়া হয়েছে। এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন কেমব্রিজের বিজ্ঞানী ম্যালকম বারোজ ও গ্রেগরি সাটন।

Picture5

gear-jumping
ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ যন্ত্রে দৃশ্যমান পতঙ্গের সামনের দিকের পায়ের গিয়ার ব্যবহারের ধরণ।

তবে কোনো এক বিচিত্র কারণে এই গিয়ার শুধু প্রজাতির তরুণ দশাতেই পাওয়া যায়। পতঙ্গেরা প্রাপ্তবয়স্ক হবার সাথে সাথে পায়ের গিয়ার উবে যায়। বড় হবার এক পর্যায়ে যখন খোলস বদলায় তখন গিয়ার অবলুপ্ত হয়ে যায়। কেন এই প্রজাতির পতঙ্গের গিয়ার অবলুপ্ত হয়ে যায় এটা এখনো অজানা। এই নিয়ে বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ধারণা প্রয়োজনের তাগিদেই বয়স্ক হবার সাথে সাথে গিয়ার অবলুপ্ত হয়ে যায়। পূর্ণবয়স্ক হয়ে গেলে এই পতঙ্গদের খোলস স্থায়ী হয়ে যায়। স্থায়ী হয়ে যাওয়া গিয়ারের কোনো একটি দাঁত যদি ভেঙে যায় তাহলে পুরো প্রক্রিয়াটিই নষ্ট হয়ে যাবে, যা পতঙ্গের চলাফেরার জন্য অসুবিধার সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে তরুণ বয়সে এদের বারবার খোলস বদলানোর সুযোগ থাকে। এই অবস্থায় গিয়ারের কোনো দাঁত ভেঙে গেলেও পরবর্তীতে ঠিকই সারিয়ে নেয়া যাবে।

পরিবর্তনশীল গিয়ার থাকাটা এই প্রজাতির পতঙ্গের জন্য ইতিবাচক আবার অন্যদিকে স্থায়ী গিয়ার থাকা নেতিবাচক। এই দোটানায় তারা হয়তো এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যেন মাঝামাঝি একটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা যায়।

Issus coleoptratus প্রজাতি। পূর্ণবয়স্ক হবার সাথে সাথে এদের ব্যতিক্রমী গিয়ার অবলুপ্ত হয়ে যায়।
Issus coleoptratus প্রজাতি। পূর্ণবয়স্ক হবার সাথে সাথে এদের ব্যতিক্রমী গিয়ার অবলুপ্ত হয়ে যায়।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.