শতাধিক নোবেল বিজয়ী এবং বিশ্বের নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানী জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অরগানিজম (Genetically Modified Organism, GMO) বিষয়ক বিতর্কে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। তাঁরা Greenpeace এবং অন্যান্য GMO বিরোধী সংস্থাগুলোর প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছেন।
সুনির্দিষ্ট ভাবে বললে বলতে হয়, তাঁরা সোনালী ধান (Golden rice) এর প্রকাশ্য বিরোধিতা হতে Greenpeance কে সরে যেতে বলেছেন। সোনালী ধান একটি জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য যাতে জিনে পরিবর্তনের মধ্যমে ভিটামিন-এ উৎপাদন করার ব্যবস্থা আছে এবং তা ভিটামিন ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে।
গবেষকগণ তাঁদের চিঠিতে বলেন, “তারা (GMO বিরোধীতাকারীরা) ঝুঁকি, উপকারীতা, প্রভাব এগুলোকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে এবং পাশ হওয়া গবেষনা প্রকল্পগুলোকে হুমকীর মুখে ফেলছে। কতজন গরীব মানুষ মারা গেলে আমরা এইধরনের কর্মকান্ডকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলব?”
গবেষকগণ GM শস্যের নিরপত্তাবিষয়ক বিপুল পরিমান গবেষনা এবং রিভিউ প্রকাশনা তুলে ধরে উল্লেখ করেন এ ধরনের শস্য সাধরনের সশ্যের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। বরং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য ২০৫০ সালের মধ্যে দ্বিগুন খাদ্য উৎপাদনের জন্য এটাই আমাদের সবচেয়ে ভালো সুযোগ। কিন্তু এতসব কিছুর পরেও, Greenpeace জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভয়াবহভাবে এই শস্যের ব্যাবহারের বিরুদ্ধে প্রচালনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং গবেষনার আওতাধীণ শস্য ধ্বংস করছে এবং বিজ্ঞানীদের কাজে নাশকতা সৃষ্টি করছে।
বিজ্ঞানীরা চিঠিতে লিখেছেন, “সারা বিশ্বের বৈজ্ঞানিক এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো সর্বদাই জৈব প্রযুক্তিতে উন্নতিকৃত শস্য এবং খাদ্যসমূহে নিরাপদ হিসেবে পেয়ে আসছে। এই ধরনের খাদ্য গ্রহণে প্রানী বা মানুষের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়েছে এখন পর্যন্ত এমনটি একটি ঘটনাও পাওয়া যায় নি।”
বিজ্ঞানীদের লেখা এই চিঠি “Support Precision Agriculture” নামক প্রচারণার অংশ এবং যা ১৯৯৩ সালের চিকিৎসার নোবেল বিজয়ী ফিলিপ শার্প এবং নিউ ইংল্যান্ড বায়ো ল্যাবের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রিচার্ড রবার্টের এর উদ্যোগে গঠিত। এটি এরই মধ্যে ২০০৯ এর চিকিৎসায় নোবেল বিজয়ী এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন, এবং গত বছরের নোবেল বিজয়ী টমাস লিনডাল এবং পল মড্রিচ সহ ১০৭ জন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী স্বাক্ষর করেছেন। ৩০ জুন এই প্রচারনা উপলক্ষ্যে ওয়াশিংটনে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বীজের নিয়ন্ত্রন চলে যাবে বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর হাতে, আর মুনাফার জন্য এরা যে যেকোন কিছু করতে পারে তার বহু প্রমাণ মানব ইতিহাসে আছে। এমন কি সবগুলো যুদ্ধ ও এদের স্বার্থেই হয়। বিজের মত জীবন রক্ষাকারী জিনিসের নিয়ন্ত্রন পেলে এরা মুনাফার জন্য এম্নিতেই মানুষ্কে না খাইয়ে মারবে।
জিএমও খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবহার এবারই প্রথম নয়, দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। আমাদের দেশে যে ইরিধান চাষ হয় সেটিও জিমও। ইরিধান ছাড়ায় আমাদের দেশে বিভিন্ন ফসলে জিএমও প্রয়োগ করে খাদ্যমান উন্নত করা হচ্ছে। সমস্যাটি জিএমও প্রযুক্তি বা বীজের নয়, সমস্যা হচ্ছে পলিসির। জিএমও ইস্যুতে কৃষকের স্বার্থ রক্ষা হবে কিভাবে সেই পলিসি সরকারের নীতি-নির্ধারকদেরই নিতে হবে।