গত ২৭ এপ্রিল টুইটারে স্পেস-এক্স একটি টুইট পোস্ট করেছে। এতে বলা হয়েছে এই কোম্পানী ২০১৮- সালে মঙ্গলে একটি মানুষ বিহীন অভিযান পরিচালনা করবে। যা এই লাল গ্রহে যাওয়া প্রথম কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হবে।
বহুদিন ধরে আমরা শুনে আসছি এই কোম্পানীটি মঙ্গলে মহাশূন্যযান প্রেরণ করতে চাইছে এবং চূড়ান্তভাবে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী একটি ঔপনিবেশিক অবস্থা তৈরি করবে। কিন্তু স্পেসএক্স এর প্রধান নির্বহী ইলন মাস্ক বলেন, সেপ্টেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল এস্ট্রোনটিকাল কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত মঙ্গল অভিযান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যাবে না।
তবে এর পরিবর্তে আমরা এখন স্পেস-এক্স এর মৌলিক পরিকল্পনাগুলো জানতে পেরেছি। তারা টুইট করেছে, “যত দ্রুত সম্ভব ২০১৮ এর মধ্যে মঙ্গলে ড্রাগন পাঠানোর পরিকল্পনা করছি। রেড ড্রাগন মঙ্গল থেকে আসা সকল স্থাপত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অবহিত করবে।”
রেড ড্রাগন কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে, তারা ইতমধ্যে রেড ড্রাগন-২ নামে আরেকটি মহাকাশযান উন্নত সংস্করণ ঘটিয়েছেন যা এরমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই মহাকাশযানটির আরও লক্ষ্য হচ্ছে প্যারাস্যুট ব্যবহারের পরিবর্তে জ্বালানিবিহীন যন্ত্র থ্রাষ্টারের মাধ্যমে সম্মুখদিকে পরিচালিত হয়ে ধীরে ধীরে মাটি স্পর্শ করে অবতরণ করা।
এটি পরিষ্কার যে স্পেস-এক্স ২০১৮ তে মঙ্গলে ড্রাগনের যে সংস্করণ পাঠাবে তাতে একই নির্মাণকৌশল ব্যবহার করা হবে। তাঁরা এটা বানানোর পূর্বে আমরা এ নিয়ে অনেক ঠাট্টা-বিদ্রুপ দেখেছি, কিন্তু এখন আমরা জানি কবে এটা নিক্ষেপ হবে।
স্পেস-এক্স – এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর ইলন মাস্ক টুইটে বলেন, “ড্রাগন-২ এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যে, এট সৌরজগতের যে কোন জায়গায় অবতরণ করতে পারবে। রেড ড্রাগন মঙ্গল যাত্রা প্রথম পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন।”
তবে এটি অস্পষ্ট যে, এই যাত্রাটা কি বৈজ্ঞানিক কোন লক্ষ্যে পরিকল্পিত হবে নাকি নিছক একটি প্রযুক্তির প্রদর্শন হবে। মজার ব্যাপার হলো, নাসা ইতিমধ্যেই ঘোষনা করেছে তাদের এই যাত্রায় স্পেস-এক্স যেসব তথ্য পাবে তা নাসার সাথে বিনিময় করার মাধ্যমে স্পেস-এক্স কে তারা সাহায্য করবে। নাসা অবশ্যই ২০৩০ সালের মধ্যে মঙ্গলে মানুষ প্রেরণ করতে চায়।
একটি ব্লগ পোষ্ট এ নাসার উপ-পরিচালক ডাভা নিউম্যান বলেছেন, “ নাসা স্পেস-এক্স থেকে মঙ্গলে প্রবেশ, আরোহন এবং অবতরণ সম্পর্কীয় তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ে সাহায্য করবে। এছাড়াও ড্রাগন-২ মহাশূন্যযানের মানুষ বিহীন এই মঙ্গল যাত্রার প্রচেষ্টায় নাসা প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে করবে।”
স্পেস-এক্স কি আসলেই ২০১৮ সালের এই লক্ষ্যভেদ করতে পারবে কিনা সেটাই এখন শুধু দেখার অপেক্ষা। মঙ্গলে উড্ডয়নের লক্ষ্যে সম্ভবত স্পেস-এক্স কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিদ্যমান ফ্যালকন -৯ রকেটের আসন্ন উন্নত সংস্করণ ফ্যালকন ভারি রকেট ব্যবহার করতে যাচ্ছে। যদিও তাঁরা এখনো কোন তারিখ ঠিক করেননি তবে আমরা এবছরের শেষের দিকে ফ্যালকন ভারি রকেটের প্রথম উড্ডয়ণ দেখতে যাচ্ছি।
পৃথিবী ও মঙ্গল কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে যখন যথাযথ অবস্থানে আসবে ঠিক সেই নির্দিষ্ট সময়েই মঙ্গলের উদ্যেশ্যে উৎক্ষেপন সম্পন্ন করা হবে, যা প্রতি দুই বছর অন্তর হয়ে থাকে। তাই স্পেস এক্স যদি ২০১৮ তে উৎক্ষেপনে ব্যর্থ হয় তবে পরবর্তীতে ২০২০ সালে সম্ভবত উৎক্ষেপন করবে। উদাহরণস্বরূপ ইউরোপের ExoMars যাত্রার প্রথম অংশ এবছর চালু হয় এবং ২০১৮ তে এর দ্বিতীয় অংশ চালু হবে।