মাইটোকনড্রিয়া ছাড়াই জিবাণু বাঁচতে পারে!

0
653

প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অনুযায়ী জটিল কোষগুলো [ইউক্যারিওটিক সেল] মাইটোকনড্রিয়া ছাড়া বাঁচতে পারেনা। আর মাইটোনড্রিয়া হচ্ছে অতি ক্ষুদ্র অঙ্গাণু যা কোষগুলোতে শক্তি, শ্বাস-প্রশ্বাসসহ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি এদের ক্ষুদ্র ব্যাটারি ভাবতে পারেন, যা কোষগুলোকে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে থাকে। কিন্তু তারা আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও করে থাকে। এদেরকে কোষের শক্তিঘর ও বলা হয়ে থাকে। সম্প্রতি কানাডা এবং চেকপ্রজাতন্ত্রে কর্মরত বিজ্ঞানীরা মাইটোকনড্রিয়াল ব্যাটারি ছাড়া একটি ইউক্যারিওটিক কোষ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। কিছু কোষের জন্ম এবং বেড়ে উঠার রহস্য উন্মোচনে এই অভূতপূর্ব আবিষ্কার আমাদের চিন্তাধারায় পরিবর্তন নিয়ে আসবে। অন্যভাবে আমরা বলতে পারি, আমরা যে ধারনা পোষন করি তার থেকেও জীবন অনেক সহজ। ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দলনেতা এনা কার্নকসকা বলেন, “মাইটোকনড্রিয়াকে ইউক্যারিওটিক কোষের অত্যাবশ্যক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হতো।”আমেরিকার এক পোষা প্রাণী চিনচিলা এবং এর অন্ত্রে জীবাণুর জিন রহস্য থেকেই মূলতঃ প্রশ্নটা উঠে এসেছে। সেখানে প্রমাণ করার মতো এমন কোন বিষয়ের উপস্থিতি ছিলনা যা থেকে বোঝা যাবে এটি মাইটোকনড্রিয়াল প্রোটিন সৃষ্টি করেছে। কারনকসকা আরও বলেন “তাত্বিকভাবেতো এটির বেঁচে থাকার পরিবর্তে মারা যাওয়ার কথা ছিল। এটা আসলেই বিস্ময়কর।”

কার্নকসকা এবং তারঁ সহকর্মীরা মনে করেন, কোষগুলো লোহা-সালফারের একত্রীকরণের জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে- যেখানে মাইটোকন্ড্রিয়ার বিশেষ ভূমিকা থাকে, যা নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরীতে সাহায্য করে। অনুমাণ করা হচ্ছে, জীবাণুরা অনুরূপ কার্য সম্পাদন করতে কিছু ব্যকটেরিয়াল জিন ধার করে। এসব জীবের পূর্বপুরুষরা ছোট মাইটোকনড্রিয়া ধারণ করে থাকলেও বিবর্তনের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে অরগানেলসরা মুটামুটিভাবে হারিয়ে গেছে। এখন গবেষকরা অন্যান্য মমাইটোকনড্রিয়ায় মুক্ত ইউক্যারিয়োটস খুঁজে বের করায় আশাবাদী হয়ে আছেন।

ইউএস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজি থেকে বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী ইউজিন কোনিন বলেন, “এই আবিষ্কারের মৌলিকত্ব হল: আমরা জানি যে, ইউক্যারিয়োটস মাইটোকনড্রিয়ার অবশিষ্টাংশ ছাড়া ভালোভাবেই বসবাস করতে পারবে।”

মানুষের অন্ত্রে প্যারাসাইট গাইয়ারডিয়ার ব্যাপারেও অনুরূপ দাবি ছিল: বিজ্ঞানীরা  বিশ্বাস করতেন যে, এটি মাইটোকনড্রিয়া মুক্ত। কিন্তু গবেষণায় এর মাঝে মাইটোকনড্রিয়ার ‘অবশিষ্টাংশ’ বা ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। এই নতুন আবিষ্কারটি একটু ভিন্ন মাত্রার। কারণ Monocercomonoides নামক জীবের উপরে চালানো সদ্য এক গবেষণায় দেখা গেছে সত্যিই এটি মাইটোকনড্রিয়া ছাড়া কাজ করতে পারে।

সম্ভবত চিনচিলার অন্ত্রে অক্সিজেনের অভাবে Monocercomonoides স্বাভাবিক শক্তির রূপান্তর করা ছাড়াই কাজ করতে বিবর্তিত হতে হয়েছে। গবেষকরা প্রয়োজনে আণুবীক্ষণিক যন্ত্রের সাহায্যে বিস্তারিত জানার জন্যে গবেষণা পরিচালনা করার উপদেশ দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় প্রাণরসায়ন গবেষক মার্ক ভ্যান ডের গিইজেন বলেন, “Monocercomonoides অক্সিজেন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাস করে ফলে তার প্রচুর পরিমাণে বায়োরসায়ন ত্যাগ করতে পারে যা আপনার এবং আমার কোষ বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন হয়।”

“এই জীব এমনভাবে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয় যে সে একটা ওরগানেল হারাতে পারে। যা ইউক্যারিয়োটস এর মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রতিটি পাঠ্য বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে এটা আমাদের দেখায় একটি অস্বিত্ব টিকিয়ে রাখতে জীবন কতটা সৃজনশীল হতে পারে।”

 

⚫ শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.