আঁইশ, পালক, চুল এই সবকিছুর উৎপত্তি হয়েছে একই পূর্বসূরী থেকে

0
536

গিরগিটি, সাপ এবং কুমীরের ভ্রুন নিয়ে গবেষনা করে গবেষকদল উদ্ঘাটন করেছেন সরীসৃপের আঁইশ, পাখির পালক এবং স্তন্যপায়ীর চুল এই সবকিছু একটিমাত্র সরীসৃপ পূর্বসূরী হতে উৎপন্ন হয়েছে। এই আবিষ্কারটি এই সাপ্তাহে Science Advances জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

কয়েকদশক ধরেই বিজ্ঞানীরা এই জিনিসগুলোর একই বিবর্তনীয় উৎস নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত ছিলেন। যদিও এগুলোর বৃদ্ধি এবং গঠনকারী প্রোটিনের মধ্যে বিপুল পার্থক্য রয়েছে। তবে এই চামড়ার উপাঙ্গগুলোর সম্পর্ক নিদের্শক অন্তবর্তীকালীন কোনো ফসিল তথ্যের অভাব থাকায় এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ ছিলো না। তার উপরে আছে “anatomical placodes”। এগুলো বহিঃত্বকের পুরু তালির মতো যা সাধারণতঃ ভ্রুন বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে উপস্থিত থাকে। যদিও এই তালিগুলো চুল এবং পালকগঠনের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ করা যায়, কিন্তু আঁইশযুক্ত প্রানীর দেহে পর্যবেক্ষণ করা যায় না। যদি সরীসৃপের আঁইশ placode থেকে উৎপন্ন না হয় তাহলে পাখির পালক ও স্তন্যপায়ীর চুলের উৎপত্তির কারণ আঁইশ হতে পারে না বলে কিছু গবেষক যুক্তি দেখান। এ থেকে ধরে নেওয়া যায় আমাদের চুলের উদ্ভব ঘটেছে অন্য কোনো প্রাথমিক স্থলচর মেরুদন্ডী হতে।

কিন্তু এমনও হতে পারে সরীসৃপে placode এর উপস্থিতি স্রেফ উপেক্ষা করা হয়েছে কারণ ভ্রুনে এই বস্তুগুলো সনাক্ত করা খুব সহজ নয়। আণবিক প্রযুক্তি এবং চামড়ার টিস্যু বিশ্লেষন প্রয়োগ করে জেনোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নিকোলাস ডি পয়ই এবং মিশেল মিলিনকোভিচ নিল নদের কুমীর, কর্ণ সাপ এবং বেয়ারড ড্রাগণের ভ্রুণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

গাঢ় নীল রঞ্জকের মাধ্যমে সনাক্ত করা চুল, আঁইশ এবং পালকের placodes। বাম থেকে ডানে যথাক্রমে ইঁদুর, সাপ, মুরগী এবং কুমীরের ভ্রুন।
গাঢ় নীল রঞ্জকের মাধ্যমে সনাক্ত করা চুল, আঁইশ এবং পালকের placodes। বাম থেকে ডানে যথাক্রমে ইঁদুর, সাপ, মুরগী এবং কুমীরের ভ্রুন।

তাঁরা পর্যবেক্ষণ করেন সরীসৃপের ভ্রুনে খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র placode গঠিত হয় যা সবদিক থেকেই পাখির এবং স্তন্যপায়ী প্রানীর placode এর সাথে মিলে যায়। মিলিনকভিচ এক বিবৃতিতে বলেন, “তিন ধরনের চামড়ার অঙ্গানুই একই রকম। যদিও চূড়ান্ত আকার-আকৃতি ভিন্ন কিন্তু সরীসৃপের আঁইশ, পাখির পালক এবং স্তন্যপায়ীর চুল একই নির্দিষ্ট পুর্বসূরী থেকেই বিবর্তিত হয়েছে।”
সেই সাথে, আঁইশ, পালক এবং চুল এই সংকেতিক পথনির্দেশিকা মেনে চলে। গবেষকদলটি দেখেছেন, চুলের উদ্ভব ও বৃদ্ধির জন্য দায়ী জিন ectodysplasin A বা EDA, সরীসৃপের আঁইশের বৃদ্ধির জন্যও দায়ী। যদি স্তন্যপায়ী এবং পাখির দেহে EDA অকার্যকর থাকে তাহলে তাদের যথাযথ চুল ও পালক বিকাশিত হয় না। এই কারণে বিয়ার্ড ড্রাগনে যথাযথ আঁইশের placode তৈরি হয় না। মিউটেশন জনিত বিয়ার্ড ড্রাগনের একটি প্রকরণে আকারে ছোট আঁইশ তৈরি হয়। আর যদি কোনো ড্রাগনের দেহে একজোড়া মিউটেশনযুক্ত EDA থেকে (একটি বাবার দেহ থেকে এবং একটি মায়ের দেহ থেকে আসবে) তাহলে তারা আঁইশবিহীন হয়। কভারের ছবিতে আঁইশযুক্ত, খর্বাকৃতির আঁইশযুক্ত এবং আঁইশ ছাড়া এই তিনধরনের ড্রাগন দেখতে পাবেন।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.